খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ মুক্তি পেল সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা ‘বাহুবলি’। এস এস রাজামৌলি পরিচালিত তামিল-তেলেগু সিনেমাটি নিয়ে দর্শক আগ্রহ রয়েছে তুঙ্গে। এমনকি অমিতাভ বচ্চনের মতো তারকা ‘বাহুবলি’ দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে টুইট করেছেন।
তামিল-তেলেগুর পাশাপাশি হিন্দি, ইংরেজিসহ বেশ কিছু ভাষায় সিনেমাটির প্রথম পর্ব মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার। দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পাবে আগামী বছর।
সিনেমাটিকে অনেকে ‘থ্রি হান্ড্রেড’ হিসেবে অভিহিত করছেন। মূলত ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই-সংগ্রামকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘বাহুবলি’। তার উত্তাপও পাওয়া গেছে মুক্তির আগেই। কয়েকদিন আগে থেকেই হায়দরাবাদের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে টিকিটের জন্য লাইন পড়ে যায়। এর মধ্যে একটি লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার। এখন ঘটনা নাকি অনেকদিন দেখা যায়নি। এমনটা শেষ দেখা গিয়েছিল নাকি সুপারস্টার ‘চিরঞ্জীবী’র সময়ে। শোনা যাচ্ছে কালোবাজারে টিকিটের দাম উঠেছে ১০ হাজার টাকা । কালোবাজারি রুখতে ইতিমধ্যে আদালত নির্দেশনাও দিয়েছে।
‘বাহুবলি’কে নিয়ে উন্মাদনার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যা প্রথম ট্রেলার রিলিজের পরই দেখা যায়। ১ জুন ট্রেলার মুক্তির পর মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ১০ লাখ দর্শক দেখেছে হিন্দি ট্রেলার, ফেসবুকে লাইক সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ লাখের বেশি। এপিক সিনেমাটির বাজেট ২৫০ কোটি টাকা। যার ৪০ ভাগ নাকি খরচ হয়েছে স্পেশাল ইফেক্টে। ট্রেলারেও তার ছাপ দেখা গেছে। এতে তুলে আনা হয়েছে ১৮ শতকের প্রেক্ষাপট। সিনেমার পারফেক্ট লুক আনতে কোনো ধরনের আপোস করা হয়নি। এক জলপ্রপাতের দৃশ্যেই নাকি লেগেছে ১০৮ দিন লেগেছে। যা মোট শুটিংয়ের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে নিয়েছে। আরেকটি যুদ্ধের দৃশ্যে নাকি লেগেছে ৪ মাস, যার দৈর্ঘ্য ২০ মিনিট।
সব মিলিয়ে দক্ষিণ সিনেমার সবচেয়ে ভাল গ্রাফিক্স দেখা গেছে ‘বাহুবলি’তে। এ সিনেমায় কাজ করেছেন ২ হাজার এক্সটা শিল্পী, ৬ শ’ টেকনিশিয়ান। এ সব টেকনিশিয়ানকে আনা হয়েছে সারা দেশ থেকে ১৭টি ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট স্টুডিও, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন থেকে। সিনেমাটিতে সাড়ে ৪ হাজার ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের কাজ রয়েছে। এ ছাড়া ছিল অসংখ্য হাতি, ঘোড়া ও অন্যান্য সরঞ্জাম।
বাজেট ও স্পেশাল ইফেক্ট বেশি আলোচনায় আসলেও ‘বাহুবলি’র মূল আকর্ষণ ধরা হচ্ছে গল্পকে। এপিক ওয়ার ধাঁচের এ সিনেমা মূলত ভাইয়ে ভাইয়ে ক্ষমতার লড়াই। এ দুই ভাইয়ের নাম ভরত ও বাহুবলি। একইসঙ্গে উঠে আসে পুনর্জন্ম ও অমরত্বের মতো ধারণা। তবে দেশে ‘বাহুবলি’ নতুন কিছু নয়। বাহুবলি সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, “বাহুবলি ছিলেন প্রথম জৈন তীর্থঙ্কর ঋষভের পুত্র। তিনি জৈন কালচক্রের ‘অবসরপনি’ যুগে বর্তমান ছিলেন। জৈনদের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের অন্যতম হলেন বাহুবলি। তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ভরতের সঙ্গে একটি অহিংস দ্বন্দ্বযুদ্ধ জয়ের পর তাঁর মনে সন্ন্যাস গ্রহণের ইচ্ছা জেগেছিল। তিনি তাঁর রাজ্য ভরতকে দান করে দিয়ে এক দিগম্বর সন্ন্যাসী হয়ে যান।”
মূলত চিরায়ত দেশের মিথকেই ভিজ্যুয়ালাইজেশন করা হয়েছে এ সিনেমায়। অনেকে বলছেন, ‘বাহুবলি’র মাধ্যমে হলিউড আর বলিউড চলচ্চিত্রের পার্থক্য মোটা দাগে উঠে এলো। কেন না, হলিউডে বিগ বাজেট মান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। অন্যদিকে বলিউড তার স্থান করে নিচ্ছে মিথ।
বিশ্বব্যাপী দক্ষিণী সিনেমার প্রসারের ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘বাহুবলি’। দেশের ৩৯টি ভাষার সিনেমা নির্মিত হয়। ২০১৪ সালে ২১৬টি হিন্দি সিনেমার বিপরীতে নির্মিত হয়েছে ২৮৭টি তামিল ও ২৫৫টি তেলেগু সিনেমা। দিন দিন আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষিণী সিনেমার চাহিদা বাড়ছে। এ ছাড়া বর্তমানে অন্যান্য ভাষিক সিনেমার গল্পের বড় উৎস হল তামিল-তেলেগু সিনেমা।
‘বাহুবলি’র পরিচালক রাজামৌলি নিজেও একটি ব্র্যান্ড নেম। এর আগে দুই পর্বের হিমাংশু কাধু নির্মাণ করে স্পেশাল ইফেক্টে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি ‘মগাধিরা’, ‘ইগা’সহ বেশ কিছু ব্লকবাস্টার উপহার দিয়েছেন। তার সিনেমাগুলো বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় রিমেক হয়েছে।
‘বাহুবলি’তে অভিনয় করেছেন প্রভাস, রানা ডগ্গুবতী, আনুশকা শেঠি, তামান্না, সুদীপ, সত্যরাজ, নাসের, রামাইয়া কৃষনান ও প্রভাকর। সিনেমার জন্য প্রভাস নিজের ওজন ১০০ কেজির বেশি করেছেন। এ ছাড়া শিল্পীদের নিতে হয়েছে বিশেষ শরীরিক প্রশিক্ষণ।