ব্রিটিশ আমলে তৈরি স্বাস্থ্যকেন্দ্র হলেও এখনও চব্বিশ ঘন্টার পরিষেবা না মেলায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে ।চিকিৎসক ও পরিকাঠামোর অভাবে রীতিমতো ধুঁকছে প্রায় শতাব্দী প্রাচীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র । এমনই চিত্র ধরা পড়েছে গোয়ালপোখর ব্লকের গোয়াগাঁও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে । স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোয়াগাঁও স্বাস্থ্য কেন্দ্র খুবই প্রাচীন । একসময় রসাখোয়া সংলগ্ন ব্রিটিশ রাজের গোপালপুর থানা থেকে ঘোড়ার পিঠে চিকিৎসক আসতেন । দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে রোগী দেখে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসক ফিরে যেতেন নিজ ডেরায় । সময় বদলালেও চরিত্র বদলায় নি গোয়াগাও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের । এখন গোয়ালপোখর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে একজন চিকিৎক পালা করে আসেন সকাল ১০ টা নাগাদ । আর ১২ টা বাজতেই তারা চলে যান গোয়ালপোখরে । ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দুই জন নার্স বহাল থাকলেও তারা দুপুর ১টা বাজলেই ঘরে ফিরে যান । এবিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের জিজ্ঞাসা করলে তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন । স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্সরা তাদের জানিয়েছেন যে দুপুর একটার পরে ইসলামপুর ফেরার আর কোন বাস থাকে না । তাই তাদের পক্ষে পুরো সময়ের পরিষেরা দেওয়া সম্ভব ন্য় । এবিষয়ে গোয়ালপোখর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক ডাঃ রামেশ্বর ঘোষ এবিষয়ে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন ।
স্থানীয় ও স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোয়াগাঁও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় ৩০-৪০ টি গ্রামের মানুষজন । কিন্ত দিনে দুই- আড়াই ঘণ্টা পরিষেবা মেলে সর্বসাকুল্যে । গোয়ালপোখরের লোধন ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে দুই তিনজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন পালা করে গোয়াগাঁও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন ।আবার অনেকদিন কোন কোন চিকিৎসকের দেখাই মেলে না । ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য কয়েক বছর আগে একজন চিকিৎসক দেওয়া হলেও কয়েক মাসের ব্যবধানে তাকে চাকুলিয়ায় বদলি করে দেওয়া হয় । তারপর থেকেই সমস্যা তৈরি হয়েছে ।এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন থেকে ২৪ ঘন্টা পরিষেবা চালু ও প্রসবের ব্যবস্থার পাশাপাশি আপাতকালীন পরিষেবার দাবি তুলে আন্দোলন করছেন । স্থানীয় বাসিন্দা ফনিশ সিং জানান, আমাদের দাবি দাবিই থেকে গিয়েছে । কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হয় না । একদিকে সরকার বলছে প্রতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে – আর আমরা চিকিৎসকের অভাবে বাড়িতে দাইমার ভরসায় প্রসব করানো হয় । তাতে প্রায়ই মা ও শিশুর মৃত্যু ঘটে । এছাড়া রাতবিরেতে তাদের ৪৮ কিমি দূরে ইসলামপুর কিংবা ৬৫ কিমি দূরে রায়গঞ্জে তাদের চিকিৎসা করাতে যেতে হয় । জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকদের রাতে থাকার মতো পরিকাঠামো নির্মানের কাজ চলছে । স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লেবার রুমের কাজও অগ্রগতির পথে ।
গোয়ালপোখরের বিধায়ক তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানী জানান, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছে । এবিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা জানান, খুব শীঘ্রই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ২৪ ঘন্টার পরিষেবা চালুর পাশাপাশি চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে ।