বিকাশ সাহাঃ একটা সময় ছিল দিনাজপুর রাজবাড়িতে সপ্তমীতে কামানের গোলা ফাটিয়ে সূচনা হত দূর্গাপূজোর। সেই কামানের গগনভেদী শব্দ যখন এসে পৌঁছত রাধিকাপুরের মানুষের কানে, তখনই বর্তমান উত্তর দিনাজপুর জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম রাধিকাপুরের উদগ্রামে শুরু হত ৫০০ বছরের বেশি পুরানো দেবীর বোধনপর্ব। আজ সেই সব শুধুই ইতিহাস। আজ আর রাজা নেই, নেই রাজপাটও। কিন্তু আজ যা আছে তা বিভাজিত দুই বঙ্গের সীমান্ত চিহ্নিত করণে কাঁটাতারের বেড়া। ভারত বাংলাদেশ বিভাজনের পর এই রাধিকাপুরের উদগ্রামের দূর্গা মন্দিরের নামে থাকা চল্লিশ বিঘা জমিও চলে গিয়েছে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বর্তমান বাংলাদেশে। আর এপারে রয়েছে দেবী মন্দির এবং মন্দির সংলগ্ন ১৩ বিঘা কৃষিজমি। কিন্তু দুই বঙ্গের বিভাজন উদগ্রামের দূর্গা পূজোয় কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি আজও। আজও নিষ্ঠাভরে গ্রামবাসীদের দ্বারা উদগ্রামের মন্দিরে পুজিত হয় দেবী দশভুজা। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াজাল তৈরি করলেও আজও শারদীয়া উৎসবে উদগ্রামের পূজাকে ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনার কোনও ঘারতি নেই দুই বাংলার মানুষের মধ্যে। তাই প্রতি বছর সপ্তমীর সকালে সেই ছবিই দেখা যায় দুই বাংলার মানুষের মহামিলনের মধ্যদিয়ে। কাঁটাতারের বেড়া ওপার বাংলার মানুষের কাছে কোনও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। এমনকি যখন সাধারণ মানুষ পূজো দেখতে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরতে যায়, তখন এই উদগ্রামের লোকেরা গ্রাম ছেড়ে কেউ পূজো দেখতে বাইরে যায়না। পূজোর চারদিন গোটা গ্রাম ধরে প্রতিটি বাড়িতে চলে নিরামিশ খাওয়া। বছরের অন্যান্য সময়ে বিয়ে কিংবা অন্যকোন শুভ কাজে মায়ের মন্দিরে এসে আশীর্বাদ না নেওয়া পর্যন্ত শুভকাজ সম্পূর্ণ হয় না। এই পূজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষ যে যেখানে থাকুকনা কেন পূজোর সময় সকলে গ্রামে ফিরে আসে। বংশপরম্পরায় একই মৃত শিল্পীর পড়িবার উদগ্রামের প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। প্রাচীন এই পূজোকে কেন্দ্র করে উদগ্রামে এখন সাজোসাজো রব।
রাধিকাপুরের উদগ্রামে ৫০০ বছরের বেশি পুরানো দেবীর বোধনপর্ব শুরু হত কামানের গোলার শব্দে
শুক্রবার,১৬/১০/২০১৫
699