মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে আমাদের আবেদন তিনি আসুন আর এই জেদী ছেলেদের বাঁচান

মেডিকেলে অনশনের শুরু দু হপ্তা আগে। ছাত্রছাত্রীরা তার আগে নানাভাবে কর্তৃপক্ষের মন ভেজানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। মিডিয়ার দৌলতে সবাই জানেন যে ছেলেরা যেখানে থাকে তা বাসযোগ্য নয়। হয়ত, সমস্যাটা এত তীব্র হতো না, যদি মেডিকেলে সীট ১৫৫ থেকে বেড়ে ২৫০ না হত। ছাত্ররা প্রায় ২বছর ধরে সব কষ্ট মেনে নিয়েছিল এই ভেবে যে নতুন ১১তলা হস্টেল হচ্ছে সেখানে সব ছেলেমেয়ের বাসস্থানের সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেল যে নির্ণীয়মান বাড়ীটি ছিল খুড়োর কল। কর্তারা আগে থেকেই সেখানে গুড়ে বালি দিয়ে রেখেছেন। সেই “হস্টেলে” ক্যান্টিন, গেস্ট হাউস, এমনকি শুনতে পাচ্ছি, সহকারী সুপারের কোয়ার্টার হবে। তারপর যে ছিবড়েটুকু পড়ে থাকবে সেটি হবে হস্টেল।

কথা হল, হস্টেলের মধ্যে কি এইসব নানা রকমারী জিনিস করা যায়? ছাত্ররা বলছে যে প্রথম বর্ষের ছেলেদের দেওয়ার পর যে সব সীট খালি থাকবে তা অন্য বর্ষের ছেলেদের দেওয়া হোক। কর্তৃপক্ষ বলছেন- একই হস্টেলে প্রথম বর্ষ বাদ দিয়ে অন্যবর্ষের ছেলেদের দেওয়া যাবে না, মেডিকেল কাউন্সিলের বারন আছে। মেডিকেল কাউন্সিল শুধু কেন, ছাত্রছাত্রী অভিভাবক কেউ রাগিং চায় না।অভিভাবকদের সাক্ষর সম্বলিত এ্যান্টি-রাগিং এভিডেভিট যেমন নেওয়া হয় তেমনি হোস্টেলে প্রথম বর্ষের ছেলেমেয়েদের আলাদা ব্লকে রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সুপারিশ মেনে প্রথম বর্ষের ছেলেদের দুটি তলে সীট দিয়ে বাকি তলগুলি অন্য বর্ষের ছেলেদের দিলে মেডিকেল কাউন্সিলের নিয়ম কেন ভাঙছে, তা বোধগম্য নয়। যদি মেডিকেল কাউন্সিলের নিয়ম মেনে অন্য বর্ষের ছেলেদের ঐ বিল্ডিংয়ে না রাখা যায় তাহলে সেখানে গেস্ট হাউস হচ্ছে কি করে? তাহলে, সঙ্গত কারনে প্রশ্ন আসে প্রশাসনের এই অস্বাভাবিক আচরনের কারন কি?

কলকাতা মেডিকেল কলেজ ছাড়া আরো অনেক মেডিকেল কলেজ আছে। আমরা তো কখনো শুনিনি যে হস্টেলে কে কোথায় থাকবে তা নির্ধারন হোস্টেল কমিটি বা প্রিন্সিপাল না করে অন্য কোন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ করেন। এ নিয়ে কখনো বিতর্কও হয় নি। মেডিকেলের স্থানীয় প্রশাসনের অযোগ্যতাই ছাত্রছাত্রীরা অনমনীয় মনোভাব নিয়েছে ও অনশনের মত কঠিন পথ নিতে বাধ্য হয়েছে। পরবর্তীকালে এই ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন বলে নানা সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বস্তুত: এ সবই খুবই অনভিপ্রেত যা এই অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের হতাশার কারন হয়ে দাঁডিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অভিভাবকা। তিনি নিজে একসময় দীর্ঘ্য অনশন করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। আজ এই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা তাঁর দেখানো পথে স্থানীয় প্রশাসনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁডিয়েছে- তাদের প্রত্যাশা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, লড়াকু নেত্রী অগ্নিকন্যা তাদের পাশে দাঁড়াবেন।
নেত্রী নিশ্চয় ই সব খবর রাখেন। তিনি নিশ্চয় জানেন এই আন্দোলনের কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই, ছাত্রছাত্রীরা প্রশাসনকে দুষেছে কিন্তু নেত্রীর বিরুদ্ধে কোন স্লোগান দেয়নি। এই আন্দোলনে নানা ধরনের মানুষ এসেছেন, তাঁর ঐতিহাসিক আন্দোলনে যেমন গেছিলেন- কিছু সিনিয়ার ডাক্তার, মানবাধিকার কর্মী, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়-রন্জিত সুররা যেমন এসেছেন তেমনি এসেছেন প্রাক্তন উপাচার্য্যরা, এসেছেন রাজনৈতিক কিছু মানুষ তাঁদের তকমা বাদ দিয়ে, কবীর সুমন ও এসেছেন। পুন্যব্রত প্রথম থেকে আছেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে। কমলেশ্বর-পল্লবরাও এসেছেন মেডিকেলের প্রাক্তনী হিসেবে। যিনিই আসুন যাই বলে থাকুন রাজনীতির কথা কেউ বলেননি। সবাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। সাংস্কৃতিক জগতের মানুষরা আবেগেপ্রবন- তাঁরাও তাদের মত করে আবেদন জানিয়েছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শঙ্খ ঘোষের আবেদন এ প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। এই আন্দোলনের রাশ ছাত্রছাত্রীদের হাতে। বহিরাগত কারো প্ররোচনায় এই আন্দোলন শুরু হয় নি, অন্য কারো পরামর্শ ছাত্রছাত্রীরা মানতেও চাইছে না। তাই, এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক তকমা দিলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে। তা নাহলে, আমরা যারা প্রতীকি অনশনে সামিল হয়েছিলাম তারা প্রথম থেকেই অনশন বাদ গিয়ে অন্য কোন পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু, ছাত্রছাত্রীরা যেমন তা মানতে রাজী হয় নি তেমনি তারা তাদের অভিভাবকদের কথাও তারা শুনছে না।
এই অবস্থায় ১৪ দিন অতিবাহিত হয়েছে। একজন মাত্র মানুষ এক কথায় এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি করতে পারেন। তিনি হলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছে আমাদের আবেদন তিনি আসুন আর এই জেদী ছেলেদের বাঁচান। এতে এই ছেলেদের যেমন প্রান বাঁচবে তেমনি তাঁরই রাজনৈতিক জয় হবে। এরা মেডিকেল কলেজের উজ্জ্বল ছাত্রছাত্রী। রাজনীতির প্যাঁচপয়জারে এদের ভবিষ্যত যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন না হয় তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিন।

Satwajit Mondal

Share
Published by
Satwajit Mondal

Recent Posts

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

2 days ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

3 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

3 days ago

বিহারের জামুইতে ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবসে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের জামুই জেলায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে…

3 days ago

২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আগামী ২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ঐ একই দিনে নান্দেথ…

5 days ago

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তা

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তায় ‘সরস মেলা’র উদ্বোধন করবেন ।আগামীকাল তিনি যাবেন…

5 days ago