মোহাঃ বেলাল উদ্দিন মন্ডল বাংলা এক্সপ্রেস মুর্শিদাবাদ: মুর্শিদাবাদ ছিলো বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী এক সময় । তার নিদর্শন আজ রয়ে গেছে ,পুরানো স্মৃতি হিসেবে ।সেই পুরোনো স্মৃতি দেখার টানে বহু মানুষ ভিড় করে এই মুর্শিদাবাদে। আর
মুর্শিদাবাদে এসেছেন অথচ কলিজা খাকি বেগমের সমাধি দেখেননি এমন মানুষের সংখ্যা বড়ই কম।কিন্তু আমরা এসে যা শুনে যাচ্ছি সব সত্যি তো?আপনি দুটো গল্প শুনতে পাবেন সেখানে
কেও বলবে কলিজা খাকি বেগম এর স্বামী কর্মসূত্রে উড়িষ্যায় থাকতেন। মুর্শিদাবাদে ফিরতেন বহুদিন পরে।ফলে কলিজা খাকি বেগম নাকি তার যৌনসুখ চরিতার্থ করতে প্রতিদিন একজন করে যুবকের সাথে মিলিত হতেন এবং তাকে খুন করে তার কলিজা খেতেন।
আবার কেও বলবে যে বেগম এক দুরারোগ্য ব্যাধি তে আক্রান্ত ছিল এই ব্যাধি নিরাময়য়ের জন্য হাকিম তাকে শিশুর কলিজা খেতে আদেশ দিয়েছেন তাই তিনি প্রতিদিন একটা করে শিশু হত্যা করে তার কলিজা বের করে খেতেন। তো এই একদিন নাকি কলিজা খাকি বেগমের বাবা নবাব মুর্শিদকুলী খাঁন জেনে যান এবং এই অপরাধের শাস্তি স্বরুপ তার কন্যাকে জীবন্ত সমাধিস্ত করেন।
আপনারা অনেকেই হয়ত এইসব গালগল্পে বিশ্বাস করবেন জানি কিন্তু এটাও জেনে রাখুন এগুল শুধুমাত্র গালগল্পই। বাস্তবতার সাথে এর সত্যি কোন যোগাযোগ নেই।
কলিজা খাকি বেগমের আসল নাম আজিম-উন-নিসা বেগুম।তিনি ছিলেন নবাব মুর্শিদকুলী খানের আদরের কন্যা এবং নবাব সুজাউদ্দিনের পত্নী।বেগম ছিলেন খুব মার্জিত স্বভাবের ধর্মপ্রান মহিলা।তিনি আদেও মানুষের কলিজা খেতেন না।আর তাকে জীবন্ত সমাধিও দেওয়া হয়নি।তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল এবং তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে মসজিদের সিঁড়ীর নিচে তার পিতা ও মাতার ন্যায় সমাধিস্ত করা হয়।মসজিদের সিঁড়ীর নীচে সমাধির বিষয়টি নবাব মুর্শিদকুলী খান প্রথম প্রচলন করেন। তার নিজের সামাধিটিও কাটরা মসজিদের সিঁড়ীর নীচে রয়েছে এছাড়া নবাব মুর্শিদকুলীর বেগম এবং আজিমুন্নেশার মা নৌসেরি বানু বেগমের সমাধিও তার নির্মিত মসজিদের সিঁড়ীর নীচে অবস্থিত।পিতা মাতার মতো আজিমুন্নেশা বেগমকেও তারই নির্মিত মসজিদের সিঁড়ীর নিচে সমাধিস্ত করা হয়। কিন্তু ১৮৯৭ এর ভূমিকম্পে মসজিদটি ভেঙে পড়ে। যদিও আজও মসজিদটির একটা দেওয়াল এবং সিঁড়ী সহ সমাধিটি এখনও রয়েগেছে।
কিন্তু কলিজাখাকি নামে তিনি বিখ্যাত হলেন কিভাবে ?
এর অনেক কারণই হতে পারে সম্ভব্য কারণ হিসেবে বলা যায় যে শারীরিক দুর্বলতাহেতু চিকিৎসক বেগমকে ছাগলের মেটে বা কলিজা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আজও চিকিৎসকরা আমাদের এই উপদেশ দিয়ে থাকেন কারণ মেটেতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,ভিটামিন,ও মিনারেলস যা আমাদের শরীরকে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে।
পরবর্তীতে খুব অল্প সময়েই বদলে যায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছেলে সারফারাজ খানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে গিরিয়ার যুদ্ধে হত্যা করা হয়।বাংলার ক্ষমতা চলে যায় আফসার বংশীয়দের হাতে। ফলে নতুন শাসক তার গ্রহন যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পূর্বের শাসকদের বিরুদ্ধে বলবেন এটাই স্বাভাবিক আর তাই হয়ত ছাগলের মেটে হয়ে ওঠে মানুষের কলিজা।
আবার এমনও হতে পারে যে লোকমুখেই ছাগলের কলিজা তিল থেকে তাল হয়ে আজ মানুষের কলিজায় পরিণত হয়েছে।
আবার এটাও হতে পারে ইংরেজ আমলে ইংরেজরা নিজেদের মহৎ ও পূর্বের শাসকদের নিচ প্রমাণ করতে এমন মিথ্যে প্রচার করেছে যাথে আগের শাসকদের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা বাড়ে এবং তারা ইংরেজদের পরিত্রাতা ভাবতে পারে।