খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ ‘শিশুর বিকাশে অবিচল আমরা’ এই শ্লোগানটিকে সামনে রেখে আনন ফাউন্ডেশন শিশুর বিকাশে ভূমিকা রেখে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আনন ফাউন্ডেশন কর্তৃক আনন শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৫ ঘোষণা করা হয়েছে। আনন শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৫ পেতে যাচ্ছেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় তাঁদেরকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। পুরস্কারের মূল্যমান হিসেবে তাঁরা প্রত্যেকে নগদ এক লাখ টাকা, একটি ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র পাবেন। আগামী ১২ মে ২০১৫ আনন ফাউন্ডেশন-এর তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানের (আগামী ৩০ মে ২০১৫ শনিবার বিকাল ৫টায় জাতীয় গণগন্থগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনয়াতনে এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে) মাধ্যমে তাঁদেরকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। উল্লেখ্য, আনন শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৩ পেয়েছিলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফারুক নওয়াজ ও আনন শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৪ পেয়েছিলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক মাহমুদউল্লাহ। আনন ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা-২০১৩ পেয়েছিলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া ও আনন ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা-২০১৪ পেয়েছিলেন বিশিষ্ট শিশুসংগঠক ও ছড়াকার মোহাম্মদ মোস্তফা।
শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন ১৯৪৫ সালের ১ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমনুরায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস নাটোর জেলার লালপুর উপজেলাধীন নুরুল্লাপুর গ্রামে। পেশাগত জীবনের শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে। চাকরি করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক পত্রপত্রিকায়। বর্তমানে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থার পাণ্ডুলিপি সম্পাদক। আখতার হুসেনের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘সমুদ্র অনেক বড়’, ‘রামধনুকের সাঁকো’, ‘দি টাইগার ও অন্যান্য গল্প’, ‘উল্টোপাল্টা’, ‘হালচাল’, ‘আমার দুটো ডানা’, ‘ও হাওয়া ও হাওয়া’, ‘সেই যে আমার প্রাণের মিতে নদী’, ‘ফ্রিডম ফাইটার’, ‘কর্ণকুসুম ও কালোপাখার প্রজাপতি’, ‘খেলাঘরের পুতুলগুলো’, ‘ছোটদের চারণ কবি মুকুন্দদাস’, ‘সোনায় মোড়া ছড়া’, ‘সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি’, ‘পাজি বেড়ালের শাস্তি’ ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কার’, ‘ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার স্মৃতিপদক’, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ‘মনিরউদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার’, ‘এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’, ‘বজলুর রহমান সম্মাননা স্মারক’সহ আরও অনেক সংবর্ধনা স্মারক। আখতার হুসেন বাংলা একাডেমির ফেলো।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এ কে মোশাররফ হোসেন এবং মাতা মরিয়মন্নেসা বকুল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি লেখালেখি শুরু করেছিলেন। বিশ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলা একাডেমি থেকে শিশু-কিশোরদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা ‘ধানশালিকের দেশ’ সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান। সেলিনা হোসেন কথাসাহিত্যিক হিসেবে সকল মহলে সুপরিচিত ও সমৃদ্ধ হলেও তাঁর শিশুসাহিত্যকর্মও শিশুদের জন্য একটি বিশাল ভাণ্ডার। তিনি শিশুদের জন্য যে সকল গ্রন্থ রচনা করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘জ্যোৎস্নার রঙে আঁকা ছবি’, ‘সাগর’, ‘কাকতাড়ুয়া’, ‘বর্ণমালার গল্প’, ‘যখন বৃষ্টি নামে’, ‘মেয়রের গাড়ি’, ‘এক রুপোলী নদী’, ‘আকাশপরী’, ‘চাঁদের বুড়ির পান্তা ইলিশ’, ‘নীলটুনির বন্ধু, ‘নদীটির ঘুম ভেঙেছে’, ‘ফুলকলি প্রধানমন্ত্রী হবে’, ‘আমার স্কুল’, ‘বায়ান্নো থেকে একাত্তর’, ‘সোনারতরীর ছোটমণিরা’, ‘গল্পটা শেষ হয় না’, ‘মুক্তিযোদ্ধারা’, ‘কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ’, ‘অন্যরকম যাওয়া’, ‘একালের পান্তা বুড়ি’ ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ‘ড. মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক’, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার’, ‘শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ‘জাতীয় পুরস্কার একুশে পদক’, ‘দিল্লির ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট থেকে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’, ‘রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা থেকে ডিলিট উপাধিসহ নানা পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। শিশুসাহিত্যের জন্য পেয়েছেন ‘এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’, ‘ইউরো শিশুসাহিত্য পুরস্কার’ ইত্যাদি। সেলিনা হোসেন বাংলা একাডেমির ফেলো।