মহঃ আজাহার উদ্দিন, বীরভূমঃ প্রত্যন্ত জেলার বীরভূম ব্লক -এর মহঃ বাজার। ব্লকের ১২ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশ মানুষজনই আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ভূক্ত। বিগত ১০ বছর আগে এই এলাটিকে উন্নয়ন করার তেমন চিন্তা ভাবনা গ্রহণ করেনি স্থানীয় প্রশাসন বা সরকার কেউই। এরপর শুরু হয়েছিল সেখানকার আদিবাসীদের অধিকারের লড়াই। তৈরী হয়েছিল বীরভূম জেলা আদিবাসী উন্নয়ন ‘ গাঁওতা’। যাদের নেতৃত্বে ছিলেন রবিন সোরেন, সুনিল সোরেন, সুকুমার সাহার মতো সাধারণ পরিবারের মানুষরা। ২৮ শে নভেম্বর ২০১২ সালে এই পিছিয়ে পড়া ব্লককে এগিয়ে নিয়ে যেতে মহঃ বাজার ব্লকের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালেন রানাঘাটের এক সাধারণ পরিবারের সন্তান সুমন বিশ্বাস। তিনি মহঃ বাজারের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক হিসেবে যোগদান করলেন। উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি শুরু করলেন সামাজিক কর্তব্য, সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলা, এমনকি স্থানিয় যুবকদের ঠ॰ আ॰ ই॰ জ॰ পরীক্ষার ট্রেনিং দেওয়া। এই সব কর্মকাণ্ডের তিনি বাধার সম্মুখিন হয়েছেন বারংবার, শেষ পর্যন্ত কোনো বাধায় তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মহঃ বাজার ব্লকে বিগত ২ বছরে ৩৭ টি রক্তদান শিবির হয়েছে যার মূখ্য ভূমিকায় ছিলেন মহঃ বাজারের বি॰ ডি॰ ও সুমন বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন যে কলেজ জীবন থেকেই তিনি সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
স্থানীয় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ আমির হোসেন জানিয়েছেন তিনি আমাদের কাছে দেবতুল্য, আমাদের মতো মানুষের আপদে- বিপদে সবসময় তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। চিনি মুরমু নামে এক সাঁওতাল যুবক জানিয়েছেন সুমুন বাবুর কাছে যখনই শিতের সময় কম্বল, বর্ষার সময় ত্রিপল, জামাকাপড় এমনকি টাকার জন্যও গিয়েছি তিনি কোনো দিন খালি হাতে আমাদের ফেরাননি, আমাদের কাছে এর থেকে বড় পাওনা আর কি হতে পারে ? তিনি যে শুধু সামাজিক কাজকর্ম করেছেন তা নয় সংস্কৃতির প্রতি তিনি প্রচন্ড আগ্রহী ছিলেন বিশেষ করে সাঁওতালী নাচ তাকে কাছে ডাকত বারংবার। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাদল বাজিয়েছেন। সারাদিন ওই সব মানুষজনদের সঙ্গে তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন উৎসবের মেজাজে। সারাটা দিন অফিসের কাজকর্ম মিটিয়ে দেওয়ার পর শুরু হয় স্থানীয় ছেলে এবং অফিসের কর্মচারীদের নিয়ে খেলাধুলা, রাত ৮ টা অবধি চলে খেলাধুলা। বাদ জায় না ঝাঁড়ুদার থেকে গাড়ীর ড্রাইভার কেউই। সবার কাছে তখন তিনি আর সুমন বাবু বা স্যার নয় তখন তিনি ‘ সুমন দা’ । ছুটির দিন গুলো বাড়িতে একা বসে কি করবেন, তার চেয়ে স্থানীয় সদ্য বিয়ে পাশ করা ছেলেদের নিয়ে তিনি শুরু করে দেন কোচিং ক্লাস। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই যে কেউ এই কোচিং সেন্টারে আসতে পারে। সকলকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন সু- স্বাগতম। তার মোবাইল নং এলাকার ৮০% মানুষের কাছে ছড়িয়ে আছে। যাই হোক সারাটা দিন ঘুরে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে তাঁর এই কর্মকাণ্ডের যেমন খুশি এলাকার মানুষ তেমনই খুশি তিনি নিজে।
সাবাশ সুমন বিশ্বাস
বৃহস্পতিবার,০৫/০২/২০১৫
939