Categories: রাজ্য

বিজ্ঞানের যুগে এই রকম গ্রাম আছে !

মহম্মদ আজাহার উদ্দিন, বীরভূমঃ দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে নেই কোনও পানীয় জলের টিউবওয়েল বা কুয়ো। প্রশ্ন জাগতেই পারে সেই গ্রামের মানুষরা কি জল না খেয়ে পার করে দেয় সারাটা দিন ? এদিকে আমরা জানি জল না পান করলে মানুষ বাঁচে না। তাহলে কি করে এই সব মানুষরা পানীয় জলের তেষ্টা মেটান ? অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এরকম গ্রামের কি কোনও অস্তিত্ব আছে ? আসুন আজ আমরা যাব বীরভূমের এমনি এক প্রত্যন্ত গ্রামে সেখানকার মানুষরা পুকুরের জল খেয়ে বেঁচে আছে। খবর নিলাম সেখানকার মানুষদের সাথে কথা বলে। চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তগর্ত একটি গ্রাম আমগাছি। পুরো গ্রামটিতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বাস। চরিচা জঙ্গল বা চোরচো নামে পরিচিত এই জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রাম। সকাল বেলা গ্রামের পুরুষরা মাঠের কাজে চলে যায়, বাড়ি ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। গ্রামে থাকেন শুধু মহিলারা। বাড়ির বিভিন্ন কাজে, পানীয় হিসাবে জলের প্রয়োজন। কিন্তু গ্রামে তো জলের কল নেই। তাই সকাল ১০ থেকে ১১ টার মধ্যে সারা গ্রামের মহিলারা এক জোট হয়ে পাড়ি দেন জলের উৎসের দিকে। প্রায় ২ কিলোমিটার জঙ্গলের মধ্যে হেঁটে যাওয়ার পর দেখা মেলে অপরিষ্কার এক ডোবার। ডোবাটির চারদিকে শালের জঙ্গল, সর্বদায় শালপাতা পড়ছে জলে। সেই জলে কেউ স্নান সেরে নেন কেউ বা বাসন ধুয়ে নেন, আবার কেউ সেই জল কলশিতে করে নিয়ে যায় পানীয় জল হিসাবে। যায় হোক এই সমস্যার কথা বারংবার জানানো হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। প্রশাসন বহুবার টিউবওয়েল বসাতে গিয়েছে গ্রামে কিন্তু সফল পারেনি, কাজ করতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাঁদের। তাহলে তারা পানীয় জল থেকে বঞ্চিত থাকবে চিরকাল। নাকি এর কোনও সুরাহা হবে ? প্রশাসনকে বারংবার জাানোর পর কোনও লাভ না হওয়ার গ্রামের মানুষজন দ্বারস্ত হয়েছেন তাদের অরাজনৈতিক সংগঠন বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতা। তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রাম ঘুরে দেঘেন, কথা বলেন এলাকার মানুষের সঙ্গে। গ্রামের বছর ৪৫ এর এক মহিলা মালতি সরেন জানান, তাঁদের এই সমস্যা আজকের নয়, এর আগে সরকার একবার গ্রামে কল বসাতে এসেছিল, তারপর কোনও রকমের জল বেরলে, তা দিয়েই প্রথম দিকে আমরা ব্যবহার করতে শুরু করি, কয়েকদিন পর দেখি দাঁত লাল হয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত এক ছাত্রী বাহামুনি কিস্কু জানিয়েছে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একা হেঁটে যেতে ভয় পায়, তাই গ্রামের সমস্ত মহিলারা একসঙ্গে জল আনতে যায়। আমাদের গ্রামে যদি একটা জলের ট্যাংকারের ব্যবস্থা কা যায় তাহলে উপকৃত হব। এই বিষয়টা জানানোর জন্য আমরা আজ আমাদের সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছি। সংগঠনের সম্পাদক রবিন সরেন জািয়েছেন আমরা বিষয়টা প্রশাসনিক স্তরে জানাব। বর্তমানে কি করলে গ্রামের মানুষজন পানীয় জল পাবে সে বিষয়ে আলোচনা করে দেখব। ঘটনাটি শোনার পরই মহম্মদ বাজারের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন ওই এলাকার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক, আমরা ওই গ্রামে আগামী সপ্তাহ থেকেই ৩ লক্ষ টাকা ব্যায়ে অও্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে টিউবওয়েল বসানোর কাজ শুরু করব।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

2 days ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

3 days ago

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ আজ, অপেক্ষা ভোটের দিন ঘোষণার

জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…

3 days ago

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে তীব্র ভূমিকম্পে ৫৩ জনের মৃত্যু, আহত ৬২ জন

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আরও ৬২…

3 days ago

রিয়্যালিটি শো’-র প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা থেকে নারী পাচারের চেষ্টা

রিয়্যালিটি শো'-র প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা থেকে নারী পাচারের চেষ্টা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তিনজনের বয়স মাত্র ১৭,…

3 days ago

শহরের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা

সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরব সহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ পাকিস্তানের অন্তত ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন…

3 weeks ago