খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরভোটে বিজেপির শোচনীয় হারের জন্য শাসক দলের ব্যাপক সন্ত্রাস ও রিগিং-ই দায়ী, দাবি করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ আর একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, মুকুল রায়ের বিজেপিতে আসার কোনো সম্ভাবনাই নেই৷ ফলে এক দিকে যেমন বোঝা গেল যে মার খেলেও এ রাজ্যে মাটি ছাড়তে রাজি নয় বিজেপি, তেমনই সে লড়াইয়ে যে মুখ্যমন্ত্রীর একদা বিশ্বস্ত সেনানীর উপর তারা মোটেই ভরসা করছেন না, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেল৷ অমিতের এই বক্তব্যের পর পরিষ্কার, আপাতত বিজেপির উপর আর আশা রাখতে পারবেন না মুকুল৷
অমিত শাহ এদিন বিজেপির রেকর্ড সদস্য সংগ্রহ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করছিলেন৷ সেখানে বাংলা নিয়ে তাকে একঝাঁক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির সদস্য সংখ্যা সাড়ে ছ’গুণ বেড়েছে৷ আগে রাজ্য থেকে বিজেপির সদস্য সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৪১৮ জন৷ কিন্ত্ত ভোটপ্রাপ্তির হার তো সে ভাবে বাড়েনি৷ তা হলে হিসেবটা কেমন হল? লোকে সদস্য হচ্ছেন, কিন্ত্ত ভোট দিচ্ছেন না? বিজেপি সভাপতির জবাব, ‘এটা বলা একেবারেই ঠিক হবে না৷ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হোক, তখন বোঝা যাবে৷’ পুরভোটে বিজেপির এমন শোচনীয় ফলাফলের একমাত্র কারণ তৃণমূলের সন্ত্রাস ও ব্যাপক পরিমাণে রিগিং৷ আর এই ভরসাতেই, এমন হারের পরেও অমিত শাহ দাবি করছেন, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সফল হবে৷ কারণ, তখন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভোট হবে, রাজ্য পুলিশের অধীনে নয়৷ অমিত শাহের সাফ কথা, ‘পুরভোটে স্থানীয় পুলিশ ছিল বলেই এই ফল হয়েছে৷ বিধানসভার ভোট তো কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এবং আধা সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে হবে৷ তাই সেখানে ফল একেবারে আলাদা হবে৷ আগেও বলেছি, আবার বলছি, বিধানসভায় বিজেপি জিতবে৷’
তবে রাজ্যের এই নেতৃত্ব নিয়ে কি বিধানসভায় জেতা সম্ভব হবে? রাহুল সিনহাকে নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে, তার নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ তার নেতৃত্বই বজায় থাকবে, নাকি আসবেন নতুন মুখ৷ অমিত শাহ স্পষ্টভাবে এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি৷ তিনি কেবল বলেছেন, এবার সাংগঠনিক নির্বাচন হবে, তখন দেখা যাবে৷ রাহুল থাকবেন এটা যেমন অমিত বলেননি, আবার তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে এটাও তিনি জানাননি৷ তবে একটা বিষয়ে দীর্ঘ ধোঁয়াশা এ দিন স্পষ্ট করেছেন বিজেপি সভাপতি৷ বলেছেন, ‘মুকুল রায়কে বিজেপিতে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷ দলে এরকম কোনো চিন্তাভাবনা নেই৷ মুকুলও বিজেপিতে আসার জন্য কোনো দরখাস্ত করেননি৷’ বিজেপি সভাপতির এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, মুকুলের সামনে এখন দু’টো বিকল্পই খোলা৷ হয় তাকে তৃণমূলে থাকতে হবে অথবা অন্য বিকল্প দেখতে হবে৷ তাছাড়া, আগামী ভোটে বাংলায় দলের মুখ কে হবেন, তা নিয়েও কিছু ফাঁস করেননি অমিত৷ ফলে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা অন্য কেউ বিজেপির মুখ হবেন কি না, সেটা জানার জন্য এই বছরের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ কারণ, সাংগঠনিক নির্বাচন হবে এই বছরের শেষের দিকে, সম্ভবত অক্টোবর-নভেম্বরে৷
অমিত শাহকে এর পর প্রশ্ন করা হয়, তৃণমূলের সঙ্গে কি আপনারা রাজনৈতিকভাবে কাছাকাছি আসছেন? দেখা যাচ্ছে, সংসদে তৃণমূল একের পর এক বিলে আপনাদের সমর্থন করছে৷ আগের তিক্ততা নেই৷ অমিত শাহর জবাব, ‘বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কোনো বন্ধুত্ব হয়নি৷ কী করে আপনারা বলছেন, তৃণমূলের কাছাকাছি এসেছে বিজেপি? রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে লড়বেই, কিন্ত্ত তার সঙ্গে কোনো বিল সমর্থন করা না করার কি সম্পর্ক? এরকম ধারণা নিয়ে থাকবেন না৷’
তবে মুখে যতই বাংলা বিজয়ের কথা বলুন, সন্ত্রাস ও রিগিংয়ের ঘাড়ে হারের দায় চাপিয়ে দিন, দলীয় সূত্রেই জানা যাচ্ছে, অমিত শাহদলের এই শোচনীয় ফলাফলে মোটেই খুশি হতে পারেননি৷ দিন দিন যে ভাবে দলের মধ্যে প্রবল গোষ্ঠীসংঘর্ষ প্রকাশ্যে চলে আসছে, তা নিয়েও তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ৷ পুরভোটে দেখা গিয়েছে, নেতা ও কর্মীরা প্রকাশ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন৷ কলকাতায় বিজেপি অফিসের সামনে দুই গোষ্ঠীতে সংঘর্ষ হয়েছে৷ তার কোনো প্রভাব কি পুরভোটে পড়েছে? অমিত শাহ অবশ্য প্রকাশ্যে এই বিরোধকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না৷ বলছেন, ‘ভোটে অল্পবিস্তর এরকম ঘটনা ঘটে৷ পুরভোট নিয়ে রাজ্যের রিপোর্ট আমার কাছে এসেছে৷ আমি সময় নিয়ে তা খতিয়ে দেখব৷’ তবে তার অখুশি হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে৷ বাংলায় বিজেপির একটা জমি তৈরি হচ্ছিল৷ বাংলার বাইরের লোকের মনে ধারণা হচ্ছিল যে, বিজেপি খুবই ভালো ফল করবে৷ কিন্ত্ত পুরভোটের ফল সেই উচ্চাশায় পানি ঢেলে দিয়েছে৷ যে গতিতে বিজেপি বাড়ছিল, দ্বিতীয় স্থানে আসবে বলে মনে করা হচ্ছিল, সেই অগ্রগতিতে ছেদ পড়েছে৷ বিজেপি বিধানসভায় আদৌ কতটা ভাল ফল করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে৷ এই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে অমিত শাহের ভাল ফলের জোরদার দাবি এই মুহূর্তে দুরাশাই, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।