কিছু উপায়ে মানসিক চাপ কমানো যায়

নিজস্ব একটি ঘর তৈরি করেছেন, মনের মতন করে সাজিয়ে তুলছেন বিভিন্ন অংশ। শখের পাশাপাশি যা যা প্রয়োজন সবই করছেন শুধু একটা জিনিস ছাড়া, জানালা রাখেন নি। ভাবুন তো একটা বদ্ধ গুমোট ঘরে কেমন লাগবে?

প্রথমে একটু উশখুশ, তারপর অস্থিরতা, অবশেষে দম বন্ধ হয়ে আসছে… তাই তো? আদর্শ ঘর সেটাই যেখানে আলো-হাওয়া চলাচলের সুব্যবস্থা আছে, অর্থাৎ ভেন্টিলেশন সিস্টেম ভাল।

ঘরকে সুস্থ রাখতে না হয় জানালা দরজা তৈরি করলেন, কিন্তু মনের জন্য কী করছেন? মানসিকভাবে সুস্থ থাকতেও প্রয়োজন এই ভেন্টিলেশন। জীবনের কোন না কোন সময়ে আমরা তিক্ত-মধুর নানান ঘটনার সম্মুখীন হই। মনের কোণে জমে রাগ, অপমান, দুঃখ বা অনুশোচনা বোধ। আর আনন্দের কিছু হলে তো কথাই নেই, মন যেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।

যাই ঘটুক না কেন, নিজের মধ্যে না রেখে আপনার কথা ও অনুভূতিগুলোকে যতটা সম্ভব সহজভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। ফলে নিজে নিজেকে আরও ভালভাবে জানতে পারবেন, যা আপনাকে জীবনের বিভিন্ন ধাপে চলতে সাহায্য করবে।

অনেক সময় মনের কথাগুলো প্রকাশ না করতে পারলে আমরা দমবন্ধ অনুভূতিতে ভুগি, মনে হয় বুকের মধ্যে যেন ভারি কিছু চেপে আছে। হাঁসফাঁস লাগে, কি করব বুঝে উঠতে পারি না। তখনই বিশেষ প্রয়োজন “ভেন্টিলেশন”, অর্থাৎ মনে জানালা গুলো খুলে দিয়ে নিজেকে হাল্কা করে নেয়া, মনকে নিঃশ্বাস নিতে দেয়া খোলা পরিবেশে।

শুধু কষ্টের নয়,আনন্দের অনুভূতিগুলো কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন। সুদিনেও পাশে রাখুন সকলকে। তাঁদেরকে জানান ও অনুভব করান যে দুঃসময়ের পর সুসময়েও আপনি কাউকে ভুলে যান নি। তাঁদেরকে বুঝতে দিন আপনার কাছে তারা কতটা মুল্যবান, কতটা আপন! এভাবে আপনি কখনোই জীবনের পথে একা হয়ে যাবেন না, আপনার মনটাও আশ্বস্ত থাকবে।

নিজেকে প্রানখুলে হাসতে দিন। হাসতে পারবেন এমন কোনো উপলক্ষ্য হাতছাড়া করবেন না। আড্ডা হতে শুরু করে কমেডি মুভি দেখা- যা ভালো লাগে তাই করুন। ভালো লাগার হাওয়ার নাচনে তাল মেলান, মেলে দিন পাখনা।

প্রায়ই পরিবার-বন্ধুবান্ধব-সহকর্মীদের সাথে সময় করে কোথাও বেড়িয়ে আসুন। মন খারাপ লাগলে কিংবা একাকীত্ব প্রবল হয়ে উঠলেও বেড়াতে যান। প্রয়োজনে একাই। প্রকৃতির বুকে নিরিবিলি খানিকটা সময়ও মন থেকে মেঘ দূর করতে অত্যন্ত সহায়ক।

কষ্টের বা খারাপ লাগার অনুভূতিগুলোকে বেশি সময় চেপে ধরে রাখবেন না। অসহ্য বোধ হবার আগেই যত সম্ভব প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। কাঁদতে ইচ্ছা হলে কাঁদুন, রাগ করুন, প্রতিবাদ করুন। বের হয়ে যেতে দিন আবেগের স্রোত। কিন্তু চেপে রাখবেন না অনুভূতিগুলোকে।

