নিজস্ব সংবাদদাতা : স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ভাঙড়ের অনন্তপুর। বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ এই অনন্তপুরেই পাওয়ার গ্রিড বিরোধী জমি আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাদের উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন আন্দোলনকারীরা। পাল্টা আন্দোলনকারীদের তরফ থেকেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। দুই পক্ষের মধ্যেই যথেচ্ছ বোমাবাজী ও গুলির লড়াই চলে। ঘটনায় দুপক্ষের অন্তত ছয়জন আহত হন। ঘটনায় আন্দোলনকারীদের ফেলে যাওয়া গোটা পাঁচেক বাইক ও দুটি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন এলাকায় বকডোবা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেয় জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি। যদিও আন্দোলনকারীদের এই প্রতিবাদ মিছিল ঢিবঢিবা বাজার পর্যন্ত গিয়ে ফিরে যায়।
শুক্রবার সকাল থেকেই অনন্তপুর এলাকা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছিল। বেলা যত বেড়েছে ততই পুরানো ছন্দে ফিরেছে ভাঙড়ের এই জনবহুল এলাকা। শুক্রবার সকাল থেকেই এলাকার সব দোকানপাট খুলেছে। রাস্তায় যান চলাচল ও ছিল স্বাভাবিক। অন্যদিকে শুক্রবার বিকেল তিনটে কুড়ি নাগাদ পাওয়ার গ্রিড লাগোয়া মাছিভাঙা গ্রাম থেকে মিছিল শুরু করে জমি আন্দোলন কমিটি। প্রথমে মিছিল বকডোবা মোড় ঘুরে শ্যামনগর মোড় পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও, পরে তা ঢিবঢিবা বাজার পর্যন্ত গিয়েই থমকে যায়। কারন শ্যামনগর বাজার এলাকায় মিছিল বিরোধী প্রচুর মানুষ জমায়েতের খবর পেয়েই এই প্রতিবাদ মিছিল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এই ঢিবঢিবা বাজারেই শেষ করে দেন আন্দোলনকারীরা।
নতুন করে শ্যামনগর বাজারে গণ্ডগোল ছড়াতে পারে ভেবে সেখানে মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ বাহিনী। শ্যামনগর বাজারে মিছিল না এগোলেও ঢিবঢিবা বাজারের পোলের উপর প্রায় পনেরো মিনিট অবস্থান বিক্ষোভ করেন জমি আন্দোলনকারীরা। সেখানে বক্তব্য রাখেন এই আন্দোলনের অন্যতম সদস্য অমিতাভ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ আমরা বারে বারে রাজ্য সরকারের কাছে ভাঙড় সমস্যার সমাধানের জন্য শান্তিপূর্ণ আলোচনা চেয়েছি। কিন্তু বারে বারে আমাদের দিকে বোমা বন্দুক তাক করেছে প্রশাসন থেকে এখানকার তৃণমূল নেতারা। গত ১৭ই জানুয়ারি আমাদের মফিজুল ও আলমগির মারা যায় গুলিতে।
বৃহস্পতিবার আমাদের শান্তিপূর্ণ বাইক মিছিলে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। আমাদের বাইক ও গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তবে এভাবে আমাদের আন্দোলন ভাঙা যাবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ লড়াই বিশ্বাস করি তাই এখনো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। তার মানে এই নয় যে আমাদের চড় মারবে আর আমরা চুপ করে থাকবো। আত্মরক্ষার অধিকার আমাদেরও আছে। আমরা সরকারকে আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি, যদি আমাদের উপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে, মানুষের প্রতিবাদ, মানুষের প্রতিরোধ, মানুষের এই গন আন্দোলন কোথায় যাবে তার কোন গ্যারান্টি জমি কমিটি দিতে পারবে না। কোন শান্তির বাতাবরণের আশ্বাস ও আমরা দিতে পারছি না”। অন্যদিকে জমি আন্দোলনকারীদের এই মিছিল ও বৃহস্পতিবার বাইক মিছিলের নামে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানো ও অশান্তি সৃষ্টির প্রতিবাদে শনিবার কাশিপুর থেকে অনন্তপুর পর্যন্ত মিছিল করবে তৃণমূল কংগ্রেস।