আটো চালান ও গাছ লাগান এই পাগলা


বৃহস্পতিবার,৩১/০৫/২০১৮
518

পিয়া গুপ্তা---

বিশ্ব উষ্ণায়ন কী? তা তিনি বোঝেন না। দূষণের জেরে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর বিষয়টিও তাঁর অজানা। শুধু বোঝেন, আগামীকে বাঁচাতে সবুজায়ন চাই। তাই তিনি গাছ লাগান। পথ প্রান্তরে গাছ লাগানোই তাঁর নেশা। প্রতিদানে প্রশাসন বা সমাজের কাছে চান না আব্দুস সুভান। শুধু চান, তার গাছ গুলো যেন বেঁচে থাকে। কেউ যেন কুঠার হাতে হত্যালিলা না চালায়।

আমরা যারা প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের বিবেকের ঘরে অনুররণ সৃষ্টি করে কিছু প্রথাবিহীন স্বশিক্ষিত  আবদুস সুভান এর মতো মানুষগুলো। যিনি ইতোমধ্যে ‘গাছ পাগলা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। অভাব ও সংসারের দৈন্যদশাকে উপেক্ষা করে আমৃত্যু তিনি গাছ লাগিয়ে যাবেন বলে সংকল্প করেছেন পেশায় এই   আটো চালক ।

স্বাস্থ্যসম্মত সুন্দর পরিবেশ রক্ষায়   ৩৭ বছর ধরে গাছ রোপন করে চলছেন আবদুস। এ পর্যন্ত ৬০ হাজার গাছ লাগিয়েছেন এই বৃক্ষপ্রেমী। একদিকে যখন রাস্তার কিংবা বনের বৃক্ষ নিধন করে সবুজ পরিবেশ ধ্বংস করে চলছে  কাঠ চোরাই কারবারিরা। তখন অন্য দিকে  প্রাণী  কূল কে রক্ষা  করতে  ছোট বেলা থেকে গাছ লাগিয চলছেন আব্দুস সুভান। সে নিজের উদ্যোগে রাস্তায় মাটি ফেলে বৃক্ষ রোপন করেছেন । শুধু তা নয়, রাস্তার ধারে তাঁর লাগানো গাছ গুলিকে নিয়মিত ভাবে পরিচর্যা করছেন আব্দুস সুভান। তাঁর কীর্তি কলাপ দেখে হতবাক এলাকার বাসিন্দারা।

তার কীর্তি কলাপে খুশি হয়ে তার এলাকাবাসীরা জানান, আবদুস এর মতো প্রকৃতি প্রেমী সমাজে আর  পাঁচ জন লোক থাকলে রাস্তার কিংবা বনের বৃক্ষ গুলি আজ নিধন হত না। ধ্বংস হত না সবুজ পরিবেশ। কিন্তু সমাজের অধিকাংশ মানুষ গাছের প্রতি আমরা যত্ন নিই না। হামেশাই তা অবহেলা করি। গাছ যে আমাদের পরম বন্ধু নতুন করে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছে, ছোট বেলায় সুভানের বয়স যখন ৫ বছর ছুইছুই তখন তার মা এ জগৎ ছেড়ে চলে যান। বাবা মারা যান মায়ের মৃত্যুর ১২ বছর আগেই। বেড়ে ওঠা ছোট বেলা থেকে গাছের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা।

এলাকায় কেউ যদি তাঁর চোখের সামনে গাছ কেটে ফেলত তখন গড়িয়ে পড়ত তাঁর দুচোখের জল। এমনি করে গাছ পালার প্রতি ভালোবেসে বড় হয়েছেন আব্দুস সুভান। পেশায় সে একজন অটো চালক। সংসারে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁর ছেলে মেয়েরা চাকুলিয়ার ঘর ধাপ্পা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। আর্থিক সচ্ছলতা একেবারে নেই। অটো চালিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। চাকুলিয়ার ঘর ধাপ্পা গ্রামের এক চিলতে ভিটে জমির উপর একটি ছোট্ট ঘর রয়েছে সুভানের। তাঁর বিনয়ী ব্যবহার এবং গাছ পালার প্রতি অগাধ ভালোবাসা এলাকার মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।

লেখাপড়া না জানলেও গাছের ও যে প্রাণ আছে তা ছোট থেকেই জানতেন আব্দুস সুভান ।  ছোট বেলায় মা বাবা কে হারিয়েছি সুভান। পালিত হয়েছি অন্যের ঘরে। সেই আবেগ থেকে গাছ কে ভালো বাসতে শিখেছি। আমাদের শিশুদের কত আদর যত্ন করে বড় করি না কেন। তারা বড় হয়ে অনেকেই নিজের মা বাবা কে ভালোবাসে না। কিন্তু গাছ হামেশাই জীবজন্তু কে পরম যত্নে মন উজার করে ভালোবাসা প্রদান করে । এছাড়া ফল দেয়, পরম ক্লান্তিতেও ছায়া প্রদান করে গাছ। গাছের সাহায্যে অক্সিজেন গ্রহন করি। এরা কখনও কারও প্রতি হিংসা করে না এই বিশ্বাস কে আগলে আজ বছরের পর বছর পরম লালন পালনে গাছ লাগিয়েছেন সুভান।

উত্তর দিনাজপুর জেলা বন বিভাগের এক আধিকারিক বিপর্ণ দত্ত বলেন, ছেলেটি আমাদের মন জয় করে নিয়েছেন। তাঁর এ হেন কার্যকলাপ সমাজের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। গাছের সঙ্গে প্রাণী জগতের যে নিবিড় ভালোবাসা সেই বার্তাই আবার উজ্জীবিত করেছেন গোটা সমাজের কাছে আব্দুস সুভান।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট