খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ ভূমিকম্প হলে অনেকেই দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এটা মোটেও উচিৎ নয়। কারণ, এই অহেতুক ছোটাছুটি অনেক সময় আরও বেশি বিপদ হয়ে দেখা দেয়। তাই ভূমিকম্পকালে দিশেহারা ছোটাছুটি না করে মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বাঁচান।রেডক্রসের পরামর্শ মতে, ভূমিকম্পের সময় ‘ড্রপ’ ‘কাভার’ ‘হোল্ড অন’ পদ্ধতি আত্মরক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায়। এতে তিনটা বিষয় মাথায় রাখবেন। এক. কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন (ড্রপ), দুই. কোনো শক্ত টেবিল, ডেস্ক বা নিচে জায়গা আছে এমন শক্ত ও দৃঢ় আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন (কাভার)। তিন. গুটিশুটি হয়ে বসে থাকুন (হোল্ড অন)।
এই আত্মরক্ষা পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে বেশি কার্যকর। সেখানে ভবন পুরো ধসের পড়ার চেয়ে আংশিক ধসে বা আসবাবপত্র পড়ে আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যদি মনে করেন ভবন নির্মাণে ভূমিকম্পের বিষয়টি অবহেলা করা হয়েছে, সম্ভব হলে দ্রুত ভবন থেকে বেরিয়ে পড়ুন। লিফট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ ভূমিকম্পের পর পরই আবারও কম্পন হতে পারে, যাকে বলা হয় ‘আফটার শক’ বা পরাঘাত। ঘটতে পারে বিদ্যুৎ বিপর্যয়। তখন লিফট হয়ে উঠবে মরণফাঁদ। তাই বেরিয়ে আসতে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। ভুল করেও সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। ভবন ধসে পড়লে সবার আগে সিঁড়ি ধসে পড়ার শঙ্কাই বেশি। তাড়াহুড়ো করবেন না। যথাসম্ভব মাথা ঠান্ডা রাখুন।
দেখা গেছে, ভূমিকম্পের আতঙ্ক থেকে হুট করে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া, তাড়াহুড়ো করতে দিয়ে আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটে।
ভবন ধসে পড়ার সময় ছাদ ধসে পড়লে সেটা যার ওপরে পড়ে, ঠিক তার পাশে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। একে বলা হয় ‘সেফটি জোন’। তাই ভূমিকম্পের সময় সোফা বা এ ধরনের বড় শক্তিশালী আসবাবের পাশে গুটিশুটি মেরে বসে থাকুন।
ভবনের এমন কোনো দেয়ালের পাশেও আশ্রয় নিতে পারেন, যে দেয়ালটি বাইরের দিকে। যেন সেই একটি দেয়াল ভেঙে আপনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। আশ্রয় নেওয়ার সময় মাথার ওপর এক বা একাধিক বালিশ নিয়ে রাখবেন। মাথার চোট বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ঘরের কোণে এবং কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিতে পারেন। নির্মাণের দিক দিয়ে এগুলো তুলনামূলক বেশি মজবুত হয়।
আধা পাকা বা টিন দিয়ে তৈরি ঘর থেকে বের হতে না পারলে শক্ত খাট বা চৌকির নিচে আশ্রয় নিন।
ভবনের উঁচু তলার দিকে থাকলে কিংবা ভূমিকম্প রাতে হলে দ্রুত বের হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভবনের ভেতরে আশ্রয় নেওয়ার ওপরের পরামর্শগুলো মেনে চলুন।
গাড়িতে থাকলে যথাসম্ভব নিরাপদ স্থানে থাকুন। আশপাশে বড় ভবন নেই এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করুন। কখনো সেতুর ওপর গাড়ি থামাবেন না।
ভূমিকম্পের পর পরই গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগগুলো পরীক্ষা করে নিন। ভূমিকম্পের ফলে এসব সংযোগে সমস্যা হতে পারে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের প্রধান সংযোগগুলো বন্ধ করে দিন। কোথাও কোনো লিক বা ক্ষতি দেখলে আগে মেরামতের উপায় খুঁজুন।
টাকা বা অলঙ্কারের মতো কোনো কিছু সঙ্গে নেওয়ার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবেন না। অধিকাংশ ভূমিকম্প মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ভয়ংকর সর্বনাশ ঘটিয়ে দেয়।
বড় ভূমিকম্পের পর পরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প (আফটার শক) হয়। তাই একবার ভূমিকম্প থেমে গেলেই নিশ্চিত হবেন না। বরং সতর্ক থাকুন।
যদি ভবন ধসে আটকা পড়েন, বেরিয়ে আসার কোনো পথ খুঁজে না পান, আশা হারাবেন না। সাহস রাখুন। সাহস আর আশাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।