মালদাজেলায় সম্পন্ন হয়ে গেলো দ্বাদশ দিবসীয়  সংস্কৃত প্রশিক্ষণ শিবির

সংস্কৃত ভারতী, উত্তরবঙ্গের  উদ্যোগে মালদাজেলায় সম্পন্ন হয়ে গেলো এক অপূর্ব  অখণ্ড  সংস্কৃতময় পরিসরে দ্বাদশ দিবসীয়  আবাসিক সংস্কৃত শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিবির । এই প্রশিক্ষণটি শুরু হয় ৩১শে মে ২০১৮  থেকে । অরবিন্দ পার্ক সরস্বতী শিশু মন্দিরের সুরম্য পরিবেশে এই প্রশিক্ষণে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার তথা সিকিম ,নেপাল ,আসাম থেকে সব মিলিয়ে ১৩৭ জন শিক্ষার্থী এবং ৩৫ জন প্রশিক্ষক অংশগ্রহণ করেন । প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মালদা জেলার অধ্যক্ষ শ্রী শিবসুন্দরানন্দ মহারাজ। তিনি সমাজে সংস্কৃত পঠনপাঠনে আরোও সুন্দর পরিবেশ তৈরি করার কথা বলেন এই প্রশিক্ষণে অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শ্রী তরুণ কুমার পণ্ডিত মহাশয়,  তিনি বর্তমান সময়ে সংস্কৃতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

আবাসিক প্রশিক্ষণ বর্গটি ১১ জুন ২০১৮ পর্যন্ত চলেছিল । প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন অখিল ভারতীয় সম্পর্ক প্রমুখ শ্রী পি.  নন্দ কুমার মহোদয় ।তিনি বলেন “সংস্কৃত ও সংস্কৃতি ও সংস্কার সমানার্থক। ভারতের 90 শতাংশ ভাষাই সংস্কৃত ভাষা থেকে সৃষ্টি হয়েছে নচেৎ সংস্কৃত ভাষার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। সংস্কৃত ভাষাতে ভারতের সংস্কৃতি নিমজ্জিত রয়েছে। সংস্কৃত যাতে আবার দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসে দেবভাষা যেন জনভাষা হয়ে সেজন্য আমাদের প্রয়াস করতে হবে।” ওড়িশা থেকে রমাকান্ত সা প্রধান শিক্ষণ প্রমুখ হয়ে এসেছিলেন। ভারতীয় সংস্কৃতীকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই সংস্কৃত কথোপকথন ও সাহিত্য চর্চা করতে হবে । সংস্কৃতভারতী উত্তরবঙ্গের সঙ্ঘটন মন্ত্রী শ্রী কমল শর্মার প্রেরণা এই শিবিরকে কেন্দ্র করে মালদায় সংস্কৃতভারতী সঙ্ঘটনকে আরো মজবুত করবে।  সংস্কৃত ভাষা যেভাবে অবহেলিত হচ্ছে তার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে এবং সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসারের জন্য সংস্কৃত ভারতীর কার্য কর্তারা নিরন্তন প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন ।এই প্রশিক্ষণ টি সকাল ৫ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলেছিল ।

এই শিকার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও কথোপকথনের ক্লাস চালাবে। এই শিবিরটি প্রতি বছর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হয়ে থাকে যেমন গত বছর কুচবিহারে এবছর মালদায় আবার আগামী বছর আবার কোনো এক নতুন জেলায় আয়োজিত হবে। এখানে শিক্ষার্থীরা খুব উৎসাহে অংশগ্রহণ করেছে । দৈনন্দিন জীবনের বস্তুগুলির সংস্কৃত পরিচয়  এবং বিজ্ঞান প্রদর্শনীর মাধ্যমে সংস্কৃত শেখানো হচ্ছিল ।এই প্রশিক্ষণে বিশেষ আকর্ষণ ছিলো যে সকলে সংস্কৃত ভাষায় কথা বলছিলো ,যা দেখে সাধারণ মানুষ একটু আশ্চর্য হয়েছিলো ।প্রশিক্ষণ এর শেষের দিকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয় ,যা দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল দেখা যায় ।এই প্রশিক্ষণ এর একটি দিক হলো যে যারা আবাসিক বর্গে থাকতে পারে নি তাদের জন্য বিশেষ করে সংস্কৃত প্রেমী স্থানীয় মানুষ জনের জন্য ১০দিনের একটি বিশেষ সংস্কৃত সম্ভাষণ ক্লাসের ব্যবস্থা ছিলো সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত। জাতি বর্ণ নির্বিশেষে এই শিবিরে সকলে অংশ গ্রহণ  করেন । কমলবাবুকে সংস্কৃতভারতীর উদ্দেশ্য ও কার্য পদ্ধতি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান যে “আমাদের উদ্দেশ্য হলো ভারতের সমস্ত মানুষেরই উচিত সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ন্যূনতম জ্ঞান অর্জন করুক।

কারণ সংস্কৃত ভারতের ভাষা আর একে রক্ষা করার দায়িত্বও ভারতীয়দের উপরই বর্তায়। তাই জনগণকে সংস্কৃত বিষয়ে  সচেতন করতে এবং খুব সরল ভাবে মাত্র দশদিনে নিখরচায় সংস্কৃত শেখাই।” সেটা কিভাবে করা হয়?  এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান সংস্কৃত প্রেমী মানুষেরা এক জায়গায় একত্রিত হলেই আমরা ২ ঘণ্টা করে প্রতিদিন সেখানে গিয়ে প্রয়োজনে সেখানে থেকে তাদের মাত্র ২০ ঘণ্টায় (১০ দিনে ২ ঘণ্টা করে) সংস্কৃত সম্ভাষণ  (কথোপকথন) শেখাই।

একজন সংস্কৃত শিক্ষিকা তার অনুভব আমাদের জানালেন “অহং রত্না দত্তঃ । সংস্কৃত ভারতী আয়োজিত 31শে মে থেকে 10ই জুন পর্যন্ত দশদিনের  শিবিরে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।আমার শিবিরে ভীষণ ভাল লেগেছে এর প্রথম কারণ সকলের ভ্রাতা ভগিনী সম্বোধনে। আমি এগারো বছর ধরে সংস্কৃত বিষয়ে শিক্ষকতা করি । তবুও সংস্কৃততে কথা  বলতে পারতাম না। এই দশদিনে  দুইজন শিক্ষকের  প্রচেষ্টায় এখন অল্প অল্প সংস্কৃত বলতে পারছি।তাই ভীষন ভালো লাগছে।

 

শিবিরে পৌঁছাতে হত সকালে পনে  নটার আগে।সকালে স্নান খাওয়া সেরেই সশিবি রে যেতাম।এর ফলে আমার সকালে স্নান করার  অভ্যাস হ্য়ে গেছে আর এখন প্রতিদিন বিদ্যালয়ে প্রার্থণার আগেই পৌঁছে যাচ্ছি।আগামী দিনে আরও শিবিরে  যোগদান করার ইচ্ছে আছে।”
এর পূর্বে সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসারের উদ্দ্যেশে মালদায় কোনো সংগঠন তেমন কাজ করে নি ।আর যাদের ব্যবস্থাপণায় এই বৃহৎ সংস্কৃত কর্মযজ্ঞটি সম্পন্ন হয় তাদের মুখ্য ব্যবস্থাপণায় ছিলেন জয় সাহা ,ষষ্ঠী দাস ,সন্তোষ কুমার দাস ,বনশ্রী সাহা ,অমিত হালদার, তাপসী মন্ডল এনারা প্রত্যেকেই উচ্চ বিদ্যা লয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ,এছাড়া অনেক ছাত্র ছাত্রী এবং অনুরাগীরা এই বর্গ টি চালানোর জন্য অনেক সহযোগিতা করেন । তাদের মধ্যে মধু চৌধুরী,  মনোজিত ঘোষ,  সুরোজিত দাস, ধনঞ্জয় পোদ্দার, রিমি চৌধুরী, নিশিকান্ত পাণ্ডে, সুমিতা গোস্বামী, শেখর মণ্ডল, কল্যাণ ঘোষ, দীপঙ্কর ঘোষ, শম্ভু দা প্রমুখরা বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

2 days ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

3 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

3 days ago

বিহারের জামুইতে ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবসে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের জামুই জেলায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে…

3 days ago

২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আগামী ২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ঐ একই দিনে নান্দেথ…

5 days ago

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তা

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তায় ‘সরস মেলা’র উদ্বোধন করবেন ।আগামীকাল তিনি যাবেন…

5 days ago