পরকীয়া বাড়ার কারণ…

খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ    পরকীয়া সমাজের একেবারে নতুন উপাদান নয়। তবে বিশেষত বাংলাদেশের সমাজে এ ধরনের সম্পর্ক এতোটা সর্বগ্রাসী আগে কখনোই ছিল না। কিন্তু কেন বাড়ছে পরকীয়া? সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন এগিয়ে যাচ্ছে নারী। মেশার সুবিধার কারণে অনেক সময় নারী-পুরুষের বন্ধুতা

থেকে শুরু হয় পরকীয়ার। তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধার কারণেও এই ধরনের অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়কেও একটি বড় কারণ মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। ভিনদেশী টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ছাড়াও ইদানীং দেশে তৈরি অনেক নাটক-সিনেমাতেও পরকীয়াকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরকীয়ার কারণে পরিবার ভেঙে যায়। পারিবারিক ও সামাজিক সুখ নষ্ট হয়। একটি সমাজকে নষ্ট করে দেয়ার জন্য পরকীয়া বিষাক্ত ভাইরাসের মতোই কাজ করে বলে তারা মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী বলেন, আগে স্বামীকে খুশি রাখতে স্ত্রীরা ব্যস্ত থাকতেন। নারীরা সাধারণত তখন গৃহবধূ হিসেবেই ছিলেন। পুরুষের সঙ্গে সেভাবে মেলামেশার সুযোগ প্রায় ছিলো না। তবে পরকীয়া তখনও ছিলো। কিন্তু আধুনিকায়নের ফলে পরকীয়া বেড়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৮ ভাগ নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণই হচ্ছে পরকীয়া। গণমাধ্যমের কারণে এখন পরকীয়ার বিষয়টি জানা যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। পরকীয়া বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নারীরা এখন শিক্ষিত হচ্ছেন। নানা পেশায় পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। নারী-পুরুষ কাছাকাছি আসার কারণেই পরকীয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সেইসঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধাতো রয়েছেই। নারীরা এগিয়ে যাক-এটা সকলের চাওয়া।

তাই বলে নিজের নৈতিকতা-শালীনতা বিসর্জন দিয়ে তা হতে পারে না। এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন অধ্যাপক মাসুদা। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তখন ওই সংগঠনের পরিচালক। তখন দেখেছি ব্যবসা করার জন্য ব্যবসায়ী নেতা-পরিচালকদের সঙ্গে কিছু নারী যে আচরণ করতেন তা কোনভাবেই ভদ্রসমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এরকম অনেক ক্ষেত্রেই স্বার্থের কারণে এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে যান অনেকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে বিপদে পড়ে পরকীয়ায় জড়ান নারীরা। অনেক ক্ষেত্রে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন তারা। এছাড়া, অনেকেই এটাকে কোন অপরাধ মনে করেন না। যে কারণে বহুগামিতা বাড়ছে। এ জন্য এটাকে নৈতিক শিক্ষার অভাব বলে মনে করেন তিনি।

এছাড়া, ভিনদেশী সংস্কৃতি অনুসরণ-অনুকরণকে দায়ী করে অধ্যাপক মাসুদা বলেন, স্যাটেলাইটের কারণে সহজেই ভিনদেশী সংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে। এর নেতিবাচক দিক অনুসরণ-অনুকরণ করা কোনভাবেই ঠিক না। গত ঈদে পাখি জামার প্রসঙ্গ তোলে ধরে তিনি বলেন, পাখি জামা না পেয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করলো। এর চেয়ে খারাপ কি হতে পারে। তাদের পোশাক আর আমাদের পোশাকতো একই রকম না। তাদের সংস্কৃতি আর আমাদের সংস্কৃতি একই রকম না। এ জন্য পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। নৈতিক শিক্ষা দিয়ে সন্তানদের বড় করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে পরকীয়া বাড়বে। সংসার ভাঙনের হারও বাড়বে। পরিবার প্রথা আমাদের ঐতিহ্য-অহংকার। এই পরিবার প্রথাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির বলেন, মানুষ সহজাত প্রবৃত্তির পক্ষে। ক্রমান্বয়ে লজ্জা কমে যাচ্ছে। যে কারণে মানুষের বৈচিত্র্যময় গোপন ইচ্ছেগুলো সহজে প্রকাশ পাচ্ছে। অতীতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একসময় ডিভোর্স ছিলো খুব লজ্জার। কারও ডিভোর্স হলে তা গোপন রাখা হতো। যুগের পরিবর্তনে এখন অহরহ ডিভোর্স হচ্ছে। এতে কারও লজ্জা হচ্ছে না। একইভাবে পরকীয়াকে অনেকে সমর্থন করছেন। কিন্তু সমাজের জন্য তা  কোনভাবেই ভালো হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির বলেন, উন্নত বিশ্বের আধুনিকায়নের পার্শ¦প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আমাদের দেশের পরকীয়া সম্পর্ক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মূল্যবোধের পরিবর্তন হচ্ছে। আগে শিশুদের যেভাবে শিক্ষা দেয়া হতো এখন সেভাবে দেয়া হচ্ছে না।

এখন ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রাধান্য পাচ্ছে। নারী-পুরুষ সবাই কমবেশি শিক্ষিত হচ্ছে। স্বনির্ভর হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করছেন তারা। এসব কারণেই পরকীয়া বাড়ছে বলে মনে করেন এই শিক্ষক। এসব থেকে সমাজকে মুক্ত করতে ব্যক্তি সচেতনতা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, চাই চাই ভাবের চেয়ে কার্যক্রমে সংযম থাকতে হবে। সন্তানরা যেন অনৈতিক দিকে পা না বাড়ায় সেভাবেই তাদের শিক্ষা দিতে হবে। নতুবা বিশৃঙ্খলা-অশান্তির আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস মনে করেন পরকীয়াতে লজ্জার কিছু নেই। তিনি বলেন, মানসিক শান্তি-স্বস্তির জন্যই পরকীয়া মেনে নেয়া প্রয়োজন।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

4 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

4 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

4 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

4 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

4 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

4 days ago