একুশে জুলাইয়ের সভায় বরাবরের মতো এবারও সংখ্যালঘুদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে কিছুই বললেন না, এমনকি ফিরহাদ হাকিম ছাড়া সংখ্যালঘু নেতাদের বক্তব্য রাখতেও দেওয়া হয়নি। এই বিষয়টি আমাদেরকে ভাবিয়েছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি বঞ্চনা যেন দিন দিন আকাশ স্পর্শ করছে।
আমরা দেখেছি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলমান এবং দলিত নেতাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই থাকে না। ৬৪ সালের দাঙ্গার পর রাজ্যবাসী খুব একটা বড় ধরনের দাঙ্গার মুখোমুখি হয়নি। এখন আমাদের দেখতে হচ্ছে হালিশহর, বাদুড়িয়া, বসিরহাট, আসানসোল প্রভৃতি এলাকার দাঙ্গার ভয়াবহতাকে। ধর্মের নামে অস্ত্রের ঝনঝনানি আজ বাড়বাড়ন্ত, যেন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য এ রাজ্য যে সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা ছিল তাও আজ সঙ্কটের মুখে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রোধে ও দাঙ্গা-পীড়িতদের ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের স্বার্থে কংগ্রেসের ইউপিএ সরকার যে আইন তৈরি করেছিল তা আজও বিজেপি সরকার আইনে পরিণত করেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে আইন তৈরি করছে না কেন? উন্নয়নের নামে সব জায়গায় দলিত ও মুসলমানদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে কিন্তু উন্নয়নের অংশে তাদেরকে ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে। রাজ্যে মুসলমান ও দলিতদের জমি নিয়ে বসবাসের জন্য যত উপনগরী তৈরি হয়েছে সেখানে মুসলমানদের ঠাঁই হয়নি। অল্প জায়গায় ঘেটোবাসী হয়ে বসবাস করাটাই তাদের এখন ভবিতব্য হয়ে উঠেছে।
তাই কোনোরূপ অজুহাত রাজ্যের মানুষ আর শুনতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত চাকরির পরীক্ষাগুলিতে সঠিকভাবে ১০০ শতাংশ রোস্টার মানা হোক। এই চরম বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে এসসি-এসটি-ওবিসি-“এ” এবং ওবিসি-“বি” চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে ১০০ শতাংশ রোস্টার মেনে চাকরি দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। নইলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। রাজ্যে যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিত আধিকারিকদের গ্যারেজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে, এই বৈষম্য দূর করতে হবে অবিলম্বে। ২৩টি জেলায় চোখ রাখলে কোনও ডিএম ও এসপি বা কমান্ডিং পোস্টে যোগ্য ও সৎ দলিত ও মুসলিম আধিকারিক কাউকে দেখছি না। কেন? ব্যতিক্রম একজন আয়শা রানি ঝাড়গ্রামের ডিএম পদে আসীন হলেন সম্প্রতি। চাকরিরত যোগ্য সংখ্যালঘু ও দলিতদেরকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতেই হবে। তার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথে নামতে হবে, আন্দোলন করতে হবে প্রাপ্য অধিকার অর্জন করতে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ইসলামি থিয়োলজী বিভাগ তুলে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতে হবে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করতে হবে। সংখ্যালঘুদের কল্যাণে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগ নিক আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিন মেডিকেল কলেজ গড়ে তুলতে এবং সর্ব বিষয়ে অর্নাস ও এমএ, এমএসসি এবং পিএইচডি চালু করতে। সম্প্রতি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক ড. মহম্মদ আলি। ড. আলি আশা রাখি মানব কল্যাণে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাক্তন উপাচার্য ড. আবু তালেব খানের উত্তসুরি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের টনক নড়াতে দলিত ও সংখ্যালঘুরা বদ্ধপরিকর হচ্ছেন এটাই এখন আশার আলো।
এরপরও যদি সরকারের সুমতি না ফেরে তাহলে বাংলায় নতুন সূর্য উঠবে কি ভাবে তা ভাবতে হবে। নতুনভাবে দলিত ও সংখ্যালঘু জোটবদ্ধ হয়ে বাংলার কল্যাণে সবার জন্য গণতন্ত্র ফেরাতে তৈরি হবেন। বিপন্ন বাংলা ও দেশের মানুষের বাঁচার মুক্তি হল সুস্থ গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা।
তাই সংবিধান বাঁচাতে আমরা বদ্ধপরিকর হয়েছি মানুষের কল্যাণে। ধর্মীয় বিভাজনের ফাঁদে আমরা যাব না এই অগ্নিশপথ নিয়েই দলিত ও মুসলিম সহ সকল শ্রেণি মানুষের কল্যাণ আওয়াজ তুলব সুস্থ সমাজ গড়তে।
মন্ত্রীত্বে এবং বিচার ব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে বঞ্চিত দলিত ও মুসলিমরা কেন? সংখ্যানুপাতে এসসি, এসটি আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় জনসংখ্যার হিসেবে ৬০ শতাংশেরও বেশি আছে পশ্চিমবঙ্গে তবু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর এদের কারো হাতে নেই কেন? এবং ওবিসি আছে ৩৪ শতাংশ। এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে দলিত ও সংখ্যলঘুদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নেবেন আমারা আশা রাখি। বলছিলেন ফারুক আহমেদ, সম্পাদক ও প্রকাশক : উদার আকাশ।