বিশিষ্ট ডাঃ রঞ্জন শর্মা খবরইন্ডিয়াঅনলাই পত্রিকার জন্য কলম ধরলেন।


রবিবার,২৬/০৪/২০১৫
497

বেশি বয়সে হার্টের অসুখের মোকাবিলায় কমপ্লেক্স অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি।
একটা সময় ছিল যখন বেশি বয়সে হার্টের অসুখ হলে রোগীকে ওষুধ দিয়ে ঘরবন্দী করে রাখা ছাড়া উপায় ছিল না। তবে অত্যাধুনিক টেকনোলজি ক্যাথ ল্যাব ও চিকিৎসকের দক্ষতার সাহায্যে বয়স্ক মানুষদের হার্টের জটিল সমস্যার সমাধান করছেন কমপ্লেক্স অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সাহায্যে। এই সম্পর্কে নানান তথ্য জানালেন কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ রঞ্জন শর্মা।
মডার্ন মেডিক্যাল সায়েন্সের কল্যানে মানুষের গড় আয়ু এখন অনেক বেড়েছে। আর বেশি বয়সে লাইফ স্টাইল ডিজিজ অর্থাৎ হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়বিটিস। কোলেস্টেরল এবং কার্ডিও ভাসক্যুলার ডিজিজ অর্থাৎ হার্টের অসুখের প্রবণতা বাড়ে। তাই হার্ট অ্যাটাক হলে ব্যাপারটা বেশ জটিল হয়ে দাঁড়ায়। দ্রুত সঠিক চিকিৎসার সাহায্য না নিলে প্রাণ সংশয় হতে পারে।
কী কী সমস্যাঃ-
—————
৭০ বছর বা তারও বেশি বয়সের মানুষদের ডায়াবিটিস ও ব্লাড প্রেশার থাকাটা স্বাভাবিক। আর সেডেন্টারি লাইফ স্টাইল হলে তো কথাই নেই। হার্টের অসুখের প্রবণতা খুবই বাড়ে। বেশির ভাগ মানুষ কোনও রকম শারীরিক অসুবিধে না হলে রেগুলার হেলথ চেক আপ করেন না। তাই আচমকা হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীর অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে।
হার্টের অসুখের কারণঃ-
———————–
হার্ট যেমন অনবরত অক্সিজেন যুক্ত রক্ত পাম্প করে শরীরের বিভিন্ন কোষে কোষে পৌঁছে দিচ্ছে, সেরকমই হার্টের পেশিরও বাঁচবার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত। হার্টে এই রক্ত পৌঁছয় করোনারি আর্টারির মাধ্যমে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তবাহী ধমনীর মধ্যে চর্বির আস্তরণ জমতে থাকে। এই ব্যাপারটাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে অ্যাথেরোস্ ক্লেরোসিস। বয়স ছাড়াও অ্যাথোরোস্ ক্লেরোসিসের গতি বাড়িয়ে দেয় স্মোকিং, ওভার ওয়েট, এক্সারসাইজের অভাব, মানসিক চাপ, হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়বিটিস, বংশগত কারণ, ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি। ধমনীর ভেতরে প্লেক জমতে শুরু করলে হার্টের পেশি প্রয়োজনীয় রক্তের অভাবে হাঁপিয়ে পড়ে। এর ফলেই হার্টের অসুখ হয়। বেশি বয়সে অনেকেরই ধমনীর প্রাচীরে জমা কোলেস্টেরলের প্লেক জমে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। এছাড়া বেশি বয়সে ডায়বিটিস, হাইপ্রেসার, ফুসফুসের দুর্বলতা সহ নানান শারিরীক সমস্যা থাকতে পারে। অনেকের আবার কিডনিও ঠিক মতো কাজ করে না। এই অবস্থায় হার্টের সঠিক চিকিৎসা না করলে রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে।
কমপ্লেক্স অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিঃ-
————————
কিছুদিন আগেও এই ধরণের হার্টের সমস্যায় বাইপাস সার্জারির কথা বিবেচনা করা হত। কিন্তু রোগীর বয়স ও অন্যান্য শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে বাইপাস সার্জারি করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির মেশিন রোটাব্লেডারের সাহায্যে ডায়মন্ড বা হিরে দিয়ে ধমনীতে জমে থাকা পাথর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরই ডাক্তারি নাম অ্যাথেরোক্টমি। করোনারি আর্টারির এই ধরনের কমপ্লেক্স লিশন রোটাব্লেডারের সাহায্যে সরিয়ে দিয়ে বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়। আর একেই বলে কমপ্লেক্স অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। প্রসঙ্গত রোটাব্লেডারের সাহায্যে ধমনীর পাথর গুঁড়িয়ে দেবার জন্য রোগীকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না। বেড়ের পাশে রাখা মনিটরে রোগী নিজেই এই পদ্ধতিটি দেখতে পান। কুঁচকি বা হাতের ধমনী দিয়ে সূক্ষ্ন ক্যাথিটার প্রবেশ করিয়ে সমগ্র পদ্ধতিটি করা হয়। পাথর সরিয়ে রাস্তা পরিস্কার করার পর, ওই অংশে ড্রাগ ইলিউটিং স্টেন্ট অর্থাৎ ওষুধের প্রলেপ যুক্ত স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয় পুনরায় প্লাক জমার হাত থেকে বাঁচাতে। বয়স্ক এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছেন এমন পেশেন্টদের জন্য অ্যাথেরোক্টমি একটি অত্যন্ত উপযোগী চিকিৎসা পদ্ধতি। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান। বছরে দু’বার চেকাপ করানো আর নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া দরকার।
হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করুনঃ
——————————-
সিগারেট বিড়ির নেশা থাকলে তা অবিলম্বে ছাড়তে হবে। হাঁটা ও এক্সারসাইজ আর কাল নয়, শুরু করতে হবে আজই, এখন থেকেই। মনে রাখবেন একজন স্মোকারের হার্টের অসুখের সম্ভাবনা একজন নন স্মোকারের থেকে ৪ – ৫ গুণ বেশি। এছাড়া স্ট্রেস কমাতে নিয়মিত কয়েকটি ব্রিদিং এক্সারসাইজ ও প্রাণায়াম করা জরুরী। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। ভাজা খাবার অ্যাভয়েড করুন, দিনে অন্তত চার পাঁচটি সবজি ও দুটি গোটা ফল খান। বেশি বয়সে হার্টের ধমনীতে পাথর জমা আটকাতে এখন থেকেই সচেতন হন। ভাল থাকুন।
হেল্প লাইনঃ- ০৩৩ – ৩৯৮৯৮৯৬৯।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট