Categories: রাজ্য

হেমতাবাদে শিকল বন্দি আশরাফুল

 

 

বিকাশ সাহাঃ  দরমার বেড়ায় মোড়া ছোট্ট বাড়ি। সেই বাড়ির এক কোনে শিকল বন্দী অবস্থায় কেটে গেল শৈশব কৈশোর। যেসময় পড়াশুনা, খেলাধুলা করে ছুটাছুটি করার করার কথা সেই সময় তাঁর পায়ে রয়েছে লোহার বেড়ি। পায়ে লোহার বেড়ি পরেই দিনের পর দিন কাটিয়ে দিল ১৮ বছর বয়সি তরতাজা যুবক। উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের আরজিকাশিমপুর গ্রামের মহম্মদ আশরাফুল খুব ছোট বয়সে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তাঁর পাগলামির মাত্রা। প্রথম দিকে সে নিজের খেয়াল মত বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেত। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁর বাড়ির লোকেরা তাঁকে বাড়ি নিয়ে আসতো। হুটহাট করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বেড়িয়ে যাবার প্রবণতা দিন দিন বাড়তে থাকে। তাঁর বাড়ি ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় একবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সে বাংলাদেশে চলে যায়। প্রায় ২৫ দিন পরে বিএসফের সহযোগিতায় সেবার তাঁকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে সম্ভব হয়েছে। এইভাবে কখনও বাংলাদেশ তো কখনও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাবার ঘটনা বাড়তে থাকলে বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যরা আশরাফুলের পায়ে ভারী লোহার শেকল বেঁধে দেয়। পেশায় সাইকেল মেকার আশরাফুলের বাবা মিজানুর ইসলাম দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকায় আশরাফুলকে দেখভাল করার সময়ও ছিলনা তাঁর হাতে। দিন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা, তা সর্তেও যতটা সম্ভব আশরাফুলের মানসিক ব্যামো সারানোর চেষ্টা করে গেছেন বাবা মিজানুর। ছেলের চিকিৎসার করতে গিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব। বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায় সম্বল যা ছিল সব খুইয়েছেন তিনি। টাকার অভাবে পাঁচ বছর ধরে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাচ্ছেন আশরাফুল। থাকার মধ্যে রয়েছে ছোট্ট একটি বাড়ি। সেই বাড়িরই এক কোনে শেকল দিয়ে বাঁধা রয়েছে আশরাফুল। বাস্তব অবস্থার মুখোমুখি হয়ে ছেলেকে লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখার কষ্টে মা আসরা খাতুন নিঃশব্দে নীরবে দিনের পর দিন চোখের জল ফেলছেন।
আশরাফুলের মা আসরা খাতুন বলেন ছেলের এই অবস্থার জন্য তাঁকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হচ্ছি। আমি জীবনে যা আগে দেখিনি আজ তা আমাকে দেখতে হচ্ছে। আমার ছেলের বয়সি পাড়ার অন্যান্য ছেলেরা আজ বাবা মায়ের সঙ্গে কাজ করছে হাসি মজা করছে। তাঁদের দেখে আমার মনে হয় আশরাফুল ভালো থাকলে সেও আমাদের কাজে হাত লাগিয়ে হাসি মজা করে বাড়ি আলোকিত করে রাখত।
আশরাফুলের বাবা মিজানুর ইসলাম বলেন, রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে সুচিকিৎসায় হয়ত আমার ছেলের জীবনে অন্ধকার থেকে আলো ফিরে আসবে। যে আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে তাঁর হাতেই আমার ছেলেকে তুলে দেব।
দিনের পর দিন সভ্য সমাজের বুকে এই অমানবিক ঘটনা ঘটে চললেও শুধুমাত্র আশ্বাস ছাড়া কিছু মেলানি আশরাফুলের কপালে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

4 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

4 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

4 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

4 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

4 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

4 days ago