পৌষ পার্বণ উপলক্ষে উত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামগুলিতে বাড়ছে ঢেঁকির কদর

বিকাশ সাহাঃ    পৌষ পার্বণ উপলক্ষে কালিয়াগঞ্জের গ্রামগুলিতে বাড়ছে ঢেঁকির কদর। “ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বাণে” গ্রাম বাংলার এই প্রবাদবাক্য আজ অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে। কারণ বর্তমান প্রযুক্তির যুগে উন্নততর ধান ভাঙ্গার ও গম পেশায় করার মেশিন গ্রামগঞ্জে চালু হওয়ার পর থেকেই গ্রামের মানুষেরা ঘরের এক কোনে অবহেলায় অনাদরে ফেলে রাখেন ঢেঁকি গুলিকে। ঠিক পৌষ পার্বণের আগে চালের গুঁড়ো তৈরি করতে আবার কয়েক দিনের জন্য ঢেঁকি বের করে ধুয়ে মুছে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়।

ধান ভাঙ্গার বা গম পেশায় করার মেশিন চালুর আগে শহর থেকে গ্রামগঞ্জে ঢেঁকির কদর ছিল গোটা বছর ধরে। গ্রামগঞ্জের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যেত ঢেঁকির ব্যবহার। খাদ্যগুণে পরিপূর্ণ ঢেঁকি ছাঁটা চাল ছাড়া অন্য চাল খাওয়ার কথা কোণও দিনও ভাবতে পারেননি সেকালের মানুষ। অথচ ধান ভাঙ্গার ও গম পেশায় করার মেশিন চালুর পরথেকেই সেই চিত্রটা ক্রমাগত বদলে যেতে থাকে। এই সকল মেশিনে অল্প সময়ের মধ্যে বিনা পরিশ্রমে কয়েক কুইন্টাল ধান থেকে চাল ও গম থেকে আটা তৈরি সম্ভব। ফলে মানুষ দিন দিন ঢেঁকির ব্যবহার থেকে হাত গুটিয়ে নিতে থাকেন। বর্তমান সময়ে গ্রামগঞ্জেও ঢেঁকির দেখা মেলা ভার। এখন গোটা একটি গ্রাম ঘুরে খুব বেশি হলে একটি বা দুটি বাড়িতে ঢেঁকির দেখা মেলে। গোটা বছর ঢেঁকির চল না থাকলেও পৌষ পার্বণের আগে বছরের এই দিন গুলিতে গ্রামে প্রবেশ করলে শোনাযায় ঢেঁকির ঢক ঢক শব্দ।
বাঙ্গালীর বারো মাসে তেরো পার্বণের অন্যতম পৌষ পার্বণ। এই পৌষ পার্বণের দিন রসনাপ্রিয় বাঙ্গালীর পিঠেপুলি তৈরি করা ও খাওয়ার মহাপার্বণ চলে প্রতিটি পড়িবারে। বর্তমানে মিষ্টির দোকান গুলিতে পিঠেপুলি বিক্রি করা হলেও বেশিরভাগ বাড়িতেই অল্প করে হলেও পিঠেপুলি তৈরি করার চল রয়েছে এখনও। পিঠেপুলি তৈরি করতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় আতপ চাল ও সেদ্ধ চালের গুঁড়ো। ফলে এখনও গ্রামগঞ্জে যাদের বাড়িতে ঢেঁকি রয়েছে, সেই সব বাড়িতে গিয়ে চালের গুঁড়ো করতে পৌষ পার্বণের কয়েক দিন আগে থেকে সকাল থেকেই ভিড় জমাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার মহিলারা।
অত্যাধুনিক মেশিনের চালের গুঁড়োর তুলনায় ঢেঁকিতে ভাঙ্গানো চালের গুঁড়ো দিয়ে পিঠেপুলি তৈরি করলে পিঠেপুলির স্বাদের মাত্রা অনেক অনেক বেশি থাকে। সেই সঙ্গে ঢেঁকিতে ভাঙ্গানো চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি পিঠেপুলি ভাজা ও ভাপা করার ক্ষেত্রে আকার ও আকৃতির কোণও পরিবর্তন হয়না বলে মত গ্রামের মহিলাদের। তাই নতুন চাল ঢেঁকিতে গুঁড়ো করে সুস্বাধু পিঠেপুলি ছেলে মেয়েদের মুখে তুলে দিতে শীতের মরশুমে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন গ্রামের মা, মাসিমা, দিদিমারা।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের কড়া নজর: পর্যালোচনা বৈঠকে অমিত শাহ

মণিপুরের ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল নতুন দিল্লিতে…

5 hours ago

আদিবাসী সমাজের উন্নয়ন: প্রকল্প পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশেষ বৈঠক

আদিবাসী সমাজের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা…

5 hours ago

হাওড়া-ধর্মতলা মেট্রোতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে অপেক্ষার সময়

যাত্রীদের সুবিধার্থে এবং সকাল ও সন্ধ্যার অফিসের ব্যস্ত সময়ে যাত্রী ভিড় সামাল দিতে মেট্রো রেল…

5 hours ago

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

3 days ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

4 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

4 days ago