রক্তের ক্যানসার সারায় বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশন
—————————————————
ব্লাড ক্যানসার শব্দটা শুনলেই শিড়দাঁড়া দিয়ে এক হিমশীতল স্রোত বয়ে যায়। কিন্তু ভয় পেলে তো অসুখ সারবে না, চাই যথাযথ চিকিৎসা। লিউকিমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, লিম্ফোমা, মাল্টিপিল মায়লোমা সহ রক্তের নানান জটিল রোগ সারাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন। এই বিষয়ে নানান তথ্য জানালেন অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট হেমাটো অঙ্কোলজিস্ট ডাঃ জয়দীপ চক্রবর্তী।
কিডনি খারাপ হয়ে গেলে যেমন কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশন করতে হয় তেমনই বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জার গুরুতর ও জটিল সমস্যা যখন কোনও ওষুধেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তখন তা বদলে ফেলে নতুন বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন করে রোগ সারানো হয়। ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের প্রসঙ্গ উঠলেই অনেকে বড়সড় সার্জারির কথা মনে আসে। কিন্তু এক্ষেত্রে সার্জারির দরকার হয় না। রক্তের মতো অর্থাৎ ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মতো ইন্টারভেনাস পদ্ধতিতে শিরার মধ্যে দিয়ে রোগীর শরীরে অস্থিমজ্জা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কী কী অসুখে এই চিকিৎসা দরকারঃ
——————————–
বিভিন্ন ধরনের লিউকিমিয়া বা রক্তের ক্যানসার যেমন এএলএল বা অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকিমিয়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাকিউট মাইলয়েড লিউকিমিয়া, ক্রনিক মাইলয়েড লিউকিমেয়া, মায়লোমা, রিল্যাপ্সড হজকিন্স ও নন হজকিন্স লিম্ফোমা।, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি অসুখ সরাতে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
কাদের বোন ম্যারো নেওয়া হয়ঃ
—————————
সব থেকে ভাল ফল পাওয়া যায় রোগীর যমজ ভাই বা বোনের থেকে অস্থিমজ্জা নিয়ে প্রতিস্থাপন করলে। কিন্তু সবসময় তো তা সম্ভব হয় না, তাই ভাই বোন, বাবা মা অথবা কোনও আত্নীয় নিতান্ত না হলে অনাত্নীয়র বোন ম্যারো নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে দাতার সঙ্গে গ্রহীতার বোন ম্যারোর এইচএলএ অর্থাৎ হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন ম্যাচ করাতেই হবে। মোট দশটি অ্যান্টিজেন ম্যাচ করলে রোগী দ্রুত সেরে ওঠেন। কিন্তু অনেক সময় নিখুঁত ম্যাচিং পাওয়া সম্ভব হয় না বলে আটটি বা ন’টি ম্যাচিং নিয়েই কাজ করা হয়।
ম্যাচিং না হলে সমস্যা বাড়েঃ
————————-
এইচএলএ ম্যাচিং না হলে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করালে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমত গ্রাফট রিজেকশন অর্থাৎ ট্রান্সপ্ল্যান্ট সথল না হতে পারে। দ্বিতীয়ত গ্রাফ্ট ভাসাস হোস্ট ডিজিজ এর সম্ভাবনা ভীষণ ভাবে বাড়ে। এর লে ত্বকে রাশ ও কোলাজেন জমে স্ক্লেরোডামা হবার সম্ভাবনা বাড়ে। অন্যদিকে ডায়রিয়া ও জন্ডিসের প্রবণতা বাড়ে। অবশ্য কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহার করে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্ল্যান্টের পরঃ
————————–
মারণ অসুখ সারাতে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করার আগে রোগগ্রস্ত মজ্জাকে কড়া ডোজে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির সাহায্যে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তারপর দাতার বোন ম্যারো ব্লাড ট্র্যান্সফিউশনের মতো শিরার মাধ্যমে রোগীর শরীরে দেওয়া হয়। এই ব্যাপারটা লিখতে বা পড়তে সহজ লাগলেও ব্যাপারটা আদতে অত্যন্ত জটিল সে কথা বলাই বাহুল্য। রক্তের অসুখে আক্রান্ত মানুষটির বোনম্যারো নষ্ট করে দেওয়ার জন্য তার সংক্রমণের সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়। সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে রোগীকে ল্যামিনার ফ্লো যুক্ত প্রায় জীবাণুহীন ঘরে রাখতেই হয়। এমনকী চিকিৎসক ও চিকিৎসা সহায়ক কর্মীরা রোগীকে দেখেন রোবোটিক পোশাক পরে, যাতে তাদের থেকে কোনও জীবাণু রোগীকে আক্রমণ না করে। অ্যাপোলো হাসপাতালের বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটে ল্যামিনার ফ্লো সহ রোবোটিক পোশাক তো বটেই এমনকী রোগীর সঙ্গে বাড়ির লোকজনের কথা বলানো হয় ভিডিও কলের মাধ্যমে। এই ভাবেই রোগীকে সুরক্ষিত রেখে তাকে সুস্থ কর তোলা হয়। রক্তের ক্যানসারের চিকিৎসায় বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশন অনেক মৃত্যু পথ যাত্রীকে জীবনের আলোয় ফিরিয়ে এনেছে। ক্যানসার নামক ভয়ানক রোগ শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ কাউকে রেহাই দেয় না। এই চিকিৎসার সাহায্যে রোগী আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তবে যথেষ্ট কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বলে রোগী ও বাড়ির লোকজনদের ধৈয্য ধরে চিকিৎসার পাশাপাশি কাউন্সেলিং করা দরকার। ভয় পাবেন না, সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নিন সবাই ভাল থাকুন।
পাঠকদের অনুরোধে বিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ জয়দীপ চক্রবর্তী কলম ধরলেন
মঙ্গলবার,২১/০৪/২০১৫
577