রঞ্জন ও প্রদীপ মারাকের যাবজ্জীবন


বুধবার,০৮/০৪/২০১৫
735

খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ  রঞ্জন চৌধুরী ওরফে মেজর রঞ্জনের সাজার আদেশ হয়েছে অস্ত্র ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দুই মামলায়। অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ওই সাজা হয়েছে প্রদীপ মারাকের।

পাঁচ বছর আগে ভৈরবে গ্রেপ্তার দুই আসামির উপস্থিতিতে কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মাহবুবুল ইসলাম বুধবার এই রায় ঘোষণা করেন।

উলফা নেতা রঞ্জন ও তার সহযোগী প্রদীপকে ২০১০ সালের ১৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের ভৈরবের লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি রিভলবার, গুলি ও চারটি গ্রেনেড উদ্ধারের কথা জানানো হয় সে সময়।

র‌্যাব-৯ ভৈরব ক্যাম্পের উপ সহকারী পরিচালক (ডিএডি) করিম উল্লাহ ওইদিনই অস্ত্র, বিস্ফোরক, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চারটি মামলা দায়ের করেন।

এর মধ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলাটি ছাড়া বাকি তিন মামলায় পরের বছর ৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছর ৩ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জের আদালতে রঞ্জন ও প্রদীপের বিচার শুরু হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অস্ত্র ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার রায়ের জন্য ৮ এপ্রিল দিন ঠিক করে দেন বিচারক।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাহ আজিজুল হক। আসামিপক্ষে ছিলেন মিজানুর রহমান।

ওই দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১৯৮৮ সালে উলফা নেতা অবিনাশ অধিকারী ও দিগন্ত দাসের মাধ্যমে রঞ্জন চৌধুরী এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে আসামের গোয়ালপাড়া ও মেঘালয় এলাকায় তিন মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় ধুবড়ী জেলা উলফার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। সামরিক প্রশিক্ষণে দক্ষ বলে তাকে ডাকা হয় ‘মেজর রঞ্জন’ বলে।

এই উলফা নেতা রঞ্জন সিসিম, প্রদীপ রায়, দ্বীপ জ্যোতি, রঞ্জু বাড়ৈ, মাসুদ চৌধুরী নামেও বিভিন্ন সময়ে কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

রঞ্জনের বাড়ি ভারতের আসামে ধুবরীর গৌরীপুরের মধু শৌলমারি এলাকায়। ১৯৯৫ সালে নিজের দেশে একবছর কারাভোগ শেষে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন এবং উলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী শেরপুরের ঝিনাইগাতির গজনীতে অবস্থান নিয়ে ১৯৯৭ সাল থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকেন বলে সে সময় র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়।

স্থানীয়দের সন্দেহ দূর করতে রঞ্জন ২০০১ সালে সাবিত্রি ভ্রুম নামের একজনকে বিয়েও করেন। বলা হয়, সেই বিয়েতে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ও শশধর চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

প্রদীপ মারাক এক সময় শেরপুরের স্থানীয় একটি এনজিওতে চাকরি করলেও রঞ্জনের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তা ছেড়ে দিয়ে উলফার সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা শুরু করেন।

উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াও ২০০৯ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশে আটক হয়েছিলেন বলে সে সময় সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার আটকের পর রাজখোয়াকে ভারতের কাছে তুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সে সময় আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় উলফা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

রাজখোয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে মিজানুর রহমান চৌধুরী নামে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে ছিলেন বলে প্রমাণও পাওয়া যায় সে সময়।

তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ওই বছর ডিসেম্বরে নিজেদের ভূখণ্ড থেকে উলফা চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের কথা বলে এবং শান্তি আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পরে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

উলফার সামরিক শাখার কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যাওয়া আসা করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গতবছর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বাংলাদেশের আদালত। ওই রায়ের সময় পরেশ রুইলি নামের এক চীনা শহরে অবস্থান করছিলেন বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের তথ্য।

আর উলফার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ, বিদেশি মুদ্রা রাখা এবং স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে তিনটি মামলায় তাকে যথাক্রমে তিন, চার ও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সেই সাজার মেয়াদ ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও এখনো তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।

বিভিন্ন সময়ে অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ নেয়নি।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় উলফা। এরপর দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র তৎপরতা চালায় সংগঠনটি।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট