তৌহিদুর রহমান আফনানঃ পৃথিবীর তিনটি ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সর্ববৃহৎ জীববৈচিত্র্যময় বন “সুন্দরবন।” গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মোহনায় বাংলাদেশের খুলনা,সাতক্ষীরা,বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত এ বনভূমি। দশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এ বনভূমির ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটারই বাংলাদেশে অবস্থিত। যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.২% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪%। বাকী অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিস্তৃত। প্রচুর পরিমাণে ‘সুন্দরী গাছ’ থাকায় এ বনকে সুন্দরবন বলা হয় বলে ধারনা করা হয়।
১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর ২১ তম অধিবেশন সুন্দরবনকে “বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ” হিসাবে স্বীকৃতি দেয় । বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ নিরবিচ্ছিন্ন হলেও ইউনেস্কো বাংলাদেশী অংশকে “সুন্দরবন” এ ভারতীয় অংশকে “সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান ” হিসাবে সূচীবদ্ধ করেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুঘল অামলে ( ১২০৩ – ১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা সুন্দরবনের ইজারা নেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে এ বনভূমির অায়তন বর্তমানের দ্বিগুণ ছিলো। ১৮২৮ সালে বৃটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্তাধিকারী অর্জন করে। ১৮২৯ সালে এল.টি.হজেয প্রথম এ বনভুমির জরিপ কার্য সম্পাদন করেন। ১৮৬০ সালের দিকে ভারতের তৎকালীন ‘ বাংলা ‘ প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর সুন্দরবন সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার অাওতায় অাসে। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবনকে ”সংরক্ষিত বন ” হিসেবে ঘোষনা দেয়া হয় এবং ১৮৭৯ সালে এ বনভূমির সকল দায়-দায়িত্ব বন বিভাগের উপর ন্যাস্ত করা হয়।
মূলত সামুদ্রিক স্রোতধারা, ম্যানগ্রোভ বনভুমি, লবণাক্ত ও ক্ষুদ্র অায়তনের দ্বীপমালা দ্বারাই সুন্দরবন বেষ্টিত। প্রায় ৩১.১ শতাংশ অর্থাৎ ১৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে জলাকীর্ণ অঞ্চল। এ বনে সুন্দরী গাছ ছাড়াও গেওয়া,কেওড়া, বাইন,পশুর,গড়ান,অামুরসহ প্রায় ২৪৫ টি শ্রেণী ও ৩৩৪ প্রজাতির গাছ রয়েয়ে।
স্বনামে পরিচিত ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ চিত্রা হরিণ ও খালের পাড়ে শুয়ে থাকা কুমির দেশী বিদেশী পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও নানা ধরনের পাখি ও বিভিন্ন প্রজাতি প্রাণীর অাবাসস্থল নামে এ বনভুমি পরিচিত।
সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের মধ্যে “করমজল” স্পটটি পর্যটকের কাছে সবচেয়ে বেশী অাকর্ষণীয়। দূরত্বের দিক দিয়ে বাংলাদেশের মোংলা থেকে নদীপথে সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে এ স্পটটি। এখানে রয়েছে হরিণ ও বানরের বিচরণস্থল, সুউচ্ছ ওয়াচ টাওয়ার,কুমীর ও কচ্ছপের প্রজননকেন্দ্র, ডলফিন ও বন্য প্রাণীর প্রকৃতিসহ বিভিন্ন অাকর্ষণীয় স্থান।করমজল ছাড়াও হারবাড়িয়া, হিরণ পয়েন্ট, কটকা, কচিখালী ও দুবলার চর নামের পর্যটন স্পটে দর্শনার্থীরা নিয়মিত ভীড় করেন।