নাবালিকার ছাত্রীর বিয়ে রুখল রাইপুর ব্লক প্রশাসন


মঙ্গলবার,১০/০৩/২০১৫
881

সাধন মণ্ডল, রাইপুর, বাঁকুড়াঃ বিয়ের প্রস্তুতি শেষের মুখে। কেনা হয়েছিল লালচেরীর শাড়ী, সিন্দুরের কৌটো, ফুলের মালা হাজির কনে এবং কনের পক্ষের লোকজন। একটু পরেই বর এসে পড়বে কিন্তু বিধি বাম। বরের আসতে দেরী থাকায় লোভ সামলাতে না পারা নাবালিকা রাইপুর ব্লকের শাস্ত্রীনগর ঈশানচন্দ্র বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণীর ছাত্রী অর্পিতা মণ্ডল ( ১৬ ) পঃবঙ্গ সরকারের দেওয়া সাইকেল নিতে ( কনের সাজে সেজে ) রাইপুর বিডিও অফিস সংলগ্ন কমিউনিটি হলে উপস্থিত হয়। বিপত্তি এখানেই। কনেকে দেখে সাইকেল বিলি করার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক তাপস মাহাত ও শশধর সর্দার -এর সন্দেহ হয় কিন্তু তাকে সাইকেল দিয়ে দেওয়া হয়। ততক্ষণে কে বা কারা বিডিও দীপঙ্কর দাসকে মোবাইলে ঘটনার কথা জানান। সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ ফেলে বিডিও সাহেব ছুটে যান সাইকেল প্রদান অনুষ্ঠানে ততক্ষণ মেয়েটি সাইকেল নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে। বিডিও সাহেব খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন স্থানীয় মা মহামায়ার মন্দিরে বিয়ে হচ্ছে নাবালিকা অর্পিতার সঙ্গে। এই শুনে বিডিও গাড়ী নিয়ে পুলিশ সহ হাজির হন মন্দিরে। মেয়ে ও মেয়ের বাবাকে বোঝানো শুরু করেন। দীর্ঘক্ষণ বোঝানোর পর মেয়ের বাবা তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং বলেন, ‘ আমি গরীব মানুষ চারটি মেয়ে, মেয়েদের বিয়ে দিতে পারলেই কন্যাদায় থেকে মুক্তি হই। আমি মূর্খ মানুষ অতসত বুঝি না। বিডিও সাহেব আমার চোখ খুলে দিলেন। তাই আমি ভাবলাম আর মেয়ের আঠারো বছরের আগে বিয়ে দেবো না। মেয়ে আমার আরো লেখাপড়া করবে। সরকার যেন এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেন। তবে এই ঘটনার পর গ্রামে একটা সামাজিক লাঞ্ছনা ও গঞ্ছনা সইতে হবে। লোকে বলাবলি করবে লগ্নভ্রষ্টা মেয়ে। এই দিকটা যেন প্রশাসন একটু দেখেন।’ রাইপুর থানার পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ সাহায্য করবে বলে জানান।
ঘটনার বিবরণ হল মেয়েটির সারেঙ্গা ব্লকের গাংনালা গ্রামের বাসিন্দা, পিতা পতিত পাবন মণ্ডল। পাত্র হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার লালগড় থানার জামদা গ্রামের বাসিন্দা সৌতম মাইতি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় পাত্র নেই, পাত্রী লাল চেরীর শাড়ী পরে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিচ্ছে যে আঠারো বছর বয়স হলে তবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে।
রাইপুর ব্লকের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘ ওই ছাত্রীটি কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় যাতে সাহায্য পায় তা দেখা হবে। আর যদি হোস্টলে থেকে পড়াশোনা করতে চায় তাহলে রাইপুর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদা ছাত্রীনিবাসে থেকে যাতে পড়াশোনা করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’ উল্লেখ্য গত এক বছরে এই নিয়ে জঙ্গলমহলে তিনজন নাবালিকার বিয়ে রুখলেন রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস। বাল্যবিবাহ রোধে আজকের ঘটনাটি একটি মাইলস্টোন।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট