আপেল আর টিউলিপ ফুলের দেশ কাশ্মীর, পাইন গাছের বন আর তুষার আবৃত পর্বত শ্রেনীর মাঝে চির প্রসিদ্ধ কাশ্মীর


বুধবার,০৪/০৭/২০১৮
5314

মেহেদী হাসান---

সত্যিই কাশ্মীরের সৌন্দর্যের কোন ক্ষুত নেই, আপেল আর টিউলিপ ফুলের দেশ কাশ্মীর, পাইন গাছের বন আর তুষার আবৃত পর্বত শ্রেনীর মাঝে চির প্রসিদ্ধ কাশ্মীর

১৪-০৬-২০১৮ তারিখে শ্যামলির বাস ( ভাড়া ১,৭০০ টাকা + ৬৫০ টাকা, এটা বর্ডারে লাগে ) এ রওনা দিয়েছিলাম, ১৫ তারিখে সন্ধ্যা লেগে গিয়েছিল কোলকাতা পৌছাতে কারন সে সময় ঈদ এর জ্যাম ছিল রাস্তায় । ট্যুরের সদস্য ছিলাম আমরা ১০ জন ।

১৫-০৬-২০১৮ থেকে ১৭-০৬-২০১৮ পর্যন্ত কোলকাতা ছিলাম আমরা। নিউ মার্কেট এর পাশে HOTEL GALAXY তে উঠেছিলাম । কোলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল পর্যন্ত ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০-৩৫০ রুপি । হোটেল এর ভাড়াও কম (ডাবল বেড ননএসি ৯০০ রুপি, এসি ১২০০ রুপি) এবং ঘুরাঘুরির জায়গা গুলো (নিউমার্কেট, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, ভিক্টরিয়াল মেমরিয়াল) এখান থেকে হাটার রাস্তা বলে খরচ অনেক কম হয়েছিল, এছাড়াও পার্ক স্ট্রিট থেকে ট্রাম অথবা বাসেও যাওয়া যাবে অন্য কোথাও।
“নিউ-আরাফাত” নামের খাবার হোটেলে লাঞ্চ, ডিনার করেছি । খাবারের মান ভাল, দাম কম ।

১৮-০৬-২০১৮ তে ভোরে প্লেন ( কোলকাতা-শ্রীনগর-কোলকাতা প্লেন ফেয়ার ছিল ১৭,২৪৬ টাকা; IndiGO ফ্লাইট ) এ কোলকাতা থেকে দিল্লী, এরপর দিল্লী থেকে কাশ্মীরে চলে যাই আমরা । এয়ারপোর্টে এ পাওয়ার ব্যাঙ্ক নিয়ে ঝামেলা করেছে, এটা লাগেজে না দিয়ে হাতে রাখাই ভালো ।
অফিসিয়াল ট্যুর ছিল বলে শ্রীনগরে শহরে আমরা ভাল একটা হোটেল এ ছিলাম, নাম ছিল HERITAGE LUXURY. এয়ারপোর্টের কাছে ছিল হোটেল টা ।
তবে আমি সাজেস্ট করব ডাল লেকের আশে পাশে কোন হোটেল এ উঠতে, এতে খরচ ও কমবে, খাওয়ার হোটেল গুলোও কাছাকাছি হবে এবং ডাল লেকের ভিউ টাও উপভোগ করতে পারবেন ভাল ভাবে ।

কাশ্মীরে অনেক গুলো স্পট আছে। আমরা প্ল্যান করেছিলাম ডাল লেক, পেহেলগাম, সনমার্গ, গুলমার্গ, দুধপাথ্রি এসব যায়গা গুলোতে যাব, যেখানে প্রতিটি স্পট গুলতে একদিন করে ভালোভাবে ঘুরে আসা যাবে অর্থাৎ ৪ টা স্পট ৪দিন লাগবে ঘুরতে। প্রতিদিন গাড়ি ভাড়া নিবে ২,০০০-২,৫০০ রুপি । আমরা ৫ দিনের জন্যে ২ টা গাড়ি ভাড়া করেছিলাম ২২,০০০ রুপি দিয়ে ।
প্রথমদিন হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়েই শ্রীনগরে ডাল লেক, এরপর ৩ দিন পেহেল্গাম, সনমার্গ, দুধপাত্রি এবং শেষদিন হোটেল থেকে এয়ারপোর্ট সহ ৫ দিন ।

১৮-০৬-২০১৮ তারিখে আমরা ডাল লেকে ঘুরেছি নৌকা নিয়ে। নৌকা ভাড়া ছিল ২,২০০ রুপি, এর কমেও পাওয়া যাবে হয়ত, এক নৌকায় ৫ জন ছিলাম আমরা । পাহাড় ঘেরা এমন লেকে ঘুরতে সত্যিই অসাধারন লাগবে, আরো ভালো লাগবে যদি বিকেল টা ঘুরতে পারেন এবং সূর্যাস্ত দেখেন নৌকায় বসে । ডাল লেকে ভাসমান মার্কেট আছে, যেখানে বোটে কাশ্মীরি শাল, সবজি, চা সব কিছুই পাওয়া যায় । আপনারা চাইলে ডাল লেকে বোট হাউসেও থাকতে পারবেন । এটার ফীল নাকি অন্যরকম !!!

