খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ থেকে জানা যায়, গৌতম বুদ্ধ খৃস্ট-পূর্ব ৫৬৩ সালে নেপালের শাক্যরাজ শুদ্ধোধন ও রাণী মহামায়ার সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবে তার নাম ছিল সিদ্ধার্থ।
বড় হয়ে রাজ্যপাট, রাজপ্রাসাদ, সংসার, ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে মানব মুক্তির পথ খুঁজতে তিনি গ্রহণ করেন সন্ন্যাস ধর্ম। ঘুরে বেড়ান বনে-বাদাড়ে। তপোবনের সন্ন্যাসীদের কাছে রপ্ত করেন ধ্যানের নানা কৌশল। করেন ৬ বছর কঠোর সাধনা। অন্বেষণ করেন মানবমুক্তির পথের।
জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখের বিনাশ আছে এবং দুঃখ বিনাশের উপায়ও আছে। দুঃখ বিনাশের উপায় বের করেন সিদ্ধার্থ। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় বোধি বৃক্ষতলে জগত্ আলোকিত করে মানবমুক্তির পথ বের করেন মহামতি গৌতম। লাভ করেন বুদ্ধত্ব।
কপিলাবস্তু থেকে শ্রাবস্তী, বৈশালী, চুনার, কৌশাম্বী, কনৌজ, মথুরা, আলবী (বর্তমান নেপাল, ভারত, ভুটান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান) প্রভৃতি বহু জায়গায় তিনি ৪৫ বছর ধর্মপ্রচার করেন।
জীবনের শেষ অধ্যায়ে তিনি রাজগৃহ থেকে কুশীনগর গমন করেন। কুশীনগরের কাছে পাবা নগরে উপস্থিত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি মল্লদের শালবনে শালগাছের নিচে শয়ন করেন।
তখন আকাশে বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। আলোয় চারদিক উদ্ভাসিত। অনন্ত আকাশের নিচে যুগ্ম শালবৃক্ষের নিচে সমবেত শিষ্যগণ। তিনি উচ্চারণ করেন মহাবাণী, ‘উত্পন্ন দ্রব্য মাত্রেরই বিনাশ অবশ্যম্ভাবী, অপ্রমত্ত হয়ে কর্তব্য সম্পাদন কর’। বৈশাখি পূর্ণিমাতেই ৮০ বছর বয়সে বুদ্ধ লাভ করেন মহাপরিনির্বাণ। বুদ্ধের মূলমন্ত্র সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু/জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
বুদ্ধ বলেছেন, জগতে কর্মই সব। মানুষ তার কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করবে। ভাল কাজ করলে ভাল ফল এবং খারাপ কাজের জন্য খারাপ ফল পাবে। কর্মানুসারে মানুষ অল্প আয়ু, দীর্ঘ আয়ু, জটিল ব্যাধিগ্রস্ত, নিরোগ, বিশ্রী-সুশ্রী, সুখী-দুঃখী, উঁচু-নিচু, জ্ঞান-মূর্খতা ইত্যাদি প্রাপ্ত হয়। মানুষ কর্মের অধীন।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, গৌতম বুদ্ধ বিশ্বের মানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ বলে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন।
মানব জীবনের দুঃখ তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য তথা সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু- এ চারটির কারণ উদঘাটন এবং মানুষের শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে নিমগ্ন হন।
এক সময় রাজপ্রাসাদের বিত্ত-বৈভব ও সুখ এবং স্বজনের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধি লাভের পন্থা অন্বেষণে তিনি বেরিয়ে পড়েন অজানার পথে। দীর্ঘ ৬ বছর সাধনার পর গৌতম বুদ্ধ বোধিপ্রাপ্ত হন।
এদিকে সারাবিশ্বের বুদ্ধ অনুসারী কোটি কোটি ভক্ত আজ বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভক্তিতে পালন করবে দিনটি। বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপন করবে পবিত্র দিবসটি। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ উপলক্ষে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটি।
বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বৌদ্ধ‘সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বৌদ্ধবিহার সূত্র জানায়, সকালে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হবে। পরে বুদ্ধ পূজা, মহাসংঘদান, মহা অষ্টপরিস্কারদানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাদি পালিত হবে। এরমধ্যে জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ প্রার্থনা