পুরনো পরিকল্পনা শিকেয়, দিঘায় এ বার নাকি টয় ট্রেন


সোমবার,২২/১২/২০১৪
1062

কাঁথি:মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই রাজ্যের সমুদ্র সৈকত দিঘাকে গোয়া বানানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যটকদের বিনোদনে একগুচ্ছ আধুনিক পরিকল্পনার কথাও শোনানো হয়েছিল। তার অধিকাংশই এখনও পরিকল্পনা স্তরে রয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে দিঘায় টয় ট্রেন চালানোর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গেল।

শনিবার দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে দিঘায় টয় ট্রেন চালানোর বিষয়টি আলোচনা করা হয়। পর্ষদের চেয়ারম্যান ও কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী বলেন, “আধুনিক সৈকত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দিঘাকে সাজিয়ে তোলার পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে দিঘায় টয় ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” স্থির হয়েছে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অর্থাৎ পিপিপি মডেলে নিউ দিঘার চড়ুইভাতি কমপ্লেক্স থেকে উদয়পুর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তায় টয় ট্রেন চলবে। প্রকল্পের জন্য অনুমোদনের জন্য পর্ষদের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

যে দিঘায় পর্যটকদের মনোরঞ্জনে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা সরকারি ভাবে ঘোষণার পরও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, সেখানেই টয় ট্রেন চালানো আদৌ সম্ভব হবে কি না সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য তথা সিপিএমের রামনগর জোনাল কমিটির সম্পাদক আশিস প্রামাণিকের মতে, “দিঘার কাজলাদিঘিতে এখন বেসরকারি উদ্যোগে একটি টয় ট্রেন চলছে। সেটির হাল না ফিরিয়ে নতুন করে টয় ট্রেন চালুর ভাবনা প্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।”

২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে দিঘায় ‘সমুদ্র উৎসবে’র মঞ্চ থেকে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, ভোল বদল করে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরা হবে দিঘাকে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে প্যারাসেইলিং, জেট-স্কি, স্পিড-বোট, বিচ-বাইক চালুও করেছিল যুব কল্যাণ দফতর। কিন্তু সমুদ্র উৎসবের পরেই হাত গুটিয়ে নেয় ওই বেসরকারি সংস্থা। ২০১৩ সালের গোড়ায় আবার দিঘায় মোটরচালিত ‘প্যারাগ্লাইডিং’-এর উদ্বোধন করেছিল রাজ্য পর্যটন দফতর। উদ্বোধনের দিন প্যারাগ্লাইডারে সওয়ার হয়েছিলেন তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তবে সেটা ছিল ট্রায়াল। পরে আইনি জটিলতায় আটকে গিয়েছে সেই প্রকল্প। 

দিঘায় এখন শুধু বেসরকারি উদ্যোগে বিচ বাইক আর স্পিড বোটের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তা নিয়মিত নয় এবং অনুমতি ছাড়াই চলে। বেসরকারি উদ্যোগে অনিয়মিতভাবে প্যারাসেইলিং (গাড়িতে প্যারাসুট বেঁধে ভ্রমণ)-ও হয়। ফলে বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। কিছুদিন আগে দিঘার ক্ষণিকাঘাটে স্পিড বোটের ধাক্কায় জখমও হন এক পর্যটক। দিঘায় পর্যটন দফতরের চারটি স্পিড বোট আছে বটে, কিন্তু তা ব্যবহৃত হয় উদ্ধার কাজে।

দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ ২০১২ সালে দিঘার অমরাবতী পার্কে রোপওয়ে চালুর পরিকল্পনা করেছিল। তার টেন্ডার হলেও চালু হয়নি। এর পরও অবশ্য টয় ট্রেন চালানো নিয়ে আশাবাদী পর্ষদের চেয়ারম্যান ও কাঁথির সাংসদ শিশিরবাবু। তিনি বলেন, “দিঘাকে ত্রিফলা আলোয় সাজানো থেকে প্রবেশ তোরণ তৈরি, অনেক কাজই আমরা করেছি। আগামী বছর রোপওয়ে চালু হয়ে যাবে। তারপর টয় ট্রেনও চলবে।”

রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসুরও দাবি, গত তিন বছরে দিঘা অনেকটাই বদলেছে। মন্ত্রীর কথায়, “সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, দিঘাকে ঘিরে দৃষ্টিভঙ্গী বদলানো। সেটা হয়েছে। দিঘায় এখন জেট-স্কি হচ্ছে, স্পিড বোট চলছে। সেটা বেসরকারি উদ্যোগে হলেই বা অসুবিধা কোথায়? সরকারের সঙ্গে এর তো কোনও বিরোধ নেই।”

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত বেশিরভাগ পরিকল্পনাই তো রূপায়িত হয়নি? এ বার নিরুত্তর পর্যটনমন্ত্রী।

 

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট