খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ বছরে অর্ধ লক্ষাধিক নারীকে পাচার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাচারের একাংশ সংগঠিত হয় দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যেই।
বেশকিছু সংস্থা নারী পাচার বিষয়ে অনুসন্ধান চালানোর পর দেখা যায়, উত্তরপ্রদেশ হলো এই পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের শেষ আশ্রয়স্থল। কেন? উত্তরটা ভীতিপ্রদ। অন্যান্য প্রদেশের চেয়ে মেয়েশিশু হত্যার হার সেখানেই সবচেয়ে বেশি। যে কারণে ক্রমশ নারীহীন হয়ে পড়ছে উত্তরপ্রদেশ!
সম্প্রতি সরকারের এক সমীক্ষায় জানা যায়, উত্তরপ্রদেশে মোট ৫৯ লাখ বিবাহযোগ্য পুরুষ আছেন যারা নারীর অভাবে বিয়ে করতে পারছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে নারীহীনতার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হয় বেশ কয়েকবার। এই অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, ১৯৭০ থেকে ৯০ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে মেয়েশিশু হত্যার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচিত গোবলয় অঞ্চলে কয়েক শত বছর ধরেই মেয়েশিশুদের বিভিন্ন কায়দায় হত্যা করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা অঞ্চলের উচ্চবর্ণের ঠাকুর থেকে শুরু করে নিচু জাতের মানুষেরা মেয়েশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ারমাত্রই তার মুখে লবন ঠেসে দিতো। নবজাতকের শরীরে লবনের বিষক্রিয়ায় জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যেতো শিশুটি। এরপর সেই আঁতুড়ঘরেই মাটিচাপা দেয়া হতো মৃত নবজাতককে। বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম স্লীম্যানের রচিত A Journey through the Kingdom of Oude, Volumes I & II বইয়ে উত্তরপ্রদেশের মেয়েশিশুদের উপর বর্বরতার বিস্তারিত আখ্যান পাওয়া যাবে। লেখক উইলিয়াম ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বইটি রচনা করেছিলেন।
সাম্প্রতিক আদমশুমারী থেকে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, উত্তরপ্রদেশে কুড়ি বছর বয়সসীমার তরুণ যখন ৮০ লাখ ৫৬ হাজার, তখন একই বয়সসীমার তরুণী মাত্র ২৮ লাখ ২৬ হাজার। এর ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে ত্রিশ বছর বয়সসীমার নারীপুরুষের ক্ষেত্রেও। ত্রিশের কোঠার পুরুষ যখন নয় লাখ ১৩ হাজার, একই বয়সী নারী তখন এক লাখ ৯৫ হাজার। চল্লিশের কোঠার পুরুষসংখ্যা তিন লাখ তিন হাজার, চল্লিশের কোঠার নারীসংখ্যা মাত্র ৫৯ হাজার ৪০০।
অপর এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, হরিয়ানা রাজ্যে প্রতি এক হাজার গর্ভধারিনী নারীর মধ্যে ১৫০-২২৫জন নারীর গর্ভের মেয়েশিশু গর্ভেই হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও ভারতে বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন মেয়েশিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। কোথাও গর্ভে থাকাকালীন, কোথাও জন্মের পর লবন খাইয়ে কিংবা গলা টিপে। মেনকা গান্ধীর দেয়া তথ্য মোতাবেক, দেশে প্রতিদিন দুই হাজার মেয়ে শিশুকে গর্ভে থাকাকালীন সময়েই হত্যা করা হয়।
উত্তরপ্রদেশের নারীদের এই দুরাবস্থা ঠেকাতে বেশকিছু বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এসেছে। এরকম কয়েকটি এনজিও মারফত জানা যায়, উত্তরপ্রদেশের অনেক নারীই অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য ভিন্নধর্মের পুরুষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবন বাঁচাচ্ছেন। পাশাপাশি অনেকে ভিন্ন রাজ্যে পালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১১ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, উত্তরপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে একজন নারীকে একের অধিক পুরুষ মিলে বিয়ে করছেন। শুধু তাই নয়, ওই রিপোর্টে ভিন্ন রাজ্য থেকে নারী অপহরণ করে এনে জোরপূর্বক বিয়ে করার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছিল। এ দুটি তথ্য আমাদের উত্তরপ্রদেশের সামগ্রিক অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে। এছাড়া চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি রাজনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় সরকারের নারী এবং শিশু উন্নয়নমন্ত্রী মেনকা গান্ধী এক বক্তব্যে বলেন, গত কয়েক বছরে হরিয়ানার ৭০টি গ্রামে কোনো মেয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করেনি।