বিকাশ সাহাঃ জেলা প্রশাসন ও বিএসএফ এর অনুমতির পরোয়া না করে মিলন মেলায় সামিল হলেন কয়েক হাজার মানুষ। এই মিলন মেলা “কাঁদাকাঁদির” মেলা বলেই পরিচিত স্থানীয় মানুষদের কাছে। এদিন শুক্রবার উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের ১ নম্বর চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মকরহাট গ্রামের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে এমনই মিলন মেলা দেখা গেল। শতবর্ষ প্রাচীন এক কালী পূজোকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও এই মিলন মেলার আয়োজন হয়। অবিভক্ত বাংলার দিনাজপুর জেলার এই গ্রামে মহাসমোরহে কালী পূজো করা হত। বর্তমানে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে এই পূজো নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। দেশ ভাগের আগে এমনকি এখনও কৌশিকী আমাবস্যার পর একটি নির্দিষ্ট তিথি দেখে এই কালী পূজো হয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার রাতে এই কালী পূজো হয়েছিল। এই পূজোকে কেন্দ্র করে দেশ ভাগের আগেও মেলা হতো এখনও মেলা হয়। বাংলাদেশের সাথে সাথে কাঁটাতারের এপারেও বসে বিশাল মেলা। দেশ ভাগ হয়ে যাবার ফলে কাঁটাতারের বাঁধন পড়েছে। ফলে বাড়ির পাশে থাকা আত্মীয়ের সঙ্গে সর্বক্ষণের সাক্ষাতেও বাঁধন পড়েছে। কিন্তু এই পূজোকে কেন্দ্র করে মেলার দিন নিজের আত্মীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ কেউ হাতছাড়া করতে রাজী নয়। তাইতো শুধু হেমতাবাদ ব্লক নয় গোটা উত্তর দিনাজপুর জেলা, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি ব্লক, বিহার ও শিলিগুড়ি থেকেও প্রচুর লোকের সমাগম হয় এই মকরহাটে। কেউ কেউ আগের দিন এসে আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে গেছেন। কেউবা গাড়ী ভাড়া করে চলে এসেছেন কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকা দিয়ে শুধু একবার ওপার বাংলায় থাকা নিকট আত্মীয়ের মুখ দর্শন করবেন বলে। গোটা দিন অপেক্ষা করার পর শেষ বিকেলে সামান্য সময়ের জন্য এপার ওপার বাংলার মানুষ দু দিকের কাঁটাতার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সামনে থাকা আত্মীয় পরিজনের সাথে চিৎকার করে কথা বলতে বলতে চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলেন না। আত্মীয় পরিজনদের কথা ও কান্নার রোল বেশ কয়েক কিলোমিটার দুর থেকে শোনা যাচ্ছিল। এখানে যারা আসেন তাঁরা সবাই কেঁদে বাড়ি ফেরেন সেই কারণে এই মেলাকে “কাঁদাকাঁদির” মেলা বলে এলাকায় বিশেষ ভাবে পরিচিত। সেই সঙ্গে আত্মীয় পরিজনদের জন্য আনা উপহার কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে একে অপরের উদ্দেশে ছুড়ে দেয়। এক জন বয়স্ক মহিলাকে দেখা গেল একটি বোতলে দুধ ভরে এনেছেন তাঁর মেয়ে থাকে এপার ভারতে। বোতলটি ছুড়ে দিয়ে বলল মা আমাদের লালা গরুটা বাচ্চা দিয়েছে। সেই গরুর দুধ । তোরা খাস। যদিও বেআইনি ভাবে কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে উপহার ছুড়ে দেওয়ার যে প্রথা চলেছে তাতে করে অনেকের মনেই সংশয় জাগে। প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে কাঁটাতারের বেড়ার ওপার ও এপার মিলিয়ে এদিন প্রায় ২৮ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল।
অনুমতি না থাকলেও মকরহাট সীমান্তে এই মিলন মেলায় আগত মানুষদের স্বার্থে হেমাতাবাদ থানার পুলিশ ও বিএসএফ অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছিলো।
হেমতাবাদে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে মিলন মেলা
শুক্রবার,০৪/১২/২০১৫
852