সামনেই গরমের লম্বা ছুটিতে ঘুরে আসুন উত্তর ভারতে অবস্থিত হরিদ্বার ,ঋষিকেষ,মৌসুরি ,দেরাদুন


শুক্রবার,২৫/০৫/২০১৮
5922

পিয়া গুপ্তা---

সামনেই গরমের লম্বা ছুটিতে কোথাও ঘুরতে যেতে চান।ভাবছেন কোথায় যাবেন? তবে একটা লম্বা ছুটিতে ঘুরে আসুন উত্তর ভারতে অবস্থিত হরিদ্বার ,ঋষিকেষ,মৌসুরি ,দেরাদুন থেকে।উত্তর ভারতের অপরূপ সৌন্দর্য এই জায়গায় না গেলে বুঝতে পারবেন না। তীর্থকামী কিংবা ভ্রমণপিয়াসীদের মধ্যে হরিদ্বারে যাননি এমন মানুষের সংখ্যা যদিও এখন নেহাতই কম।
কারণ হরিদ্বার তীর্থক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। পুরাতন আর নতুন মিলিয়ে হাজারের বেশি মন্দির রয়েছে হরিদ্বারে। তবে এখানকার প্রধান আকর্ষণ হর কি পৌরি ঘাট। আমাদের কলেজ ভ্রমণে বেছে নেওয়া আর পাঁচটি জায়গা গুলির মধ্যে অন্য তম হল হরিদ্বার ।দিল্লি থেকে ৮-৯ ঘন্টার মধ্যেই হরিদ্বারে পৌচে যাওয়া যায় । আমাদের কলেজ ভ্রমণের প্রথম দিন কেটেছিলো হরিদ্বার ।হরিদ্বারে একটি হোটেলে আমরা ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরেই বেরিয়ে পরি হরিদ্বারের সেই গঙ্গরতি দেখতে ।

হরিদ্বারে গঙ্গার পাশে এলেই দেখা যাবে অসংখ্য পুণ্যার্থী গঙ্গাস্নান সেরে এখানকার বিভিন্ন মন্দিরে পূজা দিচ্ছে । সূর্যাস্তের পরেই ঘণ্টাঘরের বিপরীত দিকের ঘাটে বিপুল উত্সাহ আর উদ্দিপনার সঙ্গে শুরুহয় এখানে গঙ্গা আরতি। আরতির সাথে সাথে গঙ্গা মাতার নামে জয়ধ্বনি আর ভজনগান যেন সকল অপবিত্রতা মুছে ফেলে। এখানে উপস্থিত জনগণের অনেকেই গঙ্গার স্রোতে ফুল ও প্রদীপের ডালা ভাসান। আমরা হরিদ্বারে গঙ্গারতি দেখেই বেরিয়ে পরি স্যার ম্যাডাম দের সাথে কিছু শপিং করতে । হরিদ্বার গেলে অবশ্যই ঘোরাঘুরির ফাঁকে ফাঁকে একটু শপিং করতে পারেন আপনারাও।এখানে বহু রকম ঠাণ্ডার পোশাক একদম সস্তায় কিনে নিতে পারেন।শপিং এর ফাঁকে ফাঁকে হরিদ্বারের ফুচকো ও রাবরি যেন মন ভরে যায় খেয়ে । হরিদ্বারে গঙ্গার চারপাশে যেন সন্ধ্যা হতেই বসে যায় হরেক রকম দোকানের মেলা।এখানে এসে পূজোর সব রকম সামগ্রী পাবেন তা নিঃসেন্দহে বলা যেতে পারে।

হরিদ্বারে “হর কি পৌরি ঘাটের “অদূরবর্তী পাহাড়ে রয়েছে মনসা মাতার মন্দির। রোপওয়ের সাহায্যে নিমিষে পৌঁছে যাওয়া যায় মন্দির পরিসরে। মন্দির চত্ত্বর থেকে পুরো হরিদ্বার শহর আর বেগবতী গঙ্গাকে দেখতে এখানে বেশ ভালোই লাগে। এছাড়াও হরিদ্বারে রয়েছে কনখল, ভারতমাতার মন্দির, মা আনন্দময়ীর মন্দির, পবনধাম, কালভৈরব মন্দির, সতীর জন্মস্থান, দক্ষেশ্বর শিবমন্দির ছাড়াও অসংখ্য মন্দির।

