Categories: রাজ্য

ছেলের সাক্ষ্যে বাবার সশ্রম কারাদণ্ড

খাইরুল আনাম, বোলপুর, বীরভূমঃ ছেলের সাক্ষ্যে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হলো বাবার। ১৬ ফেব্রুয়ারি এই সাজা দিলেন বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধাথ রায়চৌধুরী। সাজাপ্রাপ্ত লাভপুর থানার বাকুল গ্রামের রঘুনাথ বাউড়ী এতদিন জেল হাজতে ছিল। স্ত্রী কল্পনাদেবীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। সন্দেহাভীতভাবে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাঁকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। স্ত্রী হত্যার ওই ঘটনাটি ঘটেছিল লাভপুর থানার বাকুল গ্রামে। লাভপুরেরই মোন্তলি গ্রামের সুকুমার পত্রধরের মেয়ে কল্পনার বছর বারো আগে বিয়ে হয় বাকুল গ্রামের রামপ্রসাদ বাউড়ীর ছেলে রঘুনাথ বাউড়ীর। বিয়ের পর থেকেই কল্পনার উপরে তাঁর স্বামী শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতো বলে অভিযোগ। দুই সন্তানের সামনেই কল্পনার উপরে অত্যাচার করা হতো। ২০১৩ সালের ৯ জুন রাত ৯ টা নাগাদ রঘুনাথ ঘরের মধ্যে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে, ঘরের দরজা বাইরে থেকে শিকল তুলে বন্ধ করে দিয়ে বাড়ীর বাইরে চলে যায়। এর আগেও সে স্ত্রীর উপরে অত্যাচার করলেও, এদিনের অত্যাচারের মাত্রা এই ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ঘরের ভিতর থেকে মা-এর চাৎকার শুনে আট বছরের ছেলে বাপন তার ছ’বছরের ভাইকে নিয়ে কোনক্রমে দরজা খুলে দিলে মা ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ীর উঠোনে এসে পড়েন। তখন তাঁর শরীর দাউ দাউ করে জ্বলছে। বাপন বালতি করে জল এনে মা-এর শরীরে ঢেলে আগুন নেভায়। তাদের চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় কল্পনাদেবীকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় লাভপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল হয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কল্পনাদেবীর বাবা ১৩ জুন জামাইয়ের বিরুদ্ধে মেয়ের খুনের চেষ্টা – সহ একাধিক ধারায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুন মারা যান কল্পনাদেবী। ঘটনার পর থেকেই ফেরার হয়ে যায় অভিযুক্ত রঘুনাথ বাউড়ী। পলাতক রঘুনাথ বাউড়ীর বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৪৯৮ক ( বধূ নির্যাতন ), ৩০৭ ( খুনের চেষ্টা ), এবং ৩২৬ ( অস্ত্র দিয়ে আঘাত ) ধারায় মামলা রজু করে। কল্পনাদেবীর মৃত্যুর পরে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা ( খুন) যুক্ত করে। এক বছরের বেশি সময় ধরে রঘুনাথ বাউড়ী ফেরার থাকার পরে গত বছরের ১৬ জুন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেই সময় থেকে সে জেল হাজতে ছিল। বিগত বছরের ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হয়। এই মামলায় মৃতা কল্পনাদেবীর ছেলে বাপন-সহ ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। রঘুনাথের এই নৃশংসভাবে স্ত্রী হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী নাবালক ছেলে বাপনের সাক্ষ্য দোষীকে সাজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বলে জানা গিয়েছে। মৃতার দুই নাবালক ছেলে এখন তাঁর দাদুর কাছে থাকছে।।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

3 days ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

3 days ago

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ আজ, অপেক্ষা ভোটের দিন ঘোষণার

জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…

3 days ago

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে তীব্র ভূমিকম্পে ৫৩ জনের মৃত্যু, আহত ৬২ জন

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আরও ৬২…

3 days ago

রিয়্যালিটি শো’-র প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা থেকে নারী পাচারের চেষ্টা

রিয়্যালিটি শো'-র প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা থেকে নারী পাচারের চেষ্টা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তিনজনের বয়স মাত্র ১৭,…

3 days ago

শহরের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা

সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরব সহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ পাকিস্তানের অন্তত ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন…

3 weeks ago