খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ শিল্পপতি ও চিত্রতারকার বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর সরকার প্রতিহিংসা মূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার কাছে খবর আসছে, বেশ কিছু শিল্পপতি, ব্যবসায়ী এবং চিত্রতারকার পিছনে প্রতিহিংসাবশত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), সিবিআই-কে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা ভারত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যা পরিস্থিতি, তাঁরা মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছেন না।’’
মমতা আচমকা কেন এমন মন্তব্য করলেন, তা নিয়ে দল এবং প্রশাসনের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। অন্য দিকে দিল্লির তরফে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, প্রতিহিংসামূলক ভাবে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধেই কিছু করা হচ্ছে না। যা পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সবই আইন মোতাবেক। সারদা-রোজ ভ্যালি থেকে শুরু করে একাধিক অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের নাম জড়িয়েছে। এক মন্ত্রী এবং এক সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ তো এখনও জেলে। সিবিআই এবং ইডি-র জেরার মুখে পড়েছেন আরও কেউ কেউ। মমতা ঘনিষ্ঠ দলের এক শীর্ষ নেতা মনে করছেন— দলনেত্রীর এমন ‘হুঙ্কার’ ওই অভিযুক্তদের ‘ছায়া’ দিতে।
অন্য দিকে, ‘নাইট রাইডার্স প্রাইভেট লিমিটেড’-এর শেয়ার কেনাবেচায় অনিয়মের অভিযোগে দিন কয়েক আগেই শাহরুখ খানকে সমন পাঠিয়েছে ইডি। রাজ্য সরকারের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ শাহরুখকে কেন্দ্রীয় সংস্থা তলব করায় ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই নবান্নের শীর্ষ আমলারা অনেকেই মনে করছেন, পাল্টা চাপ দিতেই ওই মন্তব্য মমতার।
উল্টে সিন্ডিকেট আর তোলাবাজির দাপটে রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছেন বহু শিল্পপতি। সেই ব্যর্থতা আড়াল করতেই মমতা কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এ রাজ্যে বিজেপির একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য সরাসরিই বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুঁজির বিদায় অব্যাহত। নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এখন উনি (মুখ্যমন্ত্রী) কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করছেন।’’
সরকারি ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, সিবিআই বা ইডি-কে কাজে লাগিয়ে প্রতিহিংসা নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। আবার উল্টো দিকে কোনও অভিযোগকে লঘু করে দেখারও কোনও কারণই নেই। কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলে, সে তিনি যত বিশিষ্ট ব্যক্তিই হোন না কেন, নিয়মমাফিক তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত করার অর্থ কাউকে ভয় দেখানো বা হেনস্থা করা নয়।
অর্থ মন্ত্রকের এই দাবিরই প্রতিধ্বনি করে শমীকবাবুর বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীর সরকার কেন সংস্কারে আরও গতি আনছে না, তা নিয়ে শিল্প-বাণিজ্য মহলের কিছু অনুযোগ অবশ্যই আছে। কিন্তু দিল্লির সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ এমন অভিযোগ কোনও শিল্পপতিই করেন না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এটা একটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবৃতি। এর সঙ্গে দেশের শিল্প-বাণিজ্য সংক্রান্ত বাস্তব তথ্যের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
এ দিন মেদিনীপুরে দলীয় বৈঠকে এসে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও বলেন, ‘‘২০১৬ সালে গদি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত মুখ্যমন্ত্রী। তাই অযাচিত ভাবে কখনও বিহারের ভোট নিয়ে, কখনও অন্য লগ্নি নিয়ে আলটপকা মন্তব্য করছেন।’’ আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি-র সঙ্গে নকল যুদ্ধ করতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ সব কথা বলছেন।’’ তাঁর কটাক্ষ, লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ভোট ভাগাভাগির খেলা’র জন্য অনেক কিছু বলেছিলেন।