খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ কলকাতা সহ রাজ্যের নানা জেলার হওয়া পুরসভা ভোটে বোর্ড দখল করল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এবারও ভোটের ফল বেরনোর পর ফের একবার ফ্রন্টফুটে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বিরোধীদের একপ্রকার তাচ্ছিল্যই করেছেন তিনি। পাশাপাশি আগামী ৩০ তারিখ বাম-বিজেপির ডাকা বনধকেও রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে ঠেকানোর শপথ নিয়েছেন তিনি। (কলকাতা-সহ রাজ্যে তৃণমূল ঝড়, কোনওমতে অস্তিত্ব টেঁকাল বামেরা, রাজ্যে খাতাই খুলল না বিজেপি) এ তো গেল তৃণমূলের কথা। বিরোধীদের হাল কি? দুর্নীতি, অপশাসন, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ও শিল্পে ক্রমাবনতি নিয়ে দিনের পর দিন বিরোধীরা সুর চড়িয়েছে। সারদা জুজু দেখিয়ে তৃণমূলকে উৎখাতেরও ডাক দিয়েছেন কোনও কোনও বিরোধী নেতা। তবে সব কিছুকে দুরে সরিয়ে পুর নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যাপক ব্যবধানে জয়ে এটা প্রমাণিত যে এখনও “ব্র্যান্ড মমতা”র উপর থেকে মানুষ আস্থা হারায়নি। বিরোধীরা বলবেন “রিগিং হয়েছে। মাস্কেট বাহিনী ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগিয়ে ভোট বৈতরণী পার করেছে শাসক দল। উপযুক্ত পরিবেশে ভোট হলে আরও ভালো ফল করতে পারত বিরোধীরা।” পুরভোট রক্তাক্ত হয়েছে সন্দেহ নেই একথা যে অসত্য একথা বলা যায় না। কারণ এবারের পুরভোট সবদিক দিয়ে রক্তাক্ত হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। এবং সৌজন্যে যে শাসক দলের কাডাররা, তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। সন্দেহ, জিজ্ঞাসা, শুধু একটা জায়গাতেই। আদর্শ পরিবেশে ভোট হলেও কি তৃণমূলের বিজয়রথকে আটকানো যেত? দক্ষিণবঙ্গে লাল পতাকা ওড়াতে পারতেন বাম-কংগ্রেস নেতারা। অথবা বিজেপির পক্ষে কোনও পুরসভা দখল সম্ভব হত? উত্তরটা যে ‘না’ তা এদিন ফলাফল বেরনোর পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহার কথাতেই স্পষ্ট। তিনি যা বলেছেন তার মর্মার্থ হল, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হলে বিজেপি কলকাতা পুরসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হত। অর্থাৎ বোর্ড দখল সম্ভব ছিল না তা একপ্রকার মেনে নিয়েছেন রাহুলবাবু। সারা রাজ্যের সামগ্রিক চিত্রটাও প্রায় একই। সিপিএম এখনও সেই অশোক ভট্টাচার্যের মতো নেতাদের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে অন্যদিকে সিপিএম বা কংগ্রেস এর অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হওয়ার পথে। নতুন নেতা তৈরি করতে না পেরে বামেদের এখনও অশোক ভট্টাচার্যের মতো নেতাদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। প্রায় বানপ্রস্থে চলে যাওয়া নেতারা কোনদিক ধরে রাখবেন তা বুঝে ওঠার আগেই ‘কেল্লা ফতে’ করে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। এছাড়া অধীর চোধুরীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস আর কেন্দ্রে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস প্রায় সমার্থক। দলের নেতাদের অনেকেই চাইছেন না এঁরা চেয়ার দখল করে থাকুন। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে কংগ্রেসের সঙ্গে। এদিনের ভোটের পরে দেখা যাচ্ছে প্রায় সবকটি জায়গাতেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। ৯২ টি পুরসভার মধ্যে ৭০ টি জিতেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কংগ্রেস ৫ টি, বামেরা জিতেছে ৬ টি ও ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে ১১ টি পুরসভা। এখনও অটুট মমতা ম্যাজিক অর্থাৎ এখনও অটুট মমতা ম্যাজিক। তাই বিরোধীরা যদি তৃণমূলের সমালোচনা করার পাশাপাশি মানুষের পাশে থেকে সংগঠন মজবুত করার দিকে নজর দেন তাহলে আগামী দিনে রাজ্যে ‘সুদিন’ ফিরতে পারে। শাসক দলের গুন্ডাবাহিনীর দিকে আঙুল না তুলে মজবুত সংগঠন ও গণপ্রতিরোধই সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশকে টিঁকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। আর তা না হলে প্রতিবার ভোট হবে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে শোনা যাবে বিরোধীপক্ষকে। ২০১৬ বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধীদের তাই আরও সতর্ক হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
জিততে পারতেন কি ? রিগিং না হলেও, বিরোধীরা সমালোচনা করুন
মঙ্গলবার,২৮/০৪/২০১৫
662