December 30, 2014
জগন্নাথ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘জগতের নাথ বা প্রভু’। ইনি ভগবান বিষ্ণুর এক অবতার।ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মন্দির ওড়িশার পুরী শহরে অবস্থিত। জগন্নাথ পুরী নামে সমধিক পরিচিত এই শহরে প্রতি বছর বিখ্যাত রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়। পুরীর জগন্নাথ মন্দির চারধাম অর্থাৎ ভারতের চারটি পবিত্রতম তীর্থক্ষেত্রের অন্যতম।তবে ভারতের অনেক অঞ্চলেই জগন্নাথ মন্দিরের অস্তিত্ব আছে।পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, মাহেশ, মহিষাদল প্রভৃতি অঞ্চলে একাধিক জগন্নাথ মন্দিরের দেখা মেলে।
জগন্নাথদেবকে কেন্দ্র করে একটি জনপ্রিয় পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত আছে। এই কাহিনি অনুসারে, কৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তাঁর মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। তখন এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তাঁর কাজে বাধা না দেন। বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু হয় কাজ। রাজা ও রানি সহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন তাঁরা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং শুনতে পেতেন ভিতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। ৬-৭ দিন বাদে যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রানি কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন।তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ।জগন্নাথ-আরাধনার ইতিবৃত্ত এতই প্রাচীন যে এর কোনো ঐতিহাসিক রেকর্ড পাওয়া সম্ভব নয়। জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কলিঙ্গ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটি শ্রীমন্দির নামে সমধিক পরিচিত। গর্ভগৃহের মাথায় রয়েছে একটি সুউচ্চ শিখর বা চূড়া। প্রদীপ উৎসর্গের জন্য রয়েছে ফসিল হয়ে যাওয়া কাঠের একটি স্তম্ভ। মন্দিরের প্রধান দ্বার সিংহদ্বারের রক্ষক দেবতা জয়া ও বিজয়া। মূল প্রবেশপথের সামনে রয়েছে অরুণস্তম্ভ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। খুরদার রাজা কোনার্কের সূর্যমন্দির থেকে এটি নিয়ে আসেন।তিন দেবতাকে সাধারণত মন্দিরের অভ্যন্তরেই পূজা করা হয়। তবে প্রতি বছর আষাঢ় মাসে তাঁদের রাজপথে বের করে রথারূহ করে তিন কিলোমিটার দূরে মৌসিমা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় ভক্তরা দেবতাকে গণদর্শনের সুযোগ পান। রথযাত্রার সময় সারা পৃথিবী থেকে এখানে ভক্ত সমাগম হয়।এছাড়াও প্রায় সারা বছরই দেশ বিদেশের বহু পর্যটক পুরী বেড়াতে এসে জগন্নাথ ধাম ঘুরে যান।ভারতের যেকোন জায়গা থেকেই রেলপথে পুরী যাওয়া খুবই সহজ।