মনে রাখবেন, সবসময় সকল সমস্যার পুরোপুরি সমাধান পাওয়া নাও যেতে পারে। কিংবা হয়তো সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে আপন কারো সাথে কথা বলার ফলে মনের চাপ কমে যায়, দুঃখ ভাগ করলে বা কাউকে বলতে পারলে মন হালকা লাগে অনেকটাই। আর তা আপনাকে দিবে মানসিক প্রশান্তি।

আমরা অনেক সময় অন্যের কথা চিন্তা করে চুপ হয়ে যাই, মনের মাঝে নিভৃতে কষ্ট পুষি। অথবা তিক্ততার বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে বা ভাবতে চাই না। কিন্তু আপনি যদি একেবারেই এড়িয়ে যান বা একদমই না ভাবলে আপনার ক্ষত শুকাবে না। যা-ই ঘটুক না কেন, একদম সাথে সাথে কোনো সিধান্তে যাবেন না। ঠাণ্ডা মাথায় একটু সময় নিয়ে ভাবুন। দেখবেন কিছুদিন পরেই বিষয়টি নিয়ে আপনি একটু অন্য ভাবে ভাবতে পারছেন আর কষ্টও একটু কম মনে হচ্ছে।

দুশ্চিন্তা বা কষ্টের বিষয় গুলো যতবার বলবেন, তত স্পষ্টভাবে ঘটনাটির বিস্তারিত বুঝতে পারবেন। পর্যালোচনা করতে পারবেন, এর ফলে দূরদৃষ্টিও বাড়বে। নিজের কাছে নিজের অবস্থান স্পষ্ট হবে। প্রয়োজনে নিজেই নিজেকে বলুন, ব্যাখা করুন, যুক্তি দিন।

অন্যের মত কিছু ক্ষেত্রে আপনার মতের সাথে নাও মিলতে পারে। অন্যের মতের উপর শ্রদ্ধা রেখে নিজের মত প্রকাশ করুন। এবং সকলের সব কথাকে মনে চোট হিসাবে লাগতে দিবেন না। জীবন আপনার। কে কী বলল সেটা অনেক পরের ব্যাপার, আপনার ভালো লাগাটাই মুখ্য।

দমবন্ধ অনুভূতি সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো নিজের মধ্যে না রেখে আপনার আস্থার বা বিশ্বস্ত কাউকে জানান। পৃথিবীতে সবাইকে অবিশ্বাস করে বেঁচে থাকা যায় না, কাউকে না কাউকে করতেই হবে বিশ্বাস।

কারো কাছে বলতে না চাইলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে ফেলতে পারেন। কয়েকদিন এভাবে চালিয়ে গেলে ধীরে ধীরে মনে ভেতরের চাপ বোধ কমে আসবে।

নিজস্ব কথাগুলো কোথাও লিখে ফেলতে পারেন। একটা শব্দ বা এক লাইন, দু’লাইন বা পাতা ভরে যতটুকু ইচ্ছা হয় ছোট্ট একটা প্যাডে লিখুন,  তা নিয়ে আপনার অনুভূতি, চিন্তা ইত্যাদি লিখে ফেলুন । মনের উপর থেকে চাপ কমে যাবে।

নিয়মিত ডায়রি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এটি চমৎকার ভেন্টিলেশনের কাজ করে।

অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়। অতিরিক্ত বলা যেমন ভাল নয়, একেবারে চুপ হয়ে যাওয়াও আপনার মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। ভেন্টিলেশন মনের জানলায় সতেজ হাওয়া পৌঁছানোর পাশাপাশি আপনাকে আবার নতুন করে চিন্তা করতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমিয়ে করে তুলবে ফুরফুরে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের কড়া নজর: পর্যালোচনা বৈঠকে অমিত শাহ

মণিপুরের ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল নতুন দিল্লিতে…

5 hours ago

আদিবাসী সমাজের উন্নয়ন: প্রকল্প পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশেষ বৈঠক

আদিবাসী সমাজের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা…

6 hours ago

হাওড়া-ধর্মতলা মেট্রোতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে অপেক্ষার সময়

যাত্রীদের সুবিধার্থে এবং সকাল ও সন্ধ্যার অফিসের ব্যস্ত সময়ে যাত্রী ভিড় সামাল দিতে মেট্রো রেল…

6 hours ago

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

3 days ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

4 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

4 days ago