কালিয়াগঞ্জে রথে চাহিদা বাড়ছে লটকনের

পুরীর রথের পাশাপাশি জেলায় জেলায় সাড়ম্বড়ে পালিত হচ্ছে রথযাত্রা। শনিবার সকাল থেকেই উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ,কালিয়াগঞ্জ সহ বহু জেলাতে পালিত হলো রথযাত্রা । রীতি মেনে রথ টানা শুরু হলো বিভিন্ন জেলাতেও। রথ যাত্রা উপলক্ষে কালিয়াগঞ্জের নাটমন্দির প্রাঙ্গণে  অগণিত মানুষের ভীর দেখা গেল শনিবার সকাল থেকেই । অগণিত ভক্তের ভিড় সামলাতে প্রত্যেকটি জেলাতেই জায়গায় জায়গায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছে প্রশাসন।

আর রথ মানেই মেলা। সেই উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বসেছে মেলা। শনিবার সকাল থেকেই জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা-র আরাধনায় মাতলেন কালিয়াগঞ্জ বাসী।  ৬৫ বছরে  পদার্পণ করলো এবারে  কালিয়াগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী  রথযাত্রা । এই রথযাত্রা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর গ্রামীণ মেলাও বসে কালিয়াগঞ্জের নাটমন্দির প্রাঙ্গণে  ।


কালিয়াগঞ্জ এর এই  মেলার বৈশিষ্ট্য হল লটকন ও জিলেপি।বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই রথের মেলায় আসে নটকন খেতে।টক মিষ্টি  এই ফলটি সোজা রথ ও উল্টো রথের দিনই পাওয়া যায় ।সারা বছর  নটকন এই ফলটির দেখা না মিললেও রথের এই একটি দিন এই ফলটি পাওয়া যায় ।ফলে সাধারণ মানুষের কাছে এই ফলটির প্রতি  বিশেষ চাহিদা থাকে। এছাড়া ও বিকেল থেকে রথে জগন্নাথ দেবকে চিনি কলা দিতে হাজারো মানুষের ভীর কালিয়াগঞ্জের ছিল নাটমন্দির প্রাঙ্গণে  ।একটা সময় কালিয়াগঞ্জের এই রথের মেলার সব থেকে আকর্ষণীয় ছিল মাটির তৈরি পুতুল ও কাঠের তৈরি সামগ্রী  ।যা ছোটো থেকে  বড়ো সকলের কাছে আকর্ষণীয় ছিল এক সময়  । তবে বর্তমান যুগ মানুষের রুচির সাথে সাথে  ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প।  এক সময় মাটির তৈরি পুতুল বিক্রি করে রথের মেলায় ভালই রোজগারের মুখ দেখতো মৃত্  শিল্পীরা। তবে  চাহিদা কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই কাঠের খেলনা বানাতে শুরু করলেন শিল্পীরা । তবে ধীরে ধীরে  কাঠের খেলনা ছেড়ে বর্তমানে প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার প্রতি ঝোঁক বেড়েছে শিশুদের।

শিল্পী তপন চক্রবর্তী  বলেন, কালিয়াগঞ্জ  এর এই মেলাটি তাঁর বাবার আমল থেকে দেখে আসছেন তখন অনেক জায়গা থাকতো বেশ বড় একটা মেলা হতো। তেলে ভাজা থেকে জিলিপি সব থাকলেও মাটির পুতুলের চাহিদা ছিল বেশ। এখন মাটি সেই ভাবে পাওয়া যায় না । এছাড়াও ছোটদের কাছে মেলার সব থেকে আকর্ষণীয় যেটা ঘাড় নড়া দাদু সেটার দিকে তেমন ঝোঁক নেই তাদের । তার বদলে প্লাস্টিকের ছোটা ভীম, মটু পাতলু জায়গা করে নিয়েছে। ফলে এই পুতুল আগে যেমন ৫০০টিরও বেশি এক এক জন শিল্পী বানাতেন এখন জনা কয়েক শিল্পী বানান। সরকারিভাবে তেমন কোনও সাহায্যও তেমন নেই যে তারা সেটাকে টিকিয়ে রাখবে। তাই মেলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন শুধুকয়েকজন। জায়গা না থাকায় মেলার পরিসরও অনেকটাই কমে গিয়েছে এই নাটমন্দির প্রাঙ্গণে । এক সময় এলাকার শিল্পীরা ছাড়াও বাইরে থেকে অনেক শিল্পী মাটির তৈরি পুতুল নিয়ে আসতেন এখন তাঁরাও আসেন না। এছাড়াও নতুন প্রজন্ম তেমন ভাবে মাটির পুতুল তৈরিতে আগ্রহ দেখায় না । ফলে আগামী দিনে এই শিল্প কি ভাবে বেঁচে থাকবে সেই নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে শিল্পীদের মধ্যে।

এদিন কালিয়াগঞ্জের নাটমন্দির প্রাঙ্গণে অবস্থিত এই রথ মেলাকে ঘিরে মানুষের উত্সাহ ও ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত।

admin

Share
Published by
admin
Tags: লটকন

Recent Posts

স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…

2 months ago

কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত।

১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…

2 months ago

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

2 months ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

2 months ago

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ আজ, অপেক্ষা ভোটের দিন ঘোষণার

জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…

2 months ago

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে তীব্র ভূমিকম্পে ৫৩ জনের মৃত্যু, আহত ৬২ জন

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আরও ৬২…

2 months ago