তৌহিদুর রহমান আফনানঃ চারদিকে ছোপ ছোপ রক্ত আর পোড়া গন্ধ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, ধ্বংসস্তুপে পরিণত জনমানবহীন ঢাকা শহরে যেন খাঁ খাঁ করছে। এরই মধ্যে হাজার হাজর পাক সেনা আত্মসমর্পণ করে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে।
আজ থেকে ঠিক ৪৬ বছর পূর্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, দীর্ঘ নয় মাস টানা যুদ্ধের পর যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে পাকবাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ জন সদস্য। যার ফলে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের অবসান হয়ে সৃষ্টি হয় স্বাধীন সার্বভৌম “বাংলাদেশ”।
পাকিস্তানিদের আত্মসমর্ণের দিনই পাকিস্তানি স্টেট ব্যাংকে “বাংলাদেশ ব্যাংক” নামকরণ করে, পরের বছর ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেবছরই ১৬ই ডিসেম্বর গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংবিধান প্রকাশিত হয়। ১৯৭২ সাল থেকেই ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস/বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বাংলাদেশ।
১৬ই ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বোনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপরই স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ঢাকার অদূরে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী। তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দিনের আরো পরের দিকে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত সামরিক বাহিনী কর্তৃক আয়োজিত কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহন করেন মাননীয় রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী।
১৬ই ডিসেম্বর সকাল থেকেই সারা দেশে সৃষ্টি হয় এক উৎসবমূখর পরিবেশ। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিজয় মিছিল বের করেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ঢাকা শহরে প্রায় বাড়ির ছাদে শোভা পায় লাল সবুজের পতাকা। জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমার ভালোবাসি………” সহ বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানে মুখরিত হয় বাংলার আকাশ। এছাড়াও দিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষৃঠানের আয়োজন করেন নানা সংগঠন।