খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ সাবেকি খেলা কাবাডি অনেকটা হঠাৎ করেই আবার জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছেছে – যার পেছনে বিরাট অবদান আছে গত মরশুমে চালু হওয়া দেশের প্রথম পেশাদার কাবাডি লীগের।
শনিবার রাতে এই প্রো-কাবাডি লীগের দ্বিতীয় মরশুমের সূচনা হল মুম্বাইয়ে – যাতে বলিউডের প্রথম সারির তারকারা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন এই টুর্নামেন্টের স্পন্সর কর্পোরেট জগতের দিকপালরাও।
এখন কাবাডি খেলোয়াড়রা যেন রাতারাতি তারকায় পরিণত হয়েছেন, ক্রিকেট-পাগল টিভির সামনে ভিড় করে কাবাডি ম্যাচ দেখছেন!
সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন নিজের গলায় গেয়েছেন টুর্নামেন্টের থিম সং – আমির খান, আইশরিয়া রাইয়ের মতো বলিউড-তারকারা নিজেরাই চিয়ারলিডার হয়ে প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটাচ্ছেন।
স্টেডিয়ামে একটাও সিট ফাঁকা নেই – আর টিভির সামনে উপচে পড়া ভিড়, বিজ্ঞাপনদাতা আর স্পন্সরদের হুড়োহুড়ি।
ক্রিকেটকে নিয়ে এতকাল যে দৃশ্যগুলো দেখা যেত – এখন অবিকল যেন সেটারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কাবাডিকে ঘিরে।
এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী অনুপ কুমার দলে খেলছেন দশ বছর ধরে ; কিন্তু এতদিন লোকে তাকে রাস্তায় চিনতে পারত না – কিন্তু এখন তাকে ঘিরে অটোগ্রাফের জন্য ভিড় জমে যায়।
অনুপ কুমার চাকরি করেন হরিয়ানা পুলিশে – এবং আজকাল পুলিশের উর্দিতেই হোক কি সাদা পোশাকে, লোকে ঠিক ইউ মুম্বা কাবাডি দলের ক্যাপ্টেনকে চিনতে পারে, এসে বলে আপনি দারুণ খেলছেন।
ক্রীড়া সাংবাদিক জয়ন্ত চক্রবর্তী কাবাডির এই পুনর্জন্মের জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন কর্পোরেট দুনিয়া আর বলিউড জগতকেই, যারা এর মধ্যে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনাটা টের পেয়েছিলেন।
মি চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘আগে এ দেশের কাবাডি খেলোয়াড়রা বড়জোর রেল বা ওরকম কোনও সরকারি সংস্থায় একটা সামান্য চাকরির লক্ষ্যেই কাবাডি খেলতেন। কিন্তু গত বছর প্রো-কাবাডি লীগে এক একজন খেলোয়াড় ফি-ই পেয়েছেন পনেরো লাখ টাকা বেশি, যা কিছুদিন আগে অকল্পনীয় ছিল।”
কিন্তু কাবাডির মতো প্রায় ভুলতে-বসা একটা খেলাকে সাধারণ মানুষ আবার কীভাবে আচমকা আঁকড়ে ধরল?
এর উত্তরও সহজ, আইপিএলের ফর্ম্যাট আর টেলিভিশনের জাদু।
জয়ন্ত চক্রবর্তী বলছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় চ্যানেল নাইনের মালিক কেরি প্যাকার যেমন ক্রিকেটকে একটা সফল টেলিভিশন শো-তে পরিণত করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই প্রো কাবাডি লীগ এই খেলাটাকেও দারুণভাবে টেলিভিশন শো করে তুলেছে।
বস্তুত গত বছর যখন প্রথম কাবাডি লীগ হয়, ব্রাজিলে তখন চলছিল ফুটবল বিশ্বকাপ। টেলিভিশনে কাবাডির টিআরপি কিন্তু অনেক সময় ছাপিয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপকেও।
আর সেই কারণেই অভিষেক বচ্চনের মতো তারকা এ বছর সগর্বে বলতে পারছেন জয়পুর প্যান্থার্সের মতো দলে টাকা ঢেলে তিনি কোনও ভুল করেননি।
এশিয়ান গেমসে ১৯৯০ সালে কাবাডি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। কিন্তু সাত-সাতটা স্বর্ণপদক যে খেলার ভোল ফেরাতে পারেনি, মাত্র
এক বছর বয়সী একটা পেশাদারি লীগের হাত ধরেই প্রাচীন এই খেলাটা আবার যেন নবীন রূপে ভারতে আবির্ভূত হয়েছে।সূত্র -বিবিসি