এখানে আসা মানুষদের একটি মান্যতা আছে তাদের মতে এখানে না এলে কখনো কোন তীর্থ দর্শনের ফল পাওয়া যায় না। এখানে গেলে অবশ্যই আত্মীয় পরিজনদের জন্য গঙ্গার পবিত্র জল নিয়ে যেতে কিন্তু ভুলবেন না।তবে এখানকার গঙ্গার বেগ দ্রুত প্রবহমান । হরিদ্বারে গঙ্গা স্নানের সময় খেয়াল রাখবেন যাতে কোন ভাবেই শিকল পার না হতে হয।নইলে গঙ্গার স্রোত নিমেষে আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে।তবে হরিদ্বার গেলেই অবশ্যই খাবারের লিস্ট থেকে আমিষ সরিয়ে দিন।কারণ এখানে প্রবেশ করা মাত্রই নিরামিষের নানান রসনা তৃপ্তিময ভোজন আপনাকে স্বাগত জানাবে।

হরিদ্বারের প্রতি ১২ বছর ধরে কুম্ভ মেলাতে অংশ নেওয়ার জন্য লাখ লাখ ভক্তরা এখানে গঙ্গার তীরে একত্রিত হয়। হরিদ্বার গেলে তবে বোঝা মুশকিল যে লোকালয়ের কোলেই ভিতরে এক অপরূপ সৌন্দর্য পরিবেশ রয়েছে ।যা সৌন্দর্য বাইরে থেকে কিছুতেই বোঝার উপায় নেই । চারদিকে ঘন গভীর বন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে। হরিদ্বারেই রয়েছে বিল্বকেশ্বর পর্বতে।
জানা যায় আগে হরিদ্বার পাহাড় বনে বড় বড় হাতি, বাঘ ভালুক দেখা যেত । বহু ঋষি মুনিরা এখানেই তপস্যা করতো। জানা যায় পুরানকালে এই বিল্বকেশ্বর পর্বতে হিমালয়ের কন্যা পার্বতী তপস্যা করে মহাদেবকে পেয়েছিলেন এখানে । হরিদ্বারে গেলে বাবা রামদেব বাবার পতঞ্জলি থেকে অবশ্যই ঘুরে আসুন ।

এছাড়া হিন্দুধর্মের আশ্চর্যজনক ঘটনাগুলি জানতে এবং চাঁদী দেবী, মায়া দেবী, হার কি পাউরি এবং মানসা দেবী মন্দিরগুলি দেখতে শহরটা একবার ঘুরতে আসতেই পারেন । হরিদ্বারে অপরূপ সৌন্দর্য ও আলোকিক সব কাহিনী শুনে ও দেখে শেষ করা যাবে না।পরের দিন সকালে আমরা সকল ছাত্র ছাত্রী ও স্যার ম্যাডামরা গঙ্গা তে স্নান ও পূজো দিয়ে ব্রেকফাস্টে লুচি ,তরকারি,মিষ্টি ও খেয়েই দুগ্গা দুগ্গা বলে বাসে করে বেরিয়ে পরলাম ঋষিকেশ। আমদের কলেজ ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন আমরা হরিদ্বার থেকে বেরিয়ে পরি ঋষিকেষের উদ্দেশ্যে ।

(ঋষিকেশ):-
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃ্দ্ধ গন্তব্যস্থল হলো ঋষিকেশ। গঙ্গা নদীর তীরে, শান্ত ও নির্মল হয়ে আচ্ছাদিত রয়েছে ঋষিকেশে। পবিত্র নগর ঋষিকেশে ধূপের সুগন্ধ এবং ঘন্টার শব্দে যেন মনের সব মলিনতা দূর করে দেয় । ঋষিকেশে গঙ্গা ও চন্দ্রবাগ নদীর তিরে লক্ষণ ঝুলা, স্বর্গ আশ্রম, রাম ঝুলা ও নীলকন্ঠ মহাদেব মন্দির রয়েছে যা তীর্থযাত্রার জন্য জনপ্রিয়।

ঋষিকেশের সবথেকে আকর্ষণীয় সন্ধ্যারতি।যেটা আমাদের সকল কে ভীষণ মুগ্ধ করেছিল ।ঋষিকেশ প্রবেশ পথেই চোখে পড়ে লক্ষণ ঝুলা ও রামঝুলা। গঙ্গা নদী জুড়ে ব্যাপ্ত 450 ফুট দীর্ঘ সেতু ছিল ঋষিকেশে চোখে জুডানো সৌন্দর্য ।

