প্রশান্ত কুন্ডু, বাংলাদেশ প্রতিনিধিঃ
নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও থেমে নেই জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের তৎপরতা। উপরন্ত বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের স্বপ্ন দেখছে তারা। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষের মানুষজনও জঙ্গী সংগঠনগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ৪সেপ্টেম্বর সারাদেশে ডিজিটাল ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। এমন মহাপরিকল্পনা এসেছে গাজীপুরের কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটিজেলেবন্দী জঙ্গী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মাথা থেকে। আর পুরো প্রক্রিয়াটির নেপথ্যে কাজ করছে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত একটি ইসলামী দল ওবিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের কারাবন্দী শীর্ষ নেতারা। সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত হিযুবত তাহরীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং অনুসন্ধানে মিলেছে এমনতথ্য। বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষের সকল মানুষ ও সংগঠনকে একত্রিত করতে চায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুততাহরীর। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষে কি পরিমাণ মানুষ আগ্রহী, সে সম্পর্কে ধারণা পেতেই এমন আয়োজন করেছে সংগঠনটি।এটিকে সংগঠনের তরফ থেকে আগাম টেস্টকেস বলা হচ্ছে। আরব বসন্ত ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির ধারণা থেকেই এমন উদ্যোগনিয়েছে জঙ্গী সংগঠনটি।
এমন তথ্য মিলেছে গত ২৩ আগস্ট রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে গ্রেফতারকৃত দুই হিযবুত তাহরীর সদস্যের কাছ থেকেও। তাদের ২ দিনেররিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। দক্ষিণখান থানাধীন আইনুসবাগ শাহী মসজিদের সামনে থেকে ডিজিটালভিডিও কনফারেন্সের পক্ষে প্রচারপত্র বিলির সময় গ্রেফতার হয় আলতামাস আহম্মেদ বাবু (৩২) ও সৈয়দ জানে আলম রুবেল (৩০)। একজনপালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পালিয়ে যাওয়া ওই হিযুবত নেতা পেশায় একজন নামকরা চিকিৎসক। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণজিহাদী বই, রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী এবং বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র করার পক্ষের স্লোগান সংবলিত লিফলেট, সংগঠনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়প্রকাশিত ম্যাগাজিন উদ্ধার হয়।
গত সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান,গ্রেফতারকৃতরা দক্ষিণখান থানা এলাকায় বসবাস করত। তারা লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, শ্রমিক ওসাধারণ মানুষের মধ্যে রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে আসছিল। ক্ষমতাসীন সরকার উৎখাত বা ক্ষমতাচ্যুত করেখিলাফত রাষ্ট্র (ইসলামী রাষ্ট্র) গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছিল। এজন্য তারা উস্কানিমূলক প্রচার চালাচ্ছিল। মূলত বাংলাদেশকে খিলাফত রাষ্ট্রগঠনের পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করছিল গ্রেফতারকৃতরা।
প্রচারপত্রে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর জঙ্গী সংগঠনটির তরফ থেকে সারাদেশে ডিজিটাল ভিডিও কনফারেন্সের ডাক দেয়া হয়েছে। ভিডিওকনফারেন্সের জন্য তারা একটি প্যানেল গঠন করেছে। ভিডিও কনফারেন্সে প্রশ্ন কর্তার প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
ডিবির উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহফুজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা ব্যবসায়ী। ব্যবসা করে সংগঠনকেনিয়মিত চাঁদা দেয়ার পাশাপাশি নিজেরাও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছিল। লিফলেট বিতরণ, কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ভিডিও কনফারেন্সেরবিষয়ে প্রচার চালানো থেকে শুরু করে নানা কাজে জড়িত গ্রেফতারকৃতরা। তারা প্রশিক্ষিত।
তবে জঙ্গী দমনে কঠোর রয়েছেন শেখ হাসিনা সরকার। ডিবির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মিসরে আরব বসন্তের মাধ্যমে সরকারকেক্ষমতাচ্যুত করা এবং বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের জন্ম হয়। দুটি ঘটনাই ঘটে আদর্শকে সামনে রেখে।এমন ঘটনার পর হিযবুত তাহরীর সারাদেশে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার কৌশল নেয়। আদর্শকে সামনে রেখে যদি গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টিহতে পারে, তাহলে ধর্মকে সামনে রেখে কেন বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষে জনমত গড়া যাবে না? এমন ধারণা থেকেইকারাবন্দী হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতারা নতুন করে দলকে সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এমন সিদ্ধান্তের বিষয়টি হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা ও একইবিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ অন্য জঙ্গী নেতাদের সঙ্গে নানাভাবে আলোচনা করেন। এমনকি হিযবুততাহরীরের কারাবন্দী ও কারামুক্ত নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন। এরপরই শীর্ষ নেতারা হিযবুত তাহরীরের নেতাকর্মীদের কাছে এমননির্দেশনা পাঠিয়ে দেয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকেই কাজ করছে হিযবুত।
প্রসঙ্গত, এদিন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের পরিবর্তে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতেশাহবাগে অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্টদের মাধ্যমে গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয়। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ স্বল্প সময়ের মধ্যেই স্থায়ী রূপলাভ করে।যদিও এরজন্য অনেক আগ থেকেই অনলাইন এক্টিভিষ্টরা কাজ করছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চের ধারণাকে পূঁজি করেই এগুতে থাকে হিযবুততাহরীর।
তারাও গোপনে দেশের প্রতিটি বিভাগে কমিটি গঠন করে। বিভাগীয় পর্যায়ে শক্ত কমিটি রয়েছে হিযবুত তাহরীরের। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। বিশেষপ্রাধান্য পায় ঢাকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে হিযবুত তাহরীরের কলেজ পর্যায়ে কোন কমিটি গঠন করেনি। গঠন করারপ্রয়োজনীয়তাও অনূভব করে না। ভবিষ্যতে তারা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে।
ইতোমধ্যেই জেলাগুলোতেও কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জেলা সদরের বিষয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। তবে থানাপর্যায়ে সংগঠনটির তেমন কোন তৎপরতা নেই। এমনকি কোন কমিটিও গঠিত হয়নি। তবে বিষয়টি আলোচনার মধ্যে রয়েছে। ২০১৩ সালথেকে সারাদেশে সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে হিযবুত তাহরীর। মোটামুটি একটি সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করিয়েছে। সেইকাঠামোর উপর ভিত্তি করেই হিযবুত তাহরীর ডিজিটাল কনফারেন্সের ডাক দিয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটির নেপথ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিতবিশেষ ইসলামী দলটি। এছাড়া অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে জেএমবির সঙ্গে খানিকটা যোগাযোগ রয়েছে সংগঠনটির।
হিযবুত তাহরীরের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আসছে স্বাধীনতাবিরোধী ও উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী কতিপয় গোষ্ঠীর কাছ থেকে। এর সঙ্গে দেশী-বিদেশী কয়েকটি এনজিও।