সঞ্চিতা মুখার্জি, পুরুলিয়াঃ পুরুলিয়ার গড় পঞ্চকোট পাহাড়ে পুরুলিয়া মিনি জু থেকে ছাড়া হবে হরিণ। পুরুলিয়া জেলা তার নিজস্ব অরণ্য সম্পদে দারুন ভাবে সমৃদ্ধ। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিস্তীণ অরণ্যের সব থেকে বড় আকর্ষণ হল বন্যপ্রাণ। গত দুদশকে পুরুলিয়ার বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমেছে উদ্বেগজনক হারে। এবার কৃত্তিম ভাবে তা বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু হল জেলায়। অরণ্য বেষ্টিত পুরুলিয়া জেলার উত্তর পূর্বাঞ্চলে রয়েছে গড় পঞ্চকোট পাহাড় বা পাঞ্চেত। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের পর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এই পাহাড় ও অরণ্য। এই পাহাড়ে এক সময় বাঘের স্থায়ী বাসস্থান ছিল বলে শোনা যায়। এখনও এখানে হায়না ও নেকড়ে সহজেই দেখা যায়। হিংস্র এই প্রাণীগুলি ছাড়াও এখানে রয়েছে হরিণ, খরগোশ বন শুয়োর সহ বহু রকমের জন্তু জানোয়ার। রয়েছে নানা প্রজাতির সরীসৃপ ও পতঙ্গ। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও দেখা যায় এখানে। ঘন অরণ্য থাকলেও বর্তমানে নানা কারণে এই জঙ্গলে ইকো – সিস্টেম নষ্ট হতে বসেছে। অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে পশু ও পক্ষী কুল। আর এদের টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগী হয়েছে বন দপ্তর। প্রাথমিক ভাবে এই জঙ্গলে দেখা গিয়েছে চিতল প্রজাতির হরিণের স্ত্রী পুরুষের অনুপাত সমান নেই। আর এই কারণেই সেখানে হরিণের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। আর এই জন্য কংসাবতী উত্তর বনবিভাগ হরিণের পুরুষ ও স্ত্রীর উপযুক্ত অনুপাতে রাখার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। ওই বিভাগের অন্তর্গত পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত পুরুলিয়া মিনি জু থেকে বেশি সংখ্যায় থাকা পুরুষ হরিণ গড় পঞ্চকোটের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে। তাহলে, একদিকে যেমন ওই জঙ্গলের অনুপাত ঠিক হবে তেমনই মিনি জু -তে থাকা পুরুষ হরিণ কমে অনুপাত ঠিক হবে। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে চিতল হরিণের ক্ষেত্রে জঙ্গলে দশ অনুপাতে এক এবং চিড়িয়াখানায় পাঁচ অনুপাত এক হরিণ রাখতে হবে। জঙ্গলে দশটি স্ত্রী হরিণ থাকলে একটি পুরুষ হরিণ এবং চিড়িয়াখানায় পাঁচটি স্ত্রী হরিণ থাকলে একটি পুরুষ হরিণ থাকতে হবে তাহলেই সঠিকভাবে হরিণের বংশ বৃদ্ধি পাবে। অথচ, পুরুলিয়া মিনি জু-তে মোট ৪২ টি হরিণ রয়েছে। তার মধ্যে পনেরটি পূর্ণ বয়স্ক মাদি, উনিশটি পুরুষ এবং বাকিগুলি হরিণ রয়েছে। সঠিক অনুপাতে না থাকার কারণে সঙ্গিনী দখলের জন্য নিজেদের মধ্যে প্রায়ই লড়াই করে পুরুষ হরিণ গুলি। এতে গুরুতর আঘাতও লাগে তাদের। সম্প্রতি এইভাবে লড়াইয়ের কারণে একটি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী হরিণ মারা যায়। এই ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে মিনি জু কতৃপক্ষের। সঠিক পদক্ষেপ নিতে তৎপর হয় তারা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বন বিভাগকে জানায় তারা। অন্যদিকে, পঞ্চকোটের জঙ্গলে হরিণের সংখ্যা হ্রাস। এই দুই আশু সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে অবশেষে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ সিদ্ধান্ত নেয় যে মিনি জু থেকে এক দল পুরুষ হরিণ তুলে নিয়ে পঞ্চকোটের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই কথা জানিয়ে বিভাগীয় বনাধিকারিক সোমা দাস বলেন প্রস্তাবটি ওয়েস্ট বেঙ্গল জু অথরিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত এলেই সিদ্ধান্ত কার্যকারী করা হবে। সে ক্ষেত্রে পুরুলিয়ার এই মিনি জু-তে হরিণের সংখ্যা কমবে। স্বাচ্ছন্দ বাড়বে এখানে থাকা হরিণদের। আবার আরণ্যক পরিবেশে পঞ্চকোট পাহাড়েও বাড়বে হরিণের সংখ্যা।
পুরুলিয়ার পঞ্চকোট পাহাড়ে ছাড়া হবে পুরুষ হরিণ
শনিবার,২১/০২/২০১৫
1994