ত্রিবেণী সংঘ:-
ঋষিকেশে অবস্থিত পবিত্র নদী গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল ত্রিবেণী । হাজার হাজার উপাসকেরা এখানে জলের মধ্যে একটি ডুব দিতে রোজ সকালে এবং বিকালে ত্রিবেণী ঘাটে ঝাঁকে ঝাঁকে ভিড় করে। তারা বিশ্বাস করেন যে এতে তাদের পাপ ধুয়ে যাবে। ত্রিবেণী ঘাটে অনুষ্ঠিত প্রতি সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতির মহত্ত্ব এখানে দেখা যায়। ঋষিকেশে আছে আদিগুরুশঙ্করাচার্য্যের দ্বারা নির্মিত দ্বাদশ শতকের ভারত মন্দির ।

গীতা ভবন : হিন্দু দের এক অন্যতম প্রাচীন মন্দির গীতা মন্দির।

নীলকন্ঠ মহাদেব : এছাডা গঙ্গা জুড়ে পর্বতের চূড়ার উপরে অবস্থিত নীলকন্ঠ মহাদেবের মন্দির এটি এমন একটি প্রসিদ্ধ স্থান যেখানে প্রভু শিব বিষ পান করেছিলেন এবং নীলকন্ঠ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।

লক্ষণ মন্দির : এমন একটি স্থান যেখানে রাম ও লক্ষণ ঋষি কুন্ডে তাঁদের পাপ ধুয়ে ফেলার পর লক্ষণ এখানে ধ্যান করেছিলেন। ঋষি কুন্ড এখানেই অবস্থিত।
ঋষিকেশ থেকে আবার হরিদ্বার পৌছে আমরা রাতের খাবার সেরেই সকাল সকাল ব্রেক ফাস্ট করেই তৃতীয় দিন বেরিয়ে পরি দেরাদুন এর উদ্দেশ্যে

(দেরাদুন ভ্রমণ ):-
উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুন প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি স্বপ্নভূমি। এটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। স্থানটি তার আনন্দদায়ক আবহাওয়ার সঙ্গে হৃদয় ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করে।
দেরাদুনে সব থেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় সহস্রধারা। যেখানেপৌছাতেই ঝরনা সকল কে স্বাগত জানাবে । ঝরনাধারা নিচে গিয়ে ধারায় মিশে যাচ্ছে এক অদ্ভুত ছন্দে। বেশ ভালো লাগল দৃশ্যটা। দেরী না করে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আমরা ধারার কাছে চলে এলাম। পানির রং এখানে সবুজাভ আর খুব ঠান্ডা। দেরাদুনে রয়েছে ম্যালসি ডিয়ার পার্ক এবং রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক। দেরাদুনের অন্যান্য আকর্ষণ হলো মাইন্ডরোলিং আশ্রম, তাপকেশ্বর মন্দির, রবারের গুহা, শাস্ত্রধারা ও টাইগার জলপ্রপাত। দেরাদুনে গেলে পাওয়া যাবে নৈনিতালের স্বর্গোদ্যান । এখানে আপনার পরিবারের সঙ্গে কিছু ভাল সময় কাটাতে পারেন। নৈনী লেকের তীরে বনভোজন উপভোগ করতে পারবেন বা স্বচ্ছ পরিষ্কার জলের উপর নৌকা চালাতে পারবেন। এছাড়াও এখানে আপনি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন। দেরাদুন ঘুরে শেষ দিন আমরা বেরিয়ে পড়লাম পাহাড়ের রানির হাত ধরে।

(মৌসুরি ভ্রমণ ):-

দেরাদুন থেকে 35 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মৌসুরি। মৌসুরির সৌন্দর্য ‘পাহাড়ের রানী’ হিসাবে পরিচিত মৌসুরির সৌন্দর্য আপনার চেতনাকে পুনরুদ্দীপ্ত করে তোলবে যখন হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য আপনার চোখে এসে ধরা দেবে। আপনি আপনার প্রিয়জনের সাথে আপনার বিশেষ কোনো মুহূর্ত কাটাতে পারেন এখানে। বাচ্চাদের সাথে নিয়ে ঝারিপানি ঝর্ণাটিও দেখে আসতে পারেন।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট