পিআইবিঃ হরি-কি-পৌরীর স্বর্গদ্বারের প্রান্তে হরিদ্বারে সোমবারের অমাবস্যা উপলক্ষে পুণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে কাতারে কাতারে ভক্তরা এসেছে। এই ভক্তের ভীড়ে এসে রাম অবতার তার পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে যোগ দিয়েছেন। পুণ্য অর্জনের আশায় রাম অবতার গঙ্গায় যখন ডুবের পর ডুব দিয়ে চলেছেন তখন তার স্ত্রী মনে মনে ভাবতে লাগলেন যে পতিদেবতা এই বুঝি পা পিছলে জলে ডুবে যায়। মহিলা বার বার করে স্বামীকে সতর্ক করতে লাগলেন। ৫৫ বছর বয়সী রাম অবতার আতঙ্কে চিৎকাররত স্ত্রীকে অভয় দিয়ে বললেন, “দুশ্চিন্তা করো না গো, আমি যদি ডুবে মরি তাহলে আমার জীবন বীমার টাকার মালিক হবে তুমি’’। রাম অবতারের কথার রেশ টেনে ওকে বিরত করার জন্য যোগ দেন উপস্থিত ভক্তদের মধ্যে অনেকেই।
মে মাসেই প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ওদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের কথা ঘোষনা করেন। দেশের বড় বড় শহরে অনেকেই তখন ঠাট্টা করে বলতে থাকেন, এরপর যদি বলিউডের তারকা সলমন খানের মতো কোনো এক বড় মাপের কেউকেটা গাড়ি চাপা দিয়ে কাউকে পিষেও ফেলে তাহলেও আর কোনো রকম ভাবনা থাকবে না, কেননা আর যাই হোক, নিহতের পরিবারের লোকজন অন্তত: ক্ষতিপূরণের টাকাটা দিব্যি পেয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনায় লক্ষ লক্ষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং তা এখন উপচে পড়ছে, আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে উঠে আসছে একের পর এক নানা ধরনের প্রশ্ন আর খোসগল্প। কেন্দ্রীয় সরকার বাস্তব ক্ষেত্রে গরিব মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগী হতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে অতি স্বল্প খরচের তিনটি বীমা প্রকল্প নিয়ে আগ্রহের সঞ্চার হয়েছে। যতই এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে যাবে, ততই এটা স্পষ্টতর হবে যে, দিন বদলাচ্ছে। ৯ মে কলকাতায় শ্রী মোদী এই তিনটি প্রকল্পের সূচনা করেন। এর মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা’ তথা পি এম এস বি ওয়াই-এর আওতায় দুর্ঘটনাজনিত মুত্যুর ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা বীমা বাবদ দেওয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি সূচনা করার অব্যবহিত পরেই কম করেও ৮ কোটি ৫০ লক্ষ লোক বীমা প্রকল্পে নাম লেখায় দ্রুততার সঙ্গে।
একইভাবে, ‘প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনা’ তথা পিএমজেজেবিওয়াই জনমনে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই যোজনায় ২ লক্ষ টাকা বীমা বাবদ দেওয়ার সংস্থান রেখেছে সরকার। এর পাশাপাশি চালু করা হয়েছে ‘অটল পেনশন প্রকল্প যোজনা’ তথা এপিওয়াই-এর আওতায় গ্রাহক বা ক্রেতারা ৬০ বছর বয়সের পর তাদের জমানো অর্থের নিরিখে যথাক্রমে ১০০০ টাকা, ২০০০টা, ৩০০০টাকা, ৪০০০ টাকা, ৫০০০ টাকা করে প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণে ন্যুনতম পেনশন পাবে। সরকারের তরফেও এই যোজনায় যারা ২০১৫-র ৩১ ডিসেম্বরের আগেই এন পি এস-এ যোগদান করেছে এবং যাদের আয়কর দিতে হয় না সেই সব ক্রেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যথাযোগ্য পরিমাণে অর্থ জমা দেওয়া হবে। এই খাতে সরকার ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে পাঁচ বছরের জন্য টাকা জমা দিতে শুরু করেছে এবং এজন্য বছরে ১০০০ টাকা করে জমা দেওয়ার সংস্থান রেখেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট ক্রেতার যদি মুত্যু হয় তা’হলে তার স্ত্রী অথবা স্বামী এই পেনশন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পেনশনের তহবিল যথারীতি ক্রেতার দ্বারা মনোনীত ব্যক্তি কিংবা নমিনি-র অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই যোজনায় যোগদানের ন্যূনতম বয়সসীমা হল ১৮ এবং বয়সের উর্দ্ধসীমা ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত। নির্ধারিত ন্যূনতম পেনশনের সুবিধাদানের বিষয়টি সরকার সুনিশ্চিত রাখবে।
পি এম জে জে বি ওয়াই-র আওতায় ২ লক্ষ টাকা করে বার্ষিক জীবন বীমা বাবদ পাওয়ার সংস্থান রেখেছে সরকার। এ জন্য ক্রেতাদের প্রতি মাসে ৩৩০ টাকা করে জমা দিতে হবে। এই বীমার সুবিধা দেওয়ার জন্য বয়সের সীমা ন্যূনতম ১৮ এবং উর্দ্ধতম ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। ক্রেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে “অটো-ডেবিট” পদ্ধতিতে প্রিমিয়ামের অর্থ সংগ্রহ করা হবে। পি এম এস বি ওয়াই-র আওতায় দুর্ঘটনাজনিত মুত্যুতে বীমা বাবদ দেওয়া হবে ২ লক্ষ টাকা করে, আর যদি শারীরিকভাবে পূর্ণ অক্ষমতা সৃষ্টি হয় তা’হলে দেওয়া হবে ১ লক্ষ টাকা করে। এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত বয়:সীমার লোকজন। এ জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে “অটো-ডেবিট” পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হবে প্রিমিয়ামের অর্থ। পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এপিওয়াই-এর ক্রেতাদের জমা দেওয়া অর্থের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে সরকারকে এই বাবদ ২,৫২০ কোটি টাকা থেকে ১০,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়াও পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য সরকারকে এপিওয়াই-র আওতায় নতুন ক্রেতার নাম নথীভুক্তকরণ এবং জমা দেওয়া অর্থ সংগ্রহের কাজকর্ম সম্পাদন করতে ২,০০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। পাশাপাশি উল্লিখিত সময়কালের জন্য পি এম জে জে বি ওয়াই এবং পি এম এস বি ওয়াই সম্পর্কে প্রচার ও সচেতনতামূলক কাজকর্মের জন্য ২৫০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। সরকার আশা করছে যে চলতি অর্থবছরে এপিওয়াই-র আওতায় প্রায় ২ কোটি নতুন ক্রেতা নাম নথীভুক্ত করাবে।
সরকারের অনুমোদিত ও সহায়তা প্রাপ্ত বীমা প্রকল্পে অসংগঠিত অংশের শ্রমিকরা যাতে তাদের বয়সকালে কাজের ক্ষেত্র থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে পারে সে জন্য উৎসাহদানের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। দেশের মোট শ্রমশক্তি অর্থাৎ ৪৭ কোটি ২৯ লক্ষ শ্রমিকের মধ্যে ৮৮ শতাংশই হল অসংগঠিত অংশের শ্রমিক। সরকার আশা করে যে নিয়োগ কর্তারাও তাদের সংস্থায় নিযুক্ত শ্রমিকদের এই পেনশন প্রকল্পে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করবে।
এই ধরনের বীমা প্রকল্প ও পরিকল্পনাগুলি সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনসাধারণের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং সমাজের এই অংশটি প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনার আওতায় একটি দৃঢ় গ্রাহক গোষ্ঠি সৃষ্টি করবে। উল্লেখ্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনার আওতায় ১৫ কোটি মানুষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এই সব অ্যাকাউন্টের একটি বড় অংশকে যুক্ত করা হয়েছে ‘আধার’ নাম্বারের সঙ্গে।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ১৩ কোটি ৪০ লক্ষ ‘রু-পে’ কার্ড (গ্রামীণ এলাকায় অর্থ হস্তান্তরের কাজে ব্যবহৃত কার্ড) বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ব্যাঙ্ক মিত্র নিয়োজিত করা হয়েছে এইসব কাজের জন্য। এই প্রকল্পের আওতায় ক্রেতারা দুর্ঘটনাজনিত বীমা বাবদ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাবে এবং অ্যাকাউন্ট কার্যকর হওয়ার ছয় মাস পর পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ‘অগ্রীম অর্থ’ বা ওভার ড্রাফট পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এই সব কল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রচার এবং এ সম্পর্কে সচতেনতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দে অনুমোদন দিয়েছে। যেভাবেই হোক, এই প্রকল্পগুলির সাফল্য প্রত্যক্ষভাবে নির্ভর করছে লেনদেন সংক্রান্ত পরিষেবায় ইতোমধ্যেই অত্যন্ত কাজের চাপে থাকা ব্যাঙ্কগুলির ভূমিকার উপর। এছাড়াও দেশের যে বিপুল সংখ্যক জনগণ এতদিন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আওতায় আসেনি তাদের মধ্যে আর্থিক বিষয়াবলী সম্পর্কে সচতেনতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে প্রকল্পগুলি সাফল্য এই দিকটির উপরও নির্ভরশীল। বস্তুত, এই প্রকল্পগুলির সাফল্য ব্যাপক ভাবে নির্ভর করছে জনধন যোজনা-র উপর। কেননা এই যোজনার মাধ্যমেই ‘প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর” পদ্ধতিটির বুনিয়াদ গঠন করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমেই লক্ষ্যযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
এই সব প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গরিবরা যদি উন্নয়নের লক্ষ্যে এই অভিযাত্রার ফলাফলে অংশ না নিয়ে পারে তা’হলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করা হয়েছিল গরিবদের জন্য, কিন্তু আমরা ব্যাঙ্কে গরিবদের দেখতে পাই না। ১২০ কোটি জনসংখ্যার দেশে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ লোকের পেনশন নেই, কোনো রকম বীমা নেই… কিন্তু সমস্ত রকম যন্ত্রনার ভার বইতে হয় গরিবদেরই, ধনীদের গায়ে তার আঁচ লাগে না। তারা রাস্তার ধারে ঘুমায়, তাদের ফুটপাতেই মরে যেতে হয়….”।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব মতো, ২০১৪-র মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে বাণিজ্যিক ও গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলোর অধীনে জনগণের সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে ২৪৩ মিলিয়ন। এরমধ্যে ১২৬ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ব্যাঙ্কগুলোর শাখা কার্যালয়ের মাধ্যমে ও বাকী সংখ্যক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ‘ব্যাঙ্ক মিত্র’দের মাধ্যমে। এই ২৪৩ মিলিয়নের সাথে ১১৬ মিলিয়ন যোগ করলে দাঁড়ায় সারা দেশের সমস্ত পরিবারের সংখ্যা। কিন্তু সমস্যা হল এই প্রকল্পের স্বল্পমেয়াদী প্রকৃতিকে নিয়ে: ১১৬ মিলিয়ন অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৮৩ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে জিরো ব্যালেন্সে।
এন ডি এ সরকারের আমলেই কার্যত ‘প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর প্রকল্প’ ভর্তুকি সহ সমস্ত সরকারি লেনদেনের জন্য আরম্ভ করা হয়। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এল পি জি-তে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য বর্তমানে আনুমানিক ২৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয় এবং এই ভর্তুকির অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহক বা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হচ্ছে। ১৬ কোটি এল পি জি গ্রাহকের মধ্যে ৫০ শতাংশকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার। এল পি জি ব্যবস্থাকে যদি এই পদ্ধতিতে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে কেরোসিনকেও এর অন্তর্গত করতে লক্ষ্যমাত্র নেওয়া হবে, কেননা কেরোসিনেও সরকারকে একই হারে বছরে ২৫,০০০ কোটি থেকে ৩০,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দিতে হয়। সরকারি লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের কাজে অন্য একটি বড় প্রকল্প হল ‘মহাত্মা গান্ধী গ্রামীন কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প’ বা এম জি এন-রেগা। এই প্রকল্পটির জন্য সরকারকে বছরে ৩৩,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়।