পেহেলগামঃ ( ১৯-০৬-২০১৮ তারিখ ) পেহেলগাম গিয়ে কয়েকটা স্পট পাবেন । বাইসারান, বেতাব ভ্যালী, আরু ভ্যালী এই ৩ টা স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন একদিনেই। বাইসারানে যাওয়ার জন্যে ঘোড়া নিয়ে যেতে হবে । ঘোড়া ভাড়া প্রতিজনের জন্যে ১,৫০০ রুপি ।
বেতাবভ্যালী এবং আরুভ্যালি যাওয়ার জন্যে আলাদা গাড়ি ভাড়া করতে হয় । এক গাড়ি নিয়েই দুই জায়গা ঘুরে আসা যায় । এখানে প্রতি গাড়ি ভাড়া ২,৫০০ রুপি । বেতাবভ্যালী অসম্ভব সুন্দর, আরু ভ্যালীও একটুও কম না, তবে কেউ বাইসারানে ঘোড়া নিয়ে না যেতে পারলে আরু ভ্যালিতে গিয়ে ঘোড়ার শখটা মেটাতে পারবেন, কারন এখানে পাহাড়ি পথটা অনেক সহজ পেহেলগামের পাহাড়ের তুলনায়। এখানে ঘোড়ার জন্যে দিতে হয়েছে ২০০ রুপি।
তবে পেহেলগামেরটা বেশি এক্সাইটিং ছিল এটা সত্যি।

সনমার্গঃ ( ২০-০৬-২০১৮ তারিখ ) সনমার্গ এ জিরো পয়েন্ট এ গিয়েছিলাম, ১৬,০০০ ফিট উপরে গাড়ী নিয়ে যেতে হয়, মাঝে একটা যায়গায় অন্য একটা গাড়ি ভাড়া করতে হয় জিরো পয়েন্ট যেতে। এই গাড়ি ভাড়া নিয়েছিল ৬,৫০০ রুপি। জিরো পয়েন্টে বরফ থাকবে, স্কেটীং করতে পারবেন, গরম কাপড় ভাড়া করা যায়, তবে Summer গেলে নিজেদের মোটা সয়েটার এবং জ্যাকেটেই হয়ে যায়, যেমন আমাদের হয়েছিল ।

গুলামার্গঃ গুলমার্গে সারা বছর বরফ থাকে, এখানে আমরা যেতে পারিনি সময় এবং কিছু পার্সোনাল কারনে, তবে আপনাদেরকে সাজেস্ট করব যাওয়ার জন্যে, কারন তুষার শুভ্র পাহাড়ের সৌন্দর্য avoid করা উচিত হবেনা । অইদিন আমরা দুধপাত্রি গিয়েছিলাম ।

দুধপাত্রিঃ ( ২১-০৬-২০১৮ তারিখ ) পাইনগাছের বন আর ঝরনা মিলিয়ে অসাধারন একটা জায়গা, ঝরনার বরফশীতল পানি পাথরের মাঝে মাঝে বয়ে চলেছে এখানে এবং এই পাথরে পাশেই আমরা পিকনিক করেছিলাম, পিকনিকের জন্যে জ্বালানি হিসেবে পাইন গাছের ডাল পাবেন আর ঝরনার পানি পাবেন, বাকি সব কিছুই আপনাদেরকে নিয়ে যেতে হবে গাড়ীতে করে । এখানেও ঘোড়ায় চড়া যায়, চাইলে নিতে পারেন, আমরা নেইনি, পিকনিক আর পাইনের বনেই নিজেরা ব্যস্ত ছিলাম ।

কাশ্মীরে কিছু লোকাল খাবার আছে যেমন, Rogan Josh, Rista ইত্যাদি, এগুলো মাটন আইটেম, ট্রাই করে দেখতে পারেন, আমার খুব ভাল লেগেছে খাবার গুলো। গাড়ীতে সাথে বিস্কুট, কেক, পানি রাখবেন ।
কাশ্মীরের মানুষ অনেক ভালো, অনেক co-operative । হিন্দি, ইংলিশ মোটামুটি সবাই বোঝে।

২২-০৬-২০১৮ তারিখে শ্রীনগর থেকে কলকাতা ফিরে এসে আবার একই হোটেল (HOTEL GALAXY) এ উঠেছিলাম, এরপর কিছু কেনাকাটা করে, ঘুরাঘুরি করে ২৫-০৬-২০১৮ তারিখে ভোরে কোলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছি ট্রেনে ( ট্রেন ভাড়া ১৩৮৫ রুপি )। বাংলাদেশের কাস্টমসে ঝামেলা হয়নি, কিন্তু ইন্ডিয়ান কাস্টমসে ঝামেলা করে একটু, প্রতিজন ২ টা লাগেজ নিতে পারবেন, আর ম্যাক্সিমাম টোটাল ৩৫ কেজি ।

সবাইকে বলব একবার হলেও কাশ্মীর ঘুরে আসার জন্যে, কারন যে এক্সপেরিএন্স টা হবে তা কোন কিছুর সাথেই তুলনা হবার নয়। কাশ্মীর যে কতবেশি সুন্দর তা ভাষাতে প্রকাশ করা সম্ভব না। একটা উদাহরন নেই, এখানে ঝোপ মানে ফুলের গাছ, ঘাস মানে ঘাসফুল সহ এবং প্রতিটা বাসার পাশ দিয়ে ঝরনার নীল বরফশীতল পানি বয়ে চলেছে, বুঝতেই পারছেন এটুকুতেই আশা করি।
*সবার কাছে অনুরোধ ময়লা, আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে একজায়গায় জমায় রাখবেন, পরে গাড়িতে নিয়ে নিবেন, অন্য কোথাও ডাস্টবিন পেলে ফেলে দিবেন*

ট্যুরের সময় কিছু ছোট ছোট ভিডিও করেছিলাম, সেগুলো মিলিয়ে ২ মিনিটের একটা ট্যুর ভিডিও বানানোর চেষ্টা করেছি, আশা করি সবার ভালো লাগবে ।

মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট