খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ জবরদখল কারীদের হটানোর আইন আনতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য চেয়েছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লাহ। কিন্তু তার তীব্র বিরোধিতা করছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে জবরদখলকারীদের সরানো যথেষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়। দিল্লিতে বসে কেন্দ্র ফরমান জারি করলেই রাজ্য সরকারের পক্ষে জবরদখল ওঠানো সম্ভব নয়। এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে এগোনো দরকার।
কোথায় আপত্তি মমতার? রাজ্যের মন্ত্রী ও শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে আলোচনার পরে মমতার মত, জবরদখলের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। ওয়াকফ সম্পত্তিতে শুধু যে মুসলমান জবরদখলকারীরা রয়েছেন, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুরাও রয়েছেন। এ বিষয়ে বহু মামলা ঝুলে রয়েছে। কারা বেআইনি দখলকারী, তা চিহ্নিত করতে হবে। সে জন্য যথেষ্ট ‘হোমওয়ার্ক’ দরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের ফরমান মেনে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত জমি থেকে দখলকারীদের রাজ্য প্রশাসন গিয়ে সরিয়ে দিল, ব্যাপারটা এত সহজ নয়।
ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে বেআইনি দখলকারীদের হটানোর বিষয়ে মনমোহন-সরকারের আমলে সংসদে বিল আনা হয়েছিল। ২০১৪-র শুরুতে ওই বিল রাজ্যসভায় পেশ হয়। তার পর থেকে বিলটি সংসদে ঝুলে রয়েছে। মোদী সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লা এখন এই বিল পাশ করাতে সক্রিয় হয়েছেন। মোদী সরকার যে সংখ্যালঘুদের কথাও ভাবে-ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে জবরদখল তোলার ব্যবস্থা করে তা দেখাতে চাইছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমান, গোটা দেশে প্রায় ৬ লক্ষ একর ওয়াকফ জমি রয়েছে। যার বাজার দর কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। ওই জমি থেকে বছরে ১২ হাজার কোটি রুপি আয় হতে পারে। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের যুক্তি, অধিকাংশ জমি জবরদখল হয়ে যাওয়ার ফলে এটা সম্ভব হচ্ছে না। না হলে সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে কোনও অর্থই বরাদ্দ করতে হতো না। গোটা ভারতে প্রতিরক্ষা ও রেল মন্ত্রণালয়ের পরেই সব থেকে বেশি জমি ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে রয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার বিল পাশ করালেও রাজ্যের সাহায্য ছাড়া এই আইন কার্যকর করা সম্ভব নয়। কারণ আইনশৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের দায়িত্বে। জবরদখল হটাতে গেলে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য লাগবেই। তাই এ বিষয়ে এবং বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য চেয়ে মমতাকে চিঠি লিখেছেন নাজমা। কারণ কলকাতা তথা গোটা পশ্চিমবঙ্গেই প্রচুর ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। নাজমা হেপতুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা সংখ্যালঘুদের স্বার্থে, জবরদখলকারীদের হটাতেই এই বিলটি পাশ করাতে চাই। রাজ্য সরকারের সাহায্য ছাড়া তা সম্ভব নয়। তাই সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরই চিঠি লিখেছি।’’
নাজমার চিঠি পাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার জন্যই তৈরি হচ্ছেন মমতা। তিনি ঠিক করেছেন, কেন্দ্রের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেই নাজমাকে চিঠি লিখবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও এ বিষয়ে আপত্তি জানাবেন তিনি। ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে বিষয়টি তোলার চেষ্টা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘বিলের খসড়া পেয়েছি। সব কিছু খতিয়ে দেখে মতামত জানানো হবে। তবে এই বিলকে অস্ত্র করে কোনো রকম মেরুকরণের রাজনীতি কাঙ্খিত নয়।’’
কেন্দ্রের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক কিন্তু মনে করছে, এই সংক্রান্ত বিল পাশ হলে শুধু যে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে তা নয়, ভবিষ্যতেও দখল আটকানো সম্ভব হবে। তবে এ বিষয়ে প্রস্তুতি না নিয়ে, আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাইছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেই মনে করছেন, আগামী বছর যে হেতু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন, তাই এসব বিষয়ে জড়াতে চান না তিনি। উচ্ছেদ করতে গেলে বিতর্কের সম্ভাবনা আসবে বুঝেই এখন এ সব থেকে দূরে থাকতে চান মমতা। মমতার মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও এই বিলকে সমর্থন করছেন না। সামনেই বিহারের নির্বাচন। তার আগে বিলটিকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই সামনে আনা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। সূত্র -ওয়েবসাইট