Categories: রাজ্য

বিড়ি শিল্পে সংকট, পুনর্বাসনের দাবি বিড়ি শ্রমিকদের

সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়াঃ আগামী দিনে নিজেদের জীবিকা বিপন্ন হতে চলেছে বলে আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন পুরুলিয়া জেলার প্রায় এক লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। আগামী পয়লা এপ্রিল থেকে কেন্দ্র সরকারের সংশোধিত তামাক বিরোধী আইন অনুযায়ী বিড়ির প্যাকেটের শতকরা ৮০ শতাংশ ক্যানসার আক্রান্তের বিভৎস ছবি ছাপাতে হবে। বিড়ি শিল্প ও বিপননের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের ধারনা এমনটা হলে বিড়ি সেবনকারীদের সংখ্যা কমে যাবে ব্যাপক হারে। স্বাভাবিকভাবেই কমবে বিড়ি উৎপাদন। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বিড়ি শ্রমিকদের উপর। পুরুলিয়া জেলার ঝালদা ও জয়পুরের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ নানা ভাবে নির্ভরশীল এই বিড়ি শিল্পের উপর। এই অঞ্চলের প্রধান জীবিকাই হল বিড়ি। গ্রামের দরিদ্র মানুষজন কেন্দু পাতা বা বিড়িপাতা তুলে এবং বিড়ি বেঁধে রোজগার করেন। এটি পারিবারিক শিল্প হওয়ায় বেশীরভাগ জায়গাতেই পুরো পরিবার যুক্ত রয়েছে এই কাজে। বারবেন্দা, বেগুনকোদরের মত গ্রামগুলির বিড়ি শ্রমিকরা বলেন বিড়ি শিল্পে যুক্ত থেকে পরিবার পিছু তারা দৈনিক দুশো টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন। নতুন আইনের ফলে বিড়ির প্যাকেটের গায়ের প্রায় পুরোটাতেই লাগাতে হবে ক্যান্সার আক্রান্তের ছবি। ফলে অনেক কমে যাবে বিড়ি বিক্রি। এই পরিস্থিতিতে সরকার তাদের জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করলে এই শ্রমিকদের পরিবারগুলি নিরন্ন হয়ে যাবে। পুরুলিয়ার অন্যতম বিড়ি প্রস্ত্ততকারি একটি সংস্থার কর্ণধার মহেশ ভাই প্যাটেলও অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের দাবি তুলে বলেন সারা ভারতে বিড়ি শিল্পের সঙ্গে তিন কোটি শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন। এই রাজ্যে মুর্শিদাবাদ, মালদার পরই পুরুলিয়া জেলায় প্রায় এক লক্ষ শ্রমিক এই কাজে যুক্ত রয়েছেন। আগামী ১ এপ্রিল থেকে কেন্দ্র সরকারের সংশোধিত তামাক আইন, ২০০৮ এবং কেন্দ্রিয় শুল্ক আইন, ১৯৪৪ লাগু হতে চলেছে। এই আইনে বলা হয়েছে তামাকজাত বস্তুর মোড়কে শতকরা ৮০ শতাংশ ক্যান্সারের বিভৎস ছবি ছাপাতে হবে এবং যা রোটেশন অনুযায়ী পাল্টাতে হবে। এছাড়া উৎপাদনের ও ব্যাবহারের সময় সীমাসহ অন্যান্য তথ্য ওই বাকি ২০ শতাংশ স্থানে ছাপতে হবে। এছাড়া সরকারী সব বিধি মেনে বাজারজাত করতে হবে প্রস্ত্ততকারীদের। এর ফলে বিড়ির বিক্রি তলানিতে ঠেকবে। পুনর্বাসনের দাবি তুলে পুরুলিয়া জেলা ব্রাণ্ডেড বিড়ি প্রস্ত্তকারী কো-অডিনেশন কমিটির সম্পাদক রায়মোহন শাহ বলেন বিড়ি মালিক সংগঠন সরকারী আইন মানতে বাধ্য। কিন্তু আইন কার্যকারী কার আগে বিকল্পটা অবশ্যই ভাবতে হবে। তা না হলে মালিকদের থেকে বেশি সংকটে পড়বেন শ্রমিকরা। পুরুলিয়া জেলাতে এমনিতেই শিল্প বলে কিছু নেই। সেখানে এই কুটির শিল্পটির অবলুপ্তি ঘটলে হাজার হাজার শ্রমিকের দুর্দশার শেষ থাকবে না। এই পরিস্থিতির আগে কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে ধর্মঘট সহ লাগাতার আন্দোলন শুরু করা হবে বলে জানান এই শ্রমিক নেতা।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…

2 months ago

কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত।

১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…

2 months ago

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

2 months ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

2 months ago

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ আজ, অপেক্ষা ভোটের দিন ঘোষণার

জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…

2 months ago

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে তীব্র ভূমিকম্পে ৫৩ জনের মৃত্যু, আহত ৬২ জন

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আরও ৬২…

2 months ago