মহঃ সেলিম ও বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে তৃণমূল কংগ্রেসে জয়েন করবেন মইনুল হাসান


বুধবার,১৮/০৪/২০১৮
845

ফারুক আহমেদ: ১৯৬৯ সালে বিপিএসএফ এর সদস্য হন মইনুল হাসান। ১৯৭৯ সালে এসএফআই এর মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতি হন। ১৯৭৬ সালে পার্টি সদস্য হন তিনি। ১৯৮০ সালে পার্টির মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সদস্য হন। ১৯৯৫ সালে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য হন। দুবার লোকসভার সদস্য এবং একবার রাজ্যসভার সদস্য হন। তিনি দুটি বিষয়ে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীলাভ করেন। বিএড ও এমএড, ডিগ্রীলাভ করেন প্রথম বিভাগে। তাঁর ০৩/০১/২০১৮ তে ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হয়। তাঁর জন্ম হয় মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার কুমারপুর গ্রামে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই রাজনীতি করছেন। ১৯৭৯ সাল থেকেই পার্টিরর সর্বক্ষনের কর্মী। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ ডিওয়াইএফআই এর রাজ্য সভাপতি ছিলেন। মূলত: তাঁর উদ্যোগেই মুর্শিদাবাদ জেলায় আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়েছে। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সদস্য ছিলেন।

সিপিএম সুকৌশলে মইনুল হাসানের মতো শিক্ষিত নেতাকে সরাল। তিনি উচ্চ শিক্ষিত, দীর্ঘ দিনের পার্টি মেম্বার, সাংসদও হয়েছিলেন। সমাজ সংস্কৃতি চর্চা করে থাকেন তাঁর মেধাবী মননশীলতায়। মুসলমান সমাজ নিয়ে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন। এবছর বইমেলাতে “উদার আকাশ” প্রকাশন থেকে তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। বইমেলাতে প্রেস কর্নারে “উদার আকাশ” আয়োজন করেছিল তাঁর রচিত গ্রন্থ সহ আরও কয়েকটি বইপ্রকাশের অনুষ্ঠান। ওই গ্রন্থপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি আসেন এবং মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। এতে নাকি দলের একটা অংশ বেজায় চটেছেন এবং তাঁকে চরম অন্যায় ভাবে রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার কলকাঠি নেড়েছেন। সুকৌশলে রাজ্য কমিটি থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ দলের অনেক সদস্যই করেছেন। তবু দলের একতরফা সিদ্ধান্তে তিনি বাদ পড়লেন। প্রসঙ্গে তাঁর রচিত বইটি একটি মহা-মূল্যবান গ্রন্থ। বইটির নাম “ইসলামী আইন : বিবাহ তালাক উত্তরাধিকার”।

বেশ কিছুদিন ধরে উচ্চ নেতৃত্ব তাঁকে কোণঠাসা করে, কমিটি থেকে বাদ দেওয়া একটা অপকৌশল মাত্র। হঠকারী সিদ্ধান্ত। সিপিএম ওঁকে বাদ দিয়ে দলের যে সর্বনাশ করছে, এটা বোঝার ক্ষমতাও কি সেই দলের নেতৃত্বের নেই…বলে অনেক নেতাই মুখ খুলছেন দলের অন্দরে। সিপিএম দলটিকে এই নেতৃত্ব কোথায় নিয়ে যেতে চায়? এই প্রশ্নও উঠছে।

মইনুল হাসানকে রাজ‍্য কমিটি থেকে সরানো সিপিএমের হঠকারী সিদ্ধান্ত বলেছেন, দলের বহুকর্মীবৃন্দ।
এই সিদ্ধান্ত সৈফুদ্দিন চৌধুরী, আবু আয়েশ মণ্ডল, আবদুর রেজ্জাক মোল্লা, সাত্তার মোল্লা, আবদুল মুজিদ মাস্টার, আইনুল হক, মাফুজা খাতুন ও মইনুল হাসানকে সরিয়ে রাজ্যে বাঙালি মুসলিমদের এই বার্তাই দিল সিপিএম যে বাঙালি মুসলমান কোনও নেতাকেই তারা নেতৃত্বে উঠতে দেবে না। কমরেড মুজফফর আহমদ ও কমরেড আবদুল হালিম এর তৈরী করা পার্টির আজ এই হাল! মুসলমানদের মধ্যে যারা এখনও এই পার্টির কাজে ও নেতৃত্বে যুক্ত রয়েছেন এই পরিনাম তাদেরও একদিন আসবে। ভেবে দেখেছেন কি?

মইনুল হাসানের মতো নেতাকে বাদ বাঙালি মুসলমান নেতৃত্বকে দুর্বল করল। আগামীতে সেলিমরাই একাই রাজত্ব করবে এবং উর্দু ভাষীদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে তাদের কাজকে সহজ করল।

নতুন যে ৮০ জনের রাজ্য কমিটি হয়েছে তাতে মাত্র ৮ জন মুসলিম নেতাকে সদস্য রাখা হয়েছে। সিপিএম দলের কর্তারা আসলে মুসলিমদের যোগ্য নেতাকে দলে বরাবর জায়গা দিতে চায় না এটাই তার বড় প্রমাণ।
যেখানে এই রাজ্যে জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু মুসলমান। আরও উল্লেখ্যও যে ২২টি জেলার মধ্যে কোথাও একজনও সংখ্যালঘু মুসলমান সম্পাদক নেই। পশ্চিমবঙ্গে একজন মুসলিম মিহিলা কমরেড পাওয়া গেল না যাকে রাজ্য কমিটির সদস্যা করা যেত? অথচ তপশীলী জাতি ও তপশীলী উপজাতি সম্প্রদায়েরওও মহিলা কমরেডকে রাজ্য কমিটিতে রাখা হয়েছে।

অথচ তিনটি জেলার জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি মুসলমান বসবাস করেন। মুর্শিদাবাদ, মালদা ও উত্তর দিনাজপুর।মইনুল হাসান সিপিএম দলের সদস্যপদ রিনিউ করেননি কেন তা এক সাক্ষাৎকারের উত্তরে তিনি জানান, “প্রথমত রাজনৈতিক সিপিএম যে লাইন নিয়েছে, ‘তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে হবে, বিজেপিকে ঠেকাতে হবে’, এটা আদ্যোপান্ত ভুল। শুধু ভুল না, অবাস্তব এবং দ্বিচারিতায় ভরা। দ্বিতীয়ত, সাংগঠনিক। সামনের লোকসভা ভোটে দেশে কুড়ি কোটি নতুন ভোটার হবে। আর সিপিএমে এখনও রাজ্য কমিটির সদস্যের বয়সের সর্বোচ্চ লিমিট ৭৫, কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৮০ বছর। এ হয় নাকি? আর তিন নম্বর কারণ, সামাজিক।

যুগের পর যুগ দল বলে আসছে, সামাজিক বিন্যাস দেখে দলে নেতৃত্ব তুলে আনা হবে। এত বছরে পশ্চিমবঙ্গে একটা জেলাতে মুসলমান সম্পাদক করা গেল না? বীরভূমে ৩৫ শতাংশ আদিবাসী, সেখানে আদিবাসী জেলা সম্পাদক করা হল। অথচ, মুর্শিদাবাদে ৬৯, মালদহে ৫২, উত্তর দিনাজপুরে ৫৩ শতাংশ মুসলমান। কোথাও কিন্তু মুসলমান জেলা সম্পাদক করা হয়নি।”

সিপিএম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন মইনুল হাসান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে মইনুল হাসান তৃণমূল কংগ্রেসে জয়েন করার কথা চলছে। বাংলার দক্ষ রাজনীতিবিদ মইনুল হাসান তৃণমূল কংগ্রেসে জয়েন করে মুর্শিদাবাদ, মালদা ও দুই দিনাজপুর জেলাতে সিপিএম দলের সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসাবেন এবং মহঃ সেলিমদের সঙ্গে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ও পতন সুনিশ্চিত করবেন।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট