আমদেরই “বাংলা” রে- রাজ্য বিধানসভায় সর্বসন্মতিক্রমে গৃহীত ‘বাংলা’ নামটি


বৃহস্পতিবার,২৬/০৭/২০১৮
991

অশোক মজুমদার---

রাজ্য বিধানসভায় সর্বসন্মতিক্রমে ‘বাংলা’ নামটি গৃহীত হওয়ার খবর পেয়ে আমার প্রথমেই সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতাটা মনে পড়ে গেল। সেই কোন কালে স্কুলে পড়েছি ‘ কোন দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল’। দু চারটে লাইনে কি চমৎকারভাবে বাংলার রূপটা ধরে দিয়েছেন কবি। স্বাধীনতার ৭১ বছর পরে সেই বাংলা সরকারিভাবে আমাদের রাজ্যের নাম হতে চলেছে। বাংলা একটা সহজ, সরল, সংক্ষিপ্ত ও সুন্দর নাম। বাংলা কথাটা উচ্চারিত হলেই আমাদের রাজ্যের একটা সবুজ, শ্যামল ছবি ভেসে ওঠে। প্রতুলদার মত বারবার দেখতে ইচ্ছে করে এই বাংলার মুখ। এমন একটা চমৎকার নাম হাতের কাছে থাকতে আমরা এত বছর ধরে রাজ্যের নাম হিসেবে বঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ, ইত্যাদি ভাবতে বসলাম তা আমার মত মূর্খ লোকের মাথায় ঢোকেনা! রাজ্যের শাসকদলের পক্ষে এই নামটি বিধানসভায় পেশ করার জন্য দিদিকে ধন্যবাদ। নামটি মেনে নেওয়ার জন্য বিরোধী দলগুলিকেও ধন্যবাদ। রাজ্য সরকারের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা সন্মতি দিলেই ‘বাংলা’ নামটি সরকারিভাবে গৃহীত হবে।

সাইনবোর্ড, হোর্ডিং, সরকারি দলিল দস্তাবেজে বাংলা নামটা না থাকলেও আমাদের মনে আর চলতি কথায় এই নামটা বেশ গেঁথে আছে। এবার এই গাঁথনির ভিত আরও পোক্ত হবে। বিরোধিতা ছাড়া এখানে কিছুই হয় না। বাংলা নামে আপত্তি তুলেছে বিজেপি। তাদের মতে রাজ্যের নাম হওয়া উচিৎ বঙ্গ। এরা এখানে থাকেন না চাঁদে থাকেন আমি বুঝতে পারিনা। আপনারা কি কেউ পথে ঘাটে, মাঠে ময়দানে কাউকে বলতে শুনেছেন আমি বঙ্গে থাকি কিংবা বঙ্গ থেকে এলাম। কোন পর্যটকও কি বলেন বঙ্গে এসেছি কিংবা এলাম। সাধারণভাবে এ রাজ্য বোঝাতে সবাই ‘বাংলা’ কথাটাই বলেন। ২০০১ সালে রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবুরা। কিন্তু কেন্দ্র তা মেনে নেয়নি। পরবর্তীকালে বামেরা এটা নিয়ে লাগাতারভাবে তেমন কোন চেষ্টাও করেন নি। সত্যি বলতে কি পশ্চিমবঙ্গ নামটাতে বাংলার পুরো চেহারাটা ধরা পড়ে না। বরং ফুটে ওঠে একটা খণ্ডিত ছবি। আবার এই নামকরণ মেনে নেওয়া মানে ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া দেশভাগকে মেনে নেওয়া, যা বাঙালি কোনদিনই মন থেকে মেনে নেয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রস্তাব মেনে নেয়নি। বাংলাদেশও কিন্তু তাদের দেশের নাম পূর্ব বঙ্গ করেনি।

৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও বামেরা রাজ্যের নামকরণের সমস্যার কোন সমাধান করতে পারেন নি। সবাইকে তোয়াজ করে চলার রাজনীতি তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দিদি বিষয়টিকে দেখেছেন একেবারে একটা বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি দেখেছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল নামের কারণেই রাজ্যের মন্ত্রী, আমলাদের বক্তব্য রাখতে হচ্ছে প্রায় সবার শেষে। তখন বেশি সময়ও পাওয়া যাচ্ছেনা। একবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে এই প্যাঁচে পরে বক্তব্য রাখার জন্য ছ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সেদিনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, রাজ্যের নাম পাল্টাতেই হবে।

পরবর্তীকালে ২০১৬-র আগস্ট মাসে রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব দেন। এর পাশাপাশি রাজ্যের নাম ইরেজিতে ‘বেঙ্গল’ এবং হিন্দিতে ‘বঙ্গাল’ করার প্রস্তাব দেওয়া হয় কেন্দ্রকে। কিন্তু একটা রাজ্যের নাম তিনটে হতে পারেনা এই অজুহাত দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নাকচ করে দেয়। তারা সব ভাষার জন্য একটি নাম পাঠাতে বলে। তারপর থেকে আবার নতুন করে নামকরণের চিন্তাভাবনা শুরু হয়। আজ সেই ভাবনা একটা প্রার্থিত তীরে পৌঁছল।

দরকারি অ-দরকারি সব জিনিস নিয়ে হৈচৈ করা সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু রাজ্যের নামকরণ প্রসঙ্গে একেবারে নীরব। অথচ তারা এ প্রশ্নে একটা সুস্থ সংলাপ ও আলোচনা গড়ে তুলতে পারতো। এতে আমরা সবাই সমৃদ্ধ হতাম। কিন্তু তর্জা প্রবণ সোশ্যাল মিডিয়ায় সুস্থ আলোচনার কোন জায়গা নেই। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থেই কতগুলি বিষয় নিয়ে বিরোধের কোন জায়গা থাকা উচিৎ নয়। রাজ্যের নামকরণ, তেমনই একটা বিষয়। ‘বাংলা’ নামের পক্ষে দাঁড়াতে হবে রাজ্যের সব মানুষকেই। পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ হলে মাতৃভাষার স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রাণ দেওয়া শহীদদেরও সন্মান জানানো হবে। কারণ, ‘বাংলা’ নামটাই তাঁরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতেন।

অশোক মজুমদার

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট