খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ বিশ্ব বঙ্গ শিল্পসম্মেলনে নজর কেড়ে নিল সারা বিশ্ব। পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়ে দেশে বিদেশি শিল্পপতিদের লগ্নির আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে কলকাতার মিলন মেলার অডিটোরিয়ামে শুরু হয়েছে দুই দিনের শিল্প সম্মেলন। ‘বেঙ্গল গ্লোবাল সামিট’ ।
আমেরিকা, চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড তো বটেই, এমনকি ইউরোপ, ফ্রান্স, স্পেন, ব্রিটেনের শিল্পপতি এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি, কয়লামন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, জাহাজ ও সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গাডকারি, রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ব্রিটেনের মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগেদের সামনে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশে শিল্পবিনিয়োগের বৃহৎ বাজার এবং সুন্দর শিল্পবান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পুরানো সম্পকর্কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার আছে। বাংলাদেশে ষাট মিলিয়ন মানুষের বসবাস। যা একটা বড় বাজার। আমাদের গত কয়েক দশকে ছয় শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে শেষ চার বছরে বিভিন্ন অগ্রগতি হয়েছে।যা আগে কয়েক দশকে হয়নি।
বিদেশী শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে তোফায়েল বলেন, পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির পাশাপাশি বাংলাদেশেও শিল্প গড়তে আসুন।আমরা শিল্পের জন্য সারাদেশে একশো স্পেশাল ইকোনমিক জোন তৈরি করছি। এরমধ্যে ত্রিশটি জোন প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে।পাশাপাশি ভারত ও জাপানের জন্য আলাদা করে জায়গা রাখা হয়েছে। আপনারা আসলেই এখানে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে উন্নত অবস্থানে আছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পালনের সময় পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ ৫০ মিলিয়ন ডলার আমেরিকান ডলার আয় করতে পারবো। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পোশাকের শোকেজ হাউজ তৈরি করছি। যেখানে বাংলাদেশের পোশাক রাখা থাকবে।পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশ শোকেজ হাউস তৈরি করবে বাংলাদেশ।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেবাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীকে কাশ্মীরি শাল, বিশ্ববঙ্গ মেলার স্মারক এবং পশ্চিমবঙ্গের দোকড়া শিল্পের কাজ ও বাংলার বিখ্যাত চাল চা উপহার দেন ।
বেঙ্গল সামিটে বাংলাদেশের ৩৫টি শিল্পগোষ্টীর ৪৫জন প্রতিনিধি এসেছেন। যার মধ্যে পোশাক, এনার্জি ও অপ্রচলিত শক্তিতে বিনিয়োগ করবেন। ৩৫ শিল্পগোষ্ঠীর শিল্পপতিরা বিনিয়োগের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বাজার এবং জমি ঘুরে ঘুরে দেখবেন।
ভারতে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল, বিনোদন এবং ট্যারিফ ও ননট্যারিফ আমদানি রফতানি বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের পোষাক শিল্প, প্লাষ্টিক, মেলামাইনের মত বেশ কিছু বিষয়ে ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী-আধিকারীকদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
পাশাপাশি ভারতের শিল্পগোষ্টী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মুকেশ অম্বানি, ভারত হোটেলসের কর্ণধার জোস্না সুরি, টাটা কন্সালটেন্সি সার্ভিসেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও এন চন্দ্রশেখরন , পিরামল এন্টারপ্রাইজের ভাইস -প্রেসিডেন্ট স্বাতী পিরামল, হিরানন্দানি গোষ্ঠীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিরঞ্জন হিরানন্দানি ও গোদরেজ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আদি গোদরেজ, টাটা স্টিলের কর্তা টিভি নরেন্দ্রন, জেএসডব্লিউ স্টিলের কর্তা সজ্জন জিন্দাল, এসেল গোষ্ঠীর কর্তা সুভাষ চন্দ্রদের সঙ্গে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আলোচনার চেষ্টা করা হবে। মতবিনিময় করবো ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবকো, ইংল্যান্ডের মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল এবং তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
এই সম্মেলনের স্বাগত ভাষণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অতি মধুর। এখানে অনেক বাংলাদেশি প্রতিনিধিরাই এসেছেন। হাসিনা দি তোফায়েল আহমেদকে আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন। আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ ও আমাদের সংস্কৃতিও এক। বাংলাদেশের শিল্পপতিরা এই বাংলায় বিনিয়োগ করতে চান৷ এটা আমার কাছে বড় পাওনা৷
তিনি বলেণ, পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য ছাড়াও বাংলাদেশ, ভূটান, নেপাল, মায়ানমার, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যাতায়াত দূরত্ব অনেক কম৷ আর বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ হল শিল্পের ক্ষেত্রে উর্বর ক্ষেত্র৷উত্তরপূর্বের প্রবেশদ্বার হল পশ্চিমবঙ্গ। বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িষ্যার সীমান্তবর্তী রাজ্য হল এই বাংলা। বাংলাদেশ, ভুটান, নেপালেরও প্রবেশদ্বার পশ্চিমবঙ্গ। দিল্লি থেকে কলকাতা যেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে। এই শহর থেকে চেন্নাই যেতে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা। আবার ব্যঙ্কক যেতেও দুই ঘন্টা সময় লাগে। নেপাল, বাংলাদেশ, বুটান যেতে সময় লাগে মাত্র আধাঘন্টা। তাই পশ্চিমবঙ্গ যদি গন্তব্য হয় সেক্ষেত্রে বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িষ্যা, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার তবে আপনারা ব্যবসা বৃদ্ধি করতে পারবেন। আদতে এ্টাই হল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধনী বক্তব্যে আরও বলেন, উন্নয়নের নিরিখে বাংলা এখ দেশে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আপনাদের উপস্থিতি আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। বাংলাই বিনিয়োগের গন্তব্য। কখনও কখনও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে গ্রহণযোগ্যতা গড়ে ওঠে। আর আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতাই আমাদেও ভরসা। গত চার বছওে রাজ্যের মাথাপিছু আয়ে দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। শিল্প গড়তে গেলে দরকার জমি। আর সেই লক্ষ্যেই গত চার বছরে আমাদের রাজ্য সরকার ল্যান্ড ব্যাঙ্ক, জমি ম্যাপ স্থাপন করেছে, সুনির্দিষ্ট শিল্প নীতি, রপ্তানি নীতি, শিল্প সহায়তায় এক জানালা নিতী, কোন সমস্যা হলে এক বাংলাকে বিশ্বাস করুন শিল্প গড়ুন। বাংলায় লগ্নির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে এরাজ্যে প্রায়ই লোডশেডিং হত কিন্তু এখন সেটা দেখাই যায় না। সুলভে দক্ষ শ্রমিক আছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আছে।পশ্চিমবঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিরাজ করছে। এখানে কোন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনা নেই। কেউ কেউ রাজনীতির খাতিরে এই অভিযোগ করেন কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ আদালা বিষয়। আমরা এখানে কোন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে প্রশয় দিই না। আমরা বিশ্বাস করি যে শান্তি থাকলেই সবকিছু ঠিক থাকবে।
বাংলাদেশসহ দেশ -বিদেশের ২০০০ শিল্প প্রতিনিধিরা দুদিনের এই শিল্প সম্মেলমনে অংশ নিয়েছেন৷ বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ব্রিটেনের মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি দেশের বণিকসভার শীর্ষকর্তারা
এই সম্মেলনে থাকায় বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মিলনক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে৷ শুক্রবার এই শিল্প সম্মেলন শুরু হলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সেজে উঠেছে কলকাতা। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার ইকোপার্কে এক নৈশ ভোজের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় শিল্পসম্মেলনের আনন্দঘন পরিবেশ ।