পৌষ পার্বণের আগে মাটির সরা তৈরিতে ব্যস্ত মৃত শিল্পীরা ঃ উত্তর দিনাজপুর


শনিবার,০৯/০১/২০১৬
1609

বিকাশ সাহাঃ    সপ্তাহ খানিক ধরে চরম ব্যস্ততায় নাওয়া খাওয়া প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুর জেলার মৃত শিল্পিরা। বাঙ্গালীর বারো মাসের তেরো পার্বণ। আর এই তেরো পার্বণের অন্যতম পার্বণ হল পৌষ পার্বণ। “মাসিমা মালপো খামু” বাংলা সিনেমায় এই বিখ্যাত প্রবাদ যা বাঙ্গালী বাড়ির অন্দরমহলের অন্তর্নিহিত কথা সেই সময় প্রকাশ পেয়েছিল। সেই সময় শহর থেকে গ্রামে ছিল একান্নবর্তী পড়িবার। ঠাকুর মা, মাসিমা, দিদিমারা প্রতি বছর শীত পড়তেই ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া তৈরি করে রৌদ্রে শুকিয়ে কৌটোযাত করতেন। আর পৌষ পার্বণের দিন গোটা বাড়ি গোবর দিয়ে লেপে সুন্দর সুন্দর আলপনা আঁকতেন সকাল থেকেই। দুপুর হতে না হতেই চালের গুঁড়োর সাথে সাথে চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে পিঠেপুলি তৈরির উপকরণ তৈরি করে ফেলতেন। পৌষ সঙ্ক্ররান্তির দিন সন্ধে হতেই গৃহস্ত বাড়িতে শুরু হয়ে যেত রকমারি পিঠেপুলি বানানোর কাজ। এই পিঠেপুলি তৈরি করতে প্রয়োজন মাটির তৈরি সরা। যা তৈরিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম যাচ্ছেন জেলার মৃত শিল্পিরা। এঁটেল মাটির সাথে প্রয়োজন মত জল মিশিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে সেই মাটিকে মাখিয়ে সরা তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর নরম মাটিকে সাঁচে ফেলে বিভিন্ন আকৃতির সরা তৈরি করা হয়। কোনও সরার নাম এক খুঁটির সরা আবার কোনটা চার খুঁটির সরা। প্রতিটি সরাতে একটি করে মাটির ঢাকনাও তৈরি করেন মৃতশিল্পীরা। যা চলতি ভাষায় ঢাকন নামে পরিচিত। এরপর সেই সরা গুলিকে রৌদ্রে শুকিয়ে আগুনে পোরানো হয়। তারপর সেগুলিকে একটি একটি করে বাছাই করে তা পাইকারি ও খুচরো হিসেবে বিক্রি করা হয়। আকৃতি অনুযায়ী একটি সরা সহ ঢাকনা মিলিয়ে পাইকারি বাজারে ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। খুচরো বাজারে তা ১০ টাকা থেকে ১৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন মৃতশিল্পীরা।
শীতের দিনে হাতে পায়ে কাঁদা জল মেখে এতো খাটনির পরও জেলার মৃত শিল্পীদের মুখ ভার। তাঁদের আক্ষেপ আগের মত আর সরা বিক্রি হয়না। গ্রামগঞ্জেও এখন একান্নবর্তী পড়িবার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। বাড়ির মায়েরা সারাদিন বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজ সারতেই হিমশিম খেয়ে যান। এই অবস্থায় পৌষ পার্বণের দিনে পিঠেপুলি তৈরির বাড়তি ঝামেলা অনেক মায়েরা নিতে চান না। তাঁরা ছেলে মেয়েদের মুখে পৌষ পার্বণের দিনে পুঠেপুলি তুলে দিতে শীতের দিনে হটাত গজিয়ে ওঠা পিঠেপুলির দোকানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। ফলে আগে এক একটি বাড়িতে যেখানে চার, পাঁচ ধরনের সরা বিক্রি করতেন মৃত শিল্পীরা। সেখানে খুব বেশি হলে বাড়ি পিছু একটি থেকে দুটি সরা তাঁরা বিক্রি করতে পাড়ছেন তাঁরা । পৌষ পার্বণের দিনে শীতকালে হটাত গজিয়ে ওঠা পিঠেপুলির দোকান থেকে যারা পিঠেপুলি কেনেন তাঁরা আর মৃতশিল্পীদের কাছ থেকে সরা কেনেন না এমনই কথা শুনা গেল মৃতশিল্পীদের মুখে।
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর সহ প্রতিটি ব্লকের বাজার গুলিতে আগামী কাল থেকেই পুরোদস্তুর বেচাকেনা শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা।
মৃৎশিল্পী লক্ষ্মী পাল, কল্পনা পাল বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সরা, ঢাকন তৈরি করলেও এখন আর আগের মত সরার চাহিদা নেই। তবুও একটু লাভের আশায় আমরা বাড়িতে বসে সরা, ঢাকন বানাই। সেই সরা, ঢাকন আমাদের পরিবারের ছেলেরা বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে। আবার বাড়ি থেকেও পাইকাররা সরা, ঢাকন কিনে নিয়ে যান।
মৃৎশিল্পী দীনেশ পাল, দেবেন্দ্র পাল জানান, মাটির সরা ঢাকন তৈরির বাপ ঠাকুরদার ব্যবসা চালাতে গিয়ে সামান্য উপার্জন হলেও তা আগের তুলনায় অনেক কম। আজকে বিকেলে শেষ পর্যায়ের সরা, ঢাকন গুলি আগুনে পুড়িয়ে কালকে থেকে তা বাজারে বিক্রি করবো। জ্বালানীর দাম ও মাটির দাম বাড়লেও সেই অনুপাতে সরা ঢাকনের দাম তেমন বাড়েনি। DSCN8170

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট