কালিয়াগঞ্জের গাছ পাগলা নারায়ণ সরকারের কাহিনী


বৃহস্পতিবার,১৬/০৭/২০১৫
1071

বিকাশ সাহাঃ    নিজের খেয়ে বনের মোষ ক জন তাড়ায় ? হয়ত বা তাই তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের যোগীপুকুর গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ সরকারের। জীবনের অনেকটা বছর নীরবে নিভৃতে বিভিন্ন এলাকায় গাছ লাগিয়ে চলেছেন নারায়ণ সরকার, যিনি ঐ এলাকায় “ গাছ পাগলা” বলেই পরিচিত । তাঁর কাজের ধরণ শুনলে অনেকেই চমকে যাবেন । লোকটার নেশা রাস্তার ধারে ধারে গাছ লাগানো । ষাটোর্ধ নারায়ণ বাবু বিনা পারিশ্রমিকে ২৫ বছর বয়স থেকে গাছ লাগিয়ে চলেছেন । এপর্যন্ত তাঁর হাতে ৫০ হাজারেরও বেশী চারা গাছ রোপণ হয়েছে । এর মধ্যে আম জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও বট, অশ্বত্থ, কদম সহ নানা প্রকারের গাছ রয়েছে । কথায় বলে, দু এক জন ভালো মানুষের জন্য আমরা শ্বাস নিতে পারি । আর তাই এই এলাকা আজ সবুজে ভরে গেছে।

তাঁর কথায়, “দেশের প্রতিটি মানুষ দিনে ৩০ মিনিট করে সামাজিক কাজে হাত লাগালে দেশের চেহারাটাই বদলে যেতে পারে । “ তাঁর কথা শুনে অনেকেই মনে করতে পারেন , নারায়ণ বাবু কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী । কিন্তু, ভোটে দাঁড়ানো তো দুরের কথা নিজের ভোট টুকু দেওয়া ছাড়া রাজনীতির ধারে কাছে ঘেঁষেন না তিনি । ক্লাস থ্রি পর্যন্ত তিনি পড়াশুনা করেছেন । পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন কৃষিজীবী । এদিন, তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ বছর বয়স থেকে রাস্তার ধারে গাছ লাগানোর কাজ করি । আমার হাতে লাগানো অনেক গাছ এখনও রাস্তার ধারে রয়েছে । বিশেষ করে মনোহরপুর থেকে যোগী পুকুর যাওয়ার ৫ কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে যত গাছ রয়েছে সবই আমার হাতে লাগানো । এছারাও আশেপাশের মনোহর পুর, রামকৃষ্ণ পুর সহ বালাস সংসদ এলাকায় অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশী গাছ লাগিয়েছি । এগুলির মধ্যে অনেক গাছ এখনও বেঁচে রয়েছে অনেকগুলি আবার দুষ্কৃতীরা কেটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে । কিন্তু আমার কাজ আমি করে যাচ্ছি । চোখের সামনে গাছ কাটা দেখলে আমি আর স্থির হয়ে থাকতে পারিনা। কোন কোন সময় তাঁদের সঙ্গে আমার ঝগড়াও হয়ে যায়। কখনো কখনো ভাবী কেন? কার জন্য আমি গাছ লাগাচ্ছি ? আবার সব ভূলে নিজের তাগিদে রাস্তার ধারে গাছ লাগাতে থাকি। আমি চাই আগামী প্রজন্ম যেন সুস্থ সবল ভাবে বেঁচে থাকতে পারে। শুধু নিজেই গাছ লাগানোর কাজ করে থেমে থাকেন না নারায়ণ বাবু। আশেপাশের বাসিন্দাদের গাছ লাগানোর জন্য রীতিমতো বুঝিয়ে বলেন , “একটি গাছ অনেক প্রান’’ । তাঁর ব্যাখ্যা একটি গাছ থেকে কলম করে হাজারের উপর চারা বানানো যায়। ফলে একটি গাছ থেকে সৃষ্টি হয় অনেক প্রাণ। গ্রামের বিভিন্ন গাছ থেকে কলম করার পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জ শহরের অলি গলি ঘুরে ফেলে দেওয়া আম, জাম, কাঁঠাল সহ বিভিন্ন বীজ সংগ্রহের সাথে সাথে তিনি ছোট ছোট গাছের চারা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।

নারায়ণ বাবুর স্ত্রী অরুনা দেবী বলেন, বিয়ের পর থেকেই দেখছি ও কৃষিকাজ সেরে চলে যায় রাস্তার ধারে গাছ লাগানোর কাজে । ওঁর এটা নেশা, ভালো কাজ করছে তাই কোনোদিন বাধা দিইনি । গাছ লাগানোর নেশায় বাড়ির কাছেই ছোট একটা নার্সারি করে ফেলেছে সে । আগে মনোহরপুর কালি মন্দিরে ঐ নার্সারি ছিল । এখন বাড়িতেই সেটা করে ফেলেছে ।
তাঁর প্রতিবেশী , মধু সুদন রায় বলেন, ওঁকে অনেকদিন ধরেই রাস্তার ধারে গাছ লাগাতে দেখছি । গাছ লাগানোর পর সাইকেলে চেপে বালতি করে সেই গাছের গোঁড়ায় জল ঢালে , আশেপাশের গবাদি পশু যাতে সেই গাছ না খায় । সে জন্য বেড়া দিতেও দেখেছি ।এর জন্য কোনোদিন কারও কাছে হাত পাতেন নি তিনি । নিজের পকেটের টাকা দিয়েই দিনরাত এসব করে ও ! আমরা এসব নিজের চোখে দেখে ভালোবেসে ওঁকে বলি , “গাছ পাগলা’’ ।RSCN7246

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট