আফনানঃ পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করলো মুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতামূলক সংগঠন ওআইসি। বুধবার ওআইসির জরুরী সম্মেলন থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের “জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী” ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে এ ঘোষণা দেয় ৫৭টি মুসলিম দেশের সমন্বয়ে গঠিত ঐ সংগঠন। একইসাথে আন্তর্জাতিক মহলকে “পূর্ব জেরুজালেম” কে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয় সম্মেলন থেকে। ওদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার ওই সিদ্ধান্ত মানে না।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঐ ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওআইসির জরুরী সম্মেলন ডাকেন সংগঠনের সভাপতি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। ওআইসি এমন এক সময় পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করলো, যখন এক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের আহ্বানে ফিলিস্তিন জুড়ে গণঅভ্যুত্থান চলছে। দেশজুড়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি কোথাও কোথাও ইসরাইলি সৈন্যদের সাথে চলছে তুমুল সংঘর্ষ। লেবাননে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে সেদেশের মুসলিমরা। একই ধারাবাহিকতায় তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশীয়া,বাংলাদেশ, ইউরোপ, লন্ডন ও নিউইয়র্কেও বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এ অবস্থায় ট্রাম্পের ঘোষণার পক্ষে অবস্থান নেওয়া দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ওআইসির ঐ সম্মেলন থেকে।
সম্মেলন শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা মনে করছি (ট্রাম্প প্রশাসনের এই ঘোষণা) অত্যন্ত ভয়াবহ। এর মধ্য দিয়ে (ওই শহরের) আইনগত মর্যাদা পরিবর্তন বোঝানো হয়। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত সারশূন্য। এর কোনো আইনগত বৈধতা নেই। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা যারা সমর্থন করবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এসব মুসলিম দেশ। ”
বুধবার দিনের শুরুতে ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ইউসেফ আল ওথাইমিন তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন। মুসলিম নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এমন পদক্ষেপের জবাবে একত্রিত হয়ে কাজ করতে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা ও তা প্রত্যাখ্যান করছে ওআইসি। এ ঘোষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের অনুভূতিতে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। এতে আঞ্চলিক এবং তার ধারাবাহিকতায় বিশ্বে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
এর আগে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তার বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘোষণার মাধ্যমে ভবিষ্যত ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি আলোচনায় নিজেদেরকে অযোগ্য করে তুলেছে। তারা ইসরাইলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছে।
সম্মেলনের চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার বক্তব্যে ইসরাইলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে অভিযুক্ত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই ঘোষণা সারশূন্য। কারণ, শুধু সুবিধাভোগী ইসরাইল ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশ তার এ সিদ্ধান্তে সমর্থন দেয় নি। দু’এক মিনিট যদি কেউ জেরুজালেমের রাস্তায় হাঁটেন তাহলে তিনি বুঝতে পারবেন এটি একটি দখল করে নেয়া ভূমি।”