ইট পাথরের এই যান্ত্রিক শহরে আভিজাত্য যেন এক রকম ঈর্ষান্বিত হয়ে দাঁড়ায় মাঝে মাঝে। যান্ত্রিক এই শহরকে অনেকে আবার ভাগ্য পরিবর্তনের স্থানও মনে করেন। কিন্তু আসলেই কি সবার ভাগ্য পরিবর্তন ঘটে এই শহরের সামাজিক তারতম্যে? কিছু শ্রেণির মানুষ কিন্তু আমাদের চার পাশেই রয়েছে। “ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন জলসানো রুটি” সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই কবিতার লাইন হয়ত এই শ্রেণির সমস্যায় জর্জরিত মানুষের সাথেই মানায়। দালান কোঠার এই আভিজাত শহরে হরহামেশাই আমাদের চারপাশে এদেরকে দেখে থাকি
কেউ ওদের বলে বেদুইন, কেউবা বলে বঞ্জারা।আবার কেউ যাযাবর অথবা ভেগাবন্ড বলেই ডাকে।ভারতীয় হয়েও ওরা যেন এখনও ভোটার হতে পারেনি।ওদের নেই ভোটার কার্ড,নেই রেশন কার্ড বা আধার কার্ডের মতো কোনও পরিচয় পত্র।ফলে ওরা গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা । গোটা দেশ জুড়ে যারা একেক সময় একেক জায়গায় ঘুরে বেড়ায়,তাবু খাটিয়ে মাঠে ময়দানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে তারা যে শুধু নামেই মৌখিক ভাবে ভারতীয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা । কথা হচ্ছিল ইসলামপুর ব্লকের রামগঞ্জ ওভার ব্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে ঝন্টি সারাংতার সাথে।
সে জানায়,ছোট থেকেই বাবা মায়ের হাত ধরে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্য ঘুরতে ঘুরতে কয়েক দশক পেরিয়ে গেছে।আদৌ তাদের কোথাও কোনও বাড়ি রয়েছে কিনা তা জানাও নেই।এই তাবুর অস্থায়ী বাড়িই তাদের পরম্পরা।তারা এটাই জানে।বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরোনো নিরক্ষর ওই মানুষগুলো এর বেশি কিছু জানেও না।জানতে চায়ওনা।কারোর বিরুদ্ধে তাদের কোনও অভিযোগও নেই।তারা শুধু চায় নিজেদের মতো বাঁচতে। তাদের মতো আরও দুএকটা দলের সাথে এবিষয়ে কথা হলেও মূল বিষয় যেন একটাই।তারাও জানায় প্রায় একই রকম অনুভূতির কথা।
কিন্ত ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও কেন ওদের কোনও পরিচয় পত্র নেই? এই প্রশ্নের উত্তর দেবার হয়তো কেউই নেই।যদিও ইসলামপুর মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থেন্ডুপ শেরপা জানান,প্রত্যেকেরই পরিচয় পত্র থাকা জরুরী এবং বাধ্যতামূলক।ওদের কাছেও পরিচয় পত্র থাকার কথা।ওরা যেখানকার বাসিন্দা সেখান থেকে ওদের ভোটার কার্ড সহ সমস্ত পরিচয় পত্র সংগ্রহ করার কথা। আপনাদের কখনও ভোট দিতে ইচ্ছে করেনা? আপনারা যে ভারতীয় তার প্রমান পত্র না থাকাতে আপনাদের অসুবিধা হয়না?
এই ধরণের অনেক প্রশ্নের উত্তর এককথায় ‘না’ উঠে এলো ওদের কাছ থেকে বেশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই।আসলে নাগরিক পরিষেবা থেকে শুরু করে বাড়ির খুদেদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার কোনও বিষয়ই নেই তাদের কাছে।তাই এইসব বিষয় নিয়ে ভাবনাই যেন নেই তাঁদের।ব্যাপারটা যেন এমন,’এই বেশ ভালো আছি’।তবুও প্রশ্ন চিন্হ থেকেই যায়,ওদের পরিচয় পত্র আছে কিনা সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবার কি কেউ নেই?