Categories: রাজ্য

আর্থিক অনাটনের স্বীকার গাজনের সং আজ সংকটের মুখে

পিয়া গুপ্তা ,উত্তর দিনাজপুর: দু পয়সা রোজগারের জন্য কখনও শিব- পার্বতী কখনও বাঘ-ভাল্লুক সেজে লোককে আনন্দ দেন এঁরা৷ চড়া সাজগোজে ঢাকা পরে যায় এদের আর্থিক কষ্ট, অসহায়তা৷বাংলার অন্যতম লোক উৎসব শিবের গাজন। চৈত্রমাস এলেই গাজন শিল্পীরা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে যান। নানান রঙ বেরঙের পোশাক পরে গ্রামে  গঞ্জে ঘুরে বেড়ান ।মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা সংগ্রহের সময় গাজন শিল্পীরা  শিবের সাজে সাজেন। গানের তালে তালে করেন নৃত্যও। পুরো চৈত্রমাস গাজন শিল্পীরা একসঙ্গে একটি বাড়িতে থাকেন। নিরামিষ খান, পায়ে জুতা পরেন না, মাটিতে বিছানা করে ঘুমান। বলা যায় এক প্রকার সন্ন্যাস জীবনযাপন করেন। মাস ধরে সংগ্রহ করা চাল ও টাকা দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তির দিন গাজন উৎসব পালন করা হয়। এই পূজায় ধর্মীয় রীতিনীতি কঠোরভাবে মানা হয়। পূজার আগের রাতে শ্মশানে শিবের আরাধনা করতে হয়।  চৈত্র সংক্রান্তির দিন শিবের পূজার পাশাপাশি শিব-গৌরীর বিয়ে, কালীর উন্মাদ নৃত্য প্রদর্শন করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির দিন গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও গোটা বৈশাখ মাসজুড়ে বসে মেলা। তবে বর্তমানে  আধুনিক শহুরে সংস্কৃতির ভিড়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি। পারিবারিক আর্থিক অভাব অনটনে বহু শিল্পীরা গাজনের দলে যোগ দেন।যদিও কিছু উত্সুক মানুষ গাজনের দলে নাম লিখিয়ে নিজের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।তবে বর্তমানে ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেব দেবীর রূপসজ্জায় উপকরণের মূল্য ।একদিকে পারিবারিক অনটন অপর দিকে মূল্য বৃদ্ধি সব মিলিয়ে এই ঐতিহ্য পূর্ণ গাজনের সং আর কতদিন বেঁচে থাকবে তা বলে যায না।

চৈত্রমাস এলেই গ্রামগঞ্জ থেকে গাজন শিল্পীর দল  শহরে এসে শিব গৌরীর নাচ দেখিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করেন। তবে দিন দিন এই সংখ্যা কমে আসছে। একদল গাজন শিল্পীরা বলেন, আমরা চাষবাস করি, বছরের এই সময় তেমন কোনো কাজ থাকে না। ফলে গাজন করি, আবার বৈশাখ মাস এলে যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন চাষের কাজে মাঠে নেমে পড়ি। শিল্পীরা জানান মানুষের কর্মব্যস্ত জীবনের জন্য দিন দিন গাজন শিল্পী কমে আসছে। আগামী দিনে হয়ত আর থাকবে না গাজন । গাজন সং এর একটি দলের সদস্য সমির মণ্ডল জানান গাজনের সং নিয়ে বহু কবি ,সাহিত্যিক ,গল্পকার কত কিছুই না লেখেছেন।তবে কবিতা গল্পের সুন্দর হয় না এদের জীবন।গাজনের সন্ন্যাসী বা ভক্তরা  নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রনা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা করেন। অর্থের অভাবে জোটেনা এদের ছেলে মেয়েদের ও জোটে না বই-খাতা৷ ফলে বাড়তি রোজগারের জন্য বাপ- মায়ের সঙ্গে রাস্তায় পেশার তাগিদে বেরিয়ে পড়তে হয় ৷   সন্ন্যাসী শিব ও গৌরী সেজে এবং অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূতপ্রেত, দৈত্যদানব প্রভৃতির সং সেজে নৃত্য করতে থাকেন।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

3 days ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

4 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

4 days ago

বিহারের জামুইতে ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবসে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের জামুই জেলায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে…

4 days ago

২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আগামী ২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ঐ একই দিনে নান্দেথ…

5 days ago

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তা

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তায় ‘সরস মেলা’র উদ্বোধন করবেন ।আগামীকাল তিনি যাবেন…

5